এবারের 'কৃষকের ঈদ আনন্দ'র বিষয়বস্তু আম কেন?
আমরা হয়তো জানি, এবারই প্রথম আমরা দেশের বাইরে আম রপ্তানি করেছি। তিন বছর আগেও আমরা যে পরিমাণ আম উৎপাদন করতাম তার পরও বিদেশ থেকে আম আমদানি করতে হতো। কিন্তু গত এক-দেড় বছরে এ অবস্থার পরিবর্তন ঘটেছে। চলতি বছর তো আমরা প্রথমবারের মতো আজ ইউরোপে রপ্তানি করেছি। মূলত এই আনন্দের বিষয়টিকে দেশ-বিদেশে তুলে ধরার জন্যই এবার আমরা চলে গিয়েছি পবার কৃষক ভাইদের কাছে।
গত কয়েক বছর ধরে ফরমালিনের ভয়ে মানুষ তো আম খাওয়া প্রায় ছেড়েই দিয়েছিল। এ বিষয়ে কোনো কিছু থাকছে এবার?
আমের ফরমালিন নিয়ে অনেকের মধ্যে অনেক ভুল ধারণা আছে। যেমন, আমে যে ফরমালিন দেওয়া হয় এটা সত্যি নয়। একটা নির্দিষ্ট মাত্রায় কিন্তু ফরমালিন সব ফলেই থাকে। প্রাকৃতিকভাবে আমে ১.৩ শতাংশ এটা থাকবে। আর এই উপস্থিতির কথা বলে গত বছর বুলডোজারের মাধ্যমে কৃষকের সব আম নষ্ট করে ফেলা হয়েছিল। এতে করে ক্ষতি হলো কৃষকের। এটা কীভাবে সম্ভব! তাই এবারের অনুষ্ঠানে খেলার মধ্যে কিছু প্রতিবেদন উপস্থাপন করার চেষ্টা করেছি। চলতি বছর সরকার একটা তারিখ নির্দিষ্ট করে দিয়েছিল। ৫ জুনের আগে কেউ আম পাড়তে পারবে না। এতে একটা জিনিস নিশ্চিত হয়েছে, আমের ফলন ও সবাই ভালো আম পেয়েছে। কিন্তু এলাকা ও আমের জাতের কারণে কিছু আম পেকে পচে গেছে। এ উদ্যোগটি একটু সংশোধন করা উচিত। আমি মনে করি আম পাড়ার জন্য একটি ক্যালেন্ডার তৈরি করা প্রয়োজন। যাতে করে একাধিক তারিখ বেঁধে দেওয়া হয়।
এবারের অনুষ্ঠানে আর কি কি থাকছে?
আম নিয়ে মজার কিছু তথ্যও থাকবে এবারের আয়োজনে। যেমন আমের ইতিহাস ও ঐতিহ্য তুলে ধরা হবে। আম নিয়ে সম্রাট আকবরেরও কিছু তথ্য থাকবে। এছাড়া সবগুলো খেলাও প্রায় আমকেন্দ্রিক। আম পেড়ে সাঁকো পার, আম খাওয়া, ঝুড়িতে আম নিক্ষেপ, ঝিনুক দিয়ে আমের খোসা ছাড়ানো, বউ সাজানো, বাচ্চাদের আম দৌড়, তৈলাক্ত কলাগাছ বেয়ে ওঠা ও বালিশ লড়াই ইত্যাদি।
কলাগাছে উঠার খেলাটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য কী?
ছোটবেলায় কিন্তু আমরা এমন একটি অঙ্ক করেছিলাম। 'তেল মাখানো একটি বাঁশে বানর এত মিনিটে এতখানি উঠল, এতখানি নামল।' অনেকটা ওইখান থেকেই খেলাটা আমার আবিষ্কার করা। গ্রাম-বাংলার মানুষের শক্তি ও মেধা বা কর্মশক্তি এত বেশি তা আমরা কল্পনা করতে পারি না। এ খেলাতে যা টের পাওয়া যায়। খেলার জন্য অনেক খুঁজে কলাগাছ আনতে হয়। ২০০৬ সাল থেকে যতগুলো কলাগাছের প্রতিযোগিতা হয়েছে তা কোলাজ করে দেখানো হবে এবারের আসরে। আর পুরস্কার হিসেবে থাকছে মোটরসাইকেল।
আপনি সব সময় কৃষকদের নিয়ে অনুষ্ঠান করেন। অন্য পেশার লোকজনকে নিয়ে কিছু করেন না কেন?
বিশ বছর আগে থেকে যদি টিভি অনুষ্ঠানগুলো লক্ষ্য করেন তবে দেখবেন, ঈদের অনুষ্ঠান কিংবা অন্য অনুষ্ঠানগুলো সাজানো হয় শহরের মানুষদের জন্য। কৃষকদের নিয়ে কখনোই বিনোদনধর্মী কোনো অনুষ্ঠান প্রচার হয়নি। কৃষকদের নিয়ে কেউ বিশেষ কোনো অনুষ্ঠান করে না বলেই আমি এ ধরনের অনুষ্ঠান করার উদ্যোগ নিয়েছি। তাছাড়া প্রায় সব পেশার মানুষকে টিভি অনুষ্ঠানে ডাকা হয় কিংবা দেখানো হয়। শুধু কৃষকদেরই সবাই অবহেলা করে। তাই আমি কৃষকদের নিয়েই আছি, থাকতে চাই বাকি জীবন।
ঈদ উপলক্ষে আপনি 'উত্তম গান' শিরোনামের একটি ব্যতিক্রমী সংগীতানুষ্ঠান নির্মাণ করছেন। সে সম্পর্কে জানতে চাইছি।
মহানায়ক উত্তম কুমারের লিপে ব্যবহৃত কিছু জনপ্রিয় গান নিয়ে সম্পূর্ণ ব্যতিক্রমী এ আয়োজন। এর মূল পরিকল্পনা হচ্ছে ফরিদুর রেজা সাগরের। তিনি এ অনুষ্ঠানের জন্য কলকাতা থেকে উত্তম কুমারের নায়িকা সুপ্রিয়া দেবীকে আনার ব্যবস্থা করেন। অনুষ্ঠানের প্রারম্ভে আমি সঞ্চালকের ভূমিকায় থাকলেও পুরো অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করেন সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হক। তিনি সুপ্রিয়া দেবীর সঙ্গে নানা বিষয়ে বৈঠকী আড্ডায় মেতে উঠেছিলেন। আড্ডার ফাঁকে ফাঁকে উত্তম কুমারের সিনেমার গানগুলো পরিবেশন করেন আমাদের দেশের তারকা কণ্ঠশিল্পীরা।
যে স্বপ্নের শুরু সত্তর-আশির দশকে তা বাস্তবে রূপ পেয়েছে?
যে লক্ষ্য নিয়ে এ অনুুষ্ঠানটি শুরু করেছিলাম তা অনেকটাই এখন পরিপক্ব। কৃষকরা নানান ধরনের চাষ করেন। তারা বেশ সচেতন। দেশীয় পদ্ধতির সঙ্গে অনেক কিছু যুক্ত হয়েছে। 'হৃদয়ে মাটি ও মানুষ'র মাধ্যমে কৃষির উন্নয়ন হয়েছে। কিন্তু কৃষকের জীবনমানের উন্নয়ন এখনো হয়নি।
এখনো কৃষক তার ন্যায্যমূল্য পায় না। কৃষকের নানা রিস্ক ফ্যাক্টর থাকে। বীজ, বপন, সার বা সবকিছুর পর হঠাৎ ঝড়ে সব শেষ হয়ে যেতে পারে। এ ধরনের অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যেও কৃষক তার কাজ চালিয়ে যান। কিন্তু সঠিক মূল্য না পাওয়া বা মধ্যস্বত্বভোগীদের কারণে তারা বরাবরই বঞ্চিত হয়ে আসছে। তাই কৃষির উন্নয়ন হলেও কৃষকের জীবনমানের উন্নয়ন সেভাবে ঘটেনি।
- আলী আফতাব