অনেক দিন পর সতেজ বাতাসে প্রাণ জুড়িয়ে গেল। বুক ভরে টাটকা নিঃশ্বাস নিতে পারছি। এখন আমি মুক্ত আকাশে বলাকা বেশে স্বাধীনভাবে ভেসে বেড়াচ্ছি। কখনো চাঁদ-তারা কখনো বা উজ্জ্বল সূর্যের সঙ্গে মিতালি করছি। আমার এখন দারুণ সময়। আহা, কী যে আনন্দ। এত খুশি রাখি কোথায়...।
এভাবেই নিজের সুখের কথা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলে বলে চলেন রুপালি পর্দার চপলা হরিণী মাহী। কেন এত সুখ? প্রশ্ন করতেই মাহীর তাৎক্ষণিক জবাব- নয় কেন বলুন, বন্দী জীবন কার ভালো লাগে। বন্দী জীবন মানে? মাহির এবারের উত্তরটা আরও সহজ সরল। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখতাম রুপালি তারার একজন হব। আমার বেডরুমে শোভা ছড়াবে 'নায়িকা মাহী'র বিশাল ছবি। অটোগ্রাফের জন্য একঝাঁক হাত বাড়ানো থাকবে আমার দিকে। এমন আরও কত কি। আমি জানি স্বপ্ন পূরণের জন্য প্লাটফর্ম দরকার। সেই প্লাটফর্মে গিয়ে দাঁড়িয়েছি। প্রতিষ্ঠাও পেয়েছি। কৃতজ্ঞতা জানাতেও ভুল করিনি। নীল আকাশের পুরোটাই আমার সুখের নীড়। সেখানে আমি স্বাধীনভাবে উড়তে চাই। সোনালি রুপালি স্বপ্নের দরজায় কড়া নাড়তে চাই।
মাঝে কেন জানি মনে হয়েছে খোলা আকাশ আর দেখা হবে না আমার। অজানা এক হতাশা আমার টুঁটি চেপে ধরে। অভিমানে দেশ ছেড়েছিলাম। রুপালি জগৎ ছাড়ার ঘোষণাও দিয়েছিলাম।
একসময় ভাবলাম সেলুলয়েডের পথ ধরে আমার হাঁটার পথ দীর্ঘ। সেই পথে আমি আরও হাঁটতে চাই। সাহস আর শক্তি আমাকে আমন্ত্রণ জানাল। আমার চিন্তার যুক্তির পক্ষে তারা রায় দিল। হতাশার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে এলাম। স্বপ্নের ঘাটে চাঁদের নাও ভিড়ানো দেখলাম। চড়ে বসলাম আর এগিয়ে চললাম।
এখন আমি ফুরফুরে বাতাসে নবজন্মের স্বাদ নিচ্ছি আর তির তির করে বেড়ে উঠছি। আমার কথা হলো- আগের চেয়ে এখনকার মাহী আরও সমৃদ্ধ আরও বেশি শক্তিশালী। কোনো ভয় আমার চলার পথে আর অন্ধকার ছড়াতে পারবে না। অপপ্রচারের মুখে কালির দাগই থাকে। সবাই তা দেখছে আর আমাকে ভালোবাসার রথে এগিয়ে নিচ্ছে। আমার চলার পথকে মসৃণ করে দিচ্ছে। সাবলীলভাবে হেঁটে যাচ্ছি।
হেঁটে যাব সুন্দর আগামীর পথে। সফলতার রঙে রাঙিয়ে দেব ভালোবাসার ভুবন...।
মাহীর চলচ্চিত্রে অভিষেক ২০১১ সালে। ছবির নাম 'ভালোবাসার রঙ'। প্রথম ছবিতেই দর্শকের মনে ভালোবাসার রঙ ছড়ান তিনি। আকাশছোঁয়া জনপ্রিয়তা নিয়ে তার এগিয়ে যাওয়া কখনো থামেনি।
ঢালিউডে শিল্পী সংকট যখন চরমে, যখন অনেক নতুন মুখ এসেই ঝরে পড়ছে তখনই শক্ত হাতে দেশীয় চলচ্চিত্রের হাল ধরেন মাহী। নির্মাতারাও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন। তবে নির্দিষ্ট প্রযোজনা সংস্থার হয়ে কাজ করায় অন্য নির্মাতারা চাইলেই পায়নি মাহীকে।
মাহীও নিজেকে সর্বত্র মেলে ধরতে পারেননি। প্রায় ৫ বছরে একডজনের মতো জনপ্রিয় ছবি উপহার দিয়েছেন এ অভিনেত্রী। চলতি বছরের শুরুতেই মুক্তি পায় তার অভিনীত কলকাতার সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার ছবি 'রোমিও বনাম জুলিয়েট'। মাহির নিজেরও প্রযোজনায় আসার কথা আছে। এখন সেই প্রস্তুতি চলছে তার। গত বছরের শেষদিকে কোনো এক অপ্রকাশিত অভিমানে চলচ্চিত্র ছেড়ে প্রবাসী হওয়ার ঘোষণা দেন মাহী। পরে অবশ্য সেই সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসেন। নতুন প্রত্যয়ে আবার কাজ শুরু করেন। সম্প্রতি এই অভিনেত্রী জানান সব প্রযোজনা প্রতিষ্ঠানের ছবিতে কাজ করবেন তিনি। প্রথমেই কলকাতার নায়ক দেবের সঙ্গে যৌথ প্রযোজনার একটি ছবিতে কাজ করার রয়েছে তার। ছবিটির বিষয়ে আদ্যোপান্ত চূড়ান্ত করতে এরই মধ্যে ওপার বাংলায় গিয়ে দেবের সঙ্গে আলাপচারিতা সেরে এসেছেন তিনি।
চলতি বছরেই দেবের সঙ্গে জুটি হয়ে ক্যামেরার সামনে দাঁড়ানোর ইঙ্গিতও দিয়েছেন।
এ ছাড়া আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের ছবিতে কাজের কথা চলছে। এখন স্ক্রিপ্ট পড়া হচ্ছে। ব্যাটে-বলে মিললেই নির্মাতাদের 'হ্যাঁ' বলবেন তিনি। তার কথায় যতদিন দর্শক চাইবেন ততদিন বড় পর্দায় আলো ছড়াব আমি। মাহী জানান, বেশিরভাগ ছবিতে বাপ্পির সঙ্গে জুটি বাঁধলেও শীর্ষনায়ক শাকিব খানের সঙ্গে 'ভালোবাসা আজকাল' ছবিতে কাজ করে অন্যরকম মজা পেয়েছেন তিনি। তার প্রথম ছবির নায়ক বাপ্পি।
রোমান্টিক, কমেডি আর অ্যাকশন। সব ধরনের গল্পের ছবিতে কাজ করে তুখোড় অভিনেত্রীর তকমা আপন ক্যারিয়ারে এঁটে নিয়েছেন বুদ্ধিমতী মাহী।