আপনার চোখে চলচ্চিত্রের বর্তমান অবস্থা কেমন?
খুব একটা ভালো বলা যাবে না। বাস্তব বিশ্লেষণে সুখকর বা সুন্দর কিছুই হচ্ছে না। যৌথ প্রযোজনার নামে ভারতীয় ছবিই চলছে। এতে স্বকীয়তা নষ্ট হচ্ছে। দর্শকও দূরে সরে যাচ্ছে। সিনেমা হল বন্ধ রোধ হচ্ছে না। এভাবে চলতে থাকলে 'আমাদের চলচ্চিত্র জগৎ' নামে কিছুই আর থাকবে না।
পরিত্রাণের পথ কি আছে?
অবশ্যই আছে। সর্বক্ষেত্রে সহযোগিতা দরকার। বিশেষ করে সরকারকে এগিয়ে আসতে হবে। দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থেকে বলছি, সরকার হলো সবার অভিভাবক। অভিভাবক যদি সঠিক যত্ন নেয় তাহলে সন্তানের বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে কোনো অন্তরায় থাকতে পারে না। চলচ্চিত্র হচ্ছে প্রধান বিনোদন ও গণমাধ্যম। এর অভাবে মানুষের মধ্যে হতাশা ও অপরাধ প্রবণতা বাড়ে। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষের বিনোদনের অন্যতম উপকরণ হলো সিনেমা। এখন ভালো সিনেমার অভাবে দর্শক কিন্তু হতাশ হচ্ছে এবং নিত্যনতুন অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। মানুষ হিসেবে আমাদের যেমন সামাজিক দায়িত্ব আছে, ঠিক তেমনি রাষ্ট্রেরও করণীয় আছে। সবাই মিলে যদি চলচ্চিত্রকে বাঁচাতে প্রকৃত অর্থে উদ্যোগী হই তাহলে পরিত্রাণ হাতের মুঠোয় আসতে বাধ্য।
সরকারি অনুদান নিয়ে চলচ্চিত্রকারদের ক্ষোভের কারণ?
সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলব, অনুদান কমিটিতে উপযুক্ত লোক দরকার। না হলে অর্থের অপচয় রোধ সম্ভব নয়। নিরপেক্ষভাবে বিচার বিশ্লেষণ করে অনুদান দিতে হবে। যারা চলচ্চিত্র বোঝেন তাদের নিয়ে স্বচ্ছ, সুন্দর পক্ষপাতহীন একটি কমিটি গঠন সরকারের কাছে আশা করব।
ইনস্টিটিউট, এফডিসি আর সিনেমা হলের বর্তমান অবস্থা কী মনে করছেন?
চলচ্চিত্রের বিকাশে চলচ্চিত্র ইনস্টিটিউটের বিকল্প নেই। না হলে দক্ষতা ও সুপ্ত প্রতিভার বিকাশ সম্ভব নয়। এই প্রতিষ্ঠানের সার্টিফিকেট হতে হবে আন্তর্জাতিকমানের। চলচ্চিত্রের প্রতি প্রধানমন্ত্রীর ভালোবাসা ও আন্তরিকতা প্রশ্নাতীত। তার আশপাশে যারা আছেন তারা চলচ্চিত্রের উন্নয়নে অনেক বিষয়ই তার কাছে যথাযথভাবে তুলে ধরেন না। ফলে সমস্যার সমাধান তিমিরেই রয়ে যায়। সিনেমা হল ভেঙে অন্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়া হচ্ছে। সরকার যদি সেখানে একটি সিনেপ্লেক্স নির্মাণ বাধ্যতামূলক করে দেয় তাহলে সিনেমা হলের বিলুপ্তি ঠেকানো সম্ভব। এফডিসিতে আমাদের সময় শুটিং করার জন্য জায়গা খুঁজে পাওয়া যেত না। আর এখন সেখানে পশুপাখি ঘুরে বেড়ায়। চলচ্চিত্রের কাজ বলতে তেমন কিছু নেই। টিভি নাটক, বিজ্ঞাপনের কাজই বেশি হয়। অথচ এই প্রতিষ্ঠান থেকে সরকার এক সময় বড় অঙ্কের রাজস্ব পেত। এখনো সম্ভব, এর জন্য সুদৃষ্টি প্রয়োজন। চলচ্চিত্র সম্পর্কে যথাযথ জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তিকে সংস্থার এমডি করতে হবে।
প্রকৃত গল্প, নির্মাতা আর শিল্পী-কলাকুশলীরও তো অভাব রয়েছে।
তা তো রয়েছেই। প্রথমে ভালো কাহিনী দরকার। তারপর কলাকুশলী ও শিল্পী। সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে নির্মাণ করতে হবে। এক্ষেত্রে নির্মাতার দক্ষতার প্রয়োজন আছে। তিনিই শিল্পী তৈরি করবেন। শিল্পী হচ্ছে কাদামাটির মতো। তাকে যে রূপ দেওয়া হবে সেভাবেই সে গড়ে উঠবে। আর প্রযোজককে শুধু অর্থলগি্নকারক হলে চলবে না। চলচ্চিত্রের টোটাল বিষয়টি তার উপলব্ধিতে থাকতে হবে। এসব ক্ষেত্রে বিশাল একটি গ্যাপ রয়ে গেছে বলেই আজ আমরা মনের মতো সুন্দর চলচ্চিত্র পাই না।
আলাউদ্দীন মাজিদ