শাড়ী, চুড়ি, গয়না-গাটি নয়, পহেলা বৈশাখে সরকারের কাছে নিরাপত্তা চাইলেন মিস আর্থ ইন্টারন্যাশনাল খেতাবপ্রাপ্ত বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত তরুণী মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি। নিজের জন্য নয়, নিরাপত্তা চেয়েছেন বাংলাদেশের সকল মানুষের জন্য। সকল নারীর জন্য। শুক্রবার সকালে এক ফেসবুক পোস্টে প্রিয়তি আরও জানান, এখনও গত পহেলা বৈশাকে নারীর শ্লীলতাহানির ঘটনা বিদেশিরা তাকে মনে করিয়ে লজ্জ্বা দেয়। প্রিয়তির ফেসবুক পোস্টটি পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো-
এপ্রিল মাস আসতেই মনটা আবার পড়ে আছে বাংলাদেশে। গত বছরের এই দিনে আমি দেশে গিয়েছিলাম অনেক বছর পর পহেলা বৈশাখ পালন করতে। যদিও গত বছর পহেলা বৈশাখে অনেক ধরনের অবাঞ্চিত ঘটনা ঘটেছে যা বাঙ্গালির এই রকম এতো বড় উৎসবে কল্পনাও করা যায় না, যা কিনা খুব দুঃখের। গত বছর এপ্রিল থেকে এই বছরের গত সপ্তাহ পর্যন্ত অনেকখানি ভুলেও গিয়েছিলাম গত বৈশাখে হয়ে যাওয়া দুর্ঘটনাগুলো। গত সপ্তাহে এক বিদেশি মনে করিয়ে দিল আবার। কিছুটা কাঁটা ঘায়ে লবণের ছিটার মতো।
আমাদের নিজেদের পরিবারে অনেক ধরনের অবাঞ্চিত ঘটনা ঘটে যা আমরা পরিবারের স্বার্থে, পরিবারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে ভেবে বাইরের মানুষদের বলি না বা জানতে দেই না বা শেয়ার করি না, নিজের ফ্যামিলি ছোট হবে বলে, আমরা ছোট হবো বলে। ঠিক সেইভাবেই নিজের দেশের নেগেটিভ কোন কথা বা ঘটনা অন্য কোন দেশের মানুষের কাছ থেকে শুনতে কষ্ট লাগে। কথাগুলো বলছি, এইবার পহেলা বৈশাখের জন্য শুট করতে গিয়ে। এক বিদেশির আলিশান বাসায় শুটের এরেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে।
ঢুকতেই ওই ভদ্রলোক আমার সাদা আর লালের মিশ্রণে শাড়ি পড়া আর সাজগোজ দেখে খুব মুগ্ধ দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন। বিদেশিরা কারো প্রশংসা করতে কার্পণ্য করেন না। অনেক সুন্দর সুন্দর মন্তব্য করলেন শাড়ির, আমার আর কালচারের। তারপর কৌতূহলবশত জিজ্ঞেস করলেন, এই শুটের বিশেষত্ব কি, কেন করছি, কেন সাদা আর লালের কম্বিনেশন ?? আমি বললাম, আমাদের ( বাঙ্গালিদের ) নববর্ষ ১৪ই এপ্রিল। বাংলাদেশে অনেক ধুমধাম করে পালন করা হয়। কথাটা শেষ করার আগে আগেই তিনি বলে বসলেন, ''ওহ ইয়েস ইয়েস, আমি জানি তোমরা কর। গত বছরই তো তোমাদের এই জাতীয় উৎসবে অনেক মেয়েদেরকে এবিউজ করা হয়েছে, তাদের ফ্যামিলি মেম্বারদের সামনে, পুলিশ হেল্প করার জন্য ছিল না, যেই কয়েকজন ছিল তাঁরা অনেকেই দূর থেকে তাকিয়ে দেখেছে, যা খুব দুঃখজনক। এর আগেও এক বার বম্বিং হয়েছে, যেখানে মানুষ আহত আর নিহতও হয়েছে ।''
কথাগুলো হয়তো এই ভদ্রলোক এমনি এমনি কথার ডিসকাসনের মধ্যে বলেছে কিন্তু তার প্রতিটা শব্দ আমার হৃদয়ে একটা একটা ছেদ করে গিয়েছে, যা আমি লেখায় বুঝাতে পারবো না। সেই দিনের জন্য আমার মুডটা আর চেঞ্জ করতে পারিনি।
যাই হোক, এইবার পহেলা বৈশাখে আশা করছি রাষ্ট্র কিছু শক্ত পদক্ষেপ নেবে। কেননা এটি বাংলাদেশের একটি বৃহত্তম উৎসব। সর্বত্র পালন করা হয়। যে যেখানে থাকে সেইখান থেকে পালন করে। প্রতিটা শ্রেণির লোকজন পালন করছে, সবাই সারাদিন রাস্তায় বের হয়ে আনন্দ উপভোগ করে। রাষ্ট্রের উচিত-
. বিপুল পরিমানের জায়গায় জায়গায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য রাখা (যেমন রাখে হরতাল বা কোন ধরনের ডিসপিউট এর সময় ) ।
• যেখানে বেশি ভিড় হয় যেমন- রমনার বটমূল , টি এস সি , পার্ক ইত্যাদি জায়গায় স্ট্যান্ড বাই এম্বুলেন্স আর ফায়ার সার্ভিস অ্যাক্টিভ রাখা উচিত ।
• মোবাইল টয়লেট রাখা উচিত ( প্রয়োজনে ৫/১০ টাকা চার্জ করতে পারে), কেননা মহিলা আর বাচ্চাদের খুবই সমস্যা হয়।
• বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করা উচিত ।
• ময়লা ফেলার জন্য ঘন ঘন বিন থাকা উচিত যাতে মানুষ তাদের ময়লা হাতের কাছের বিনেই ফেলতে পারে, এটা সিটি ক্লিন থাকতে সাহায্য করবে।
আমি জানি এই কথাগুলো কারো (সংশ্লিষ্ট করতিপক্ষ ) কান পর্যন্ত পৌঁছবে না, আর পৌঁছলেও কারো কিছু আসবে যাবে না । কিন্তু রাষ্ট্রের উচিত এই দিকটায় একটু চোখ দেওয়া, কারন এই উৎসবে রাষ্ট্র অনেক রাজস্ব আয় করছে, কেননা গরীব- ধনী সব শ্রেণির মানুষ কিন্তু এই উৎসবে শপিং করে থাকে।
আমার বগ বগ আজকের মতো এই খানেই শেষ করছি। আপনারা সবাই আসন্ন পহেলা বৈশাখ নিরাপদে পালন করবেন তাই প্রত্যাশা করছি। সবাই সংঘবদ্ধ হয়ে বের হলে নানা ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো অনেকটা সম্ভব।
সবাই ভালো থাকুন, নিরাপদে থাকুন আর পোস্টটি পড়ার জন্য ধন্যবাদ !
বি.দ. লেখাটি প্রিয়তির একান্ত নিজস্ব। তবু পত্রিকার নিয়মানুযায়ী যৎসামান্য সম্পাদনা করা হয়েছে।
বিডি-প্রতিদিন/০৮ এপ্রিল ২০১৬/ এস আহমেদ