দু’জনকেই গোটা পৃথিবী এক ডাকে চেনে। একজন এই শতাব্দীর অন্যতম সেরা সরোদিয়া। অন্যজন বলিউডের মহাতারকা। এরা হলেন উস্তাদ আমজাদ আলি খান এবং শাহরুখ খান। দু’জনকেই একই দিনে অপদস্থ হতে হল পশ্চিমা দুনিয়ার হাতে।
লন্ডনে অনুষ্ঠান করতে যাওয়ার জন্য ভিসার আবেদন করেছিলেন আমজাদ। তার আবেদন নামঞ্জুর হয়ে ফিরে এসেছে। আর শাহরুখকে লস অ্যাঞ্জেলেসের বিমানবন্দরে বেশ কিছুক্ষণ আটকে থাকতে হয়েছে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য। শাহরুখ তবু ছাড়া পেয়েছেন, ক্ষমাও চেয়েছেন মার্কিন কর্তৃপক্ষ। কিন্তু আমজাদ ভিসা না পাওয়ায় তার অনুষ্ঠানটিই বাতিল হয়ে গেল। শিল্পীর দীর্ঘ সঙ্গীত জীবনে এমন ঘটনা এই প্রথম।
ক্ষুব্ধ আমজাদ এ দিন টুইট করে বলেছেন, ‘‘সেপ্টেম্বরে রয়্যাল ফেস্টিভ্যাল হল-এ আমার বাজানোর কথা ছিল। কিন্তু আমার ব্রিটেনের ভিসা খারিজ হয়ে গিয়েছে। শিল্পীরা, যারা প্রেম ও শান্তির বার্তা ছড়িয়ে দেন, তাদের কাছে এটি খুবই দুঃখের। আমি স্তম্ভিত ও বিষণ্ণ।’’ পরে উস্তাদজির স্ত্রী শুভলক্ষ্মী টেলিফোনে বলেন, ‘‘আমরা এই নিয়ে বেশি কথা বলতে চাইছি না। যা ঘটেছে সবাই জানেন। আমরা এটি দেশবাসীর বিবেচনার উপরেই ছেড়ে দিচ্ছি। তবে এমন ঘটনা ওর জীবনে আগে কখনও ঘটেনি।’’
ব্রিটেনে আমজাদের অনুরাগীর সংখ্যা প্রচুর। তিনি নিজেই টুইটে লিখেছেন যে, সত্তরের দশক থেকে তিনি প্রতি বছরই ব্রিটেনে অনুষ্ঠান করে আসছেন। ব্রিটেনের একাধিক সম্মানে ভূষিত হয়েছেন তিনি। তার পরেও এমন ঘটল কেন? দিল্লিতে ব্রিটিশ হাই কমিশনের পক্ষ থেকে শুধু বলা হয়েছে, কোন ব্যক্তির ভিসার আবেদন নিয়ে মন্তব্য করা হবে না।
গোটা ঘটনায় ক্ষুব্ধ দিল্লি। দুই খান-ই গোটা বিশ্বে ভারতীয় সংস্কৃতি এবং বিনোদনের প্রতীক। তাদের হেনস্থা ভারতের কূটনীতির পক্ষেও যথেষ্ট হানিকর বলে মনে করা হচ্ছে।
আমজাদের জীবনে এমনটা প্রথম। শাহরুখের কিন্তু তা নয়। যে দেশের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা স্বয়ং তাকে বিনোদনের দূত বলে মনে করেন, সেই দেশেই বারবার তাকে অভিবাসন কার্যালয়ে রক্তচক্ষুর সামনে পড়তে হয়। এর আগে ২০০৯ সালে নিউ জার্সির নেওয়ার্ক বিমানবন্দরে এবং ২০১২ সালে নিউ ইয়র্কের জেএফকে বিমানবন্দরে শাহরুখের সঙ্গে একই ঘটনা ঘটে। এবার ফের তাকে আটকানো হল লস অ্যাঞ্জেলেস বিমানবন্দরে।
মার্কিন অভিবাসন দফতর তাদের পুরনো ব্যাখ্যাই শুনিয়েছে আরও একবার— ‘নো ফ্লাই’ তালিকায় থাকা অন্য এক শাহরুখ খানের সঙ্গে গুলিয়ে ফেলাতেই নাকি এই কাণ্ড! এর জন্য মার্কিন পরিষেবা সংস্থার অপদার্থতাকেই ঘরোয়া ভাবে দায়ী করা হচ্ছে। ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে খবর, ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের দুই প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ইয়াসিন ভটকল এবং রিয়াজ ভটকলের মধ্যে কোন একজন শাহরুখ খানের ছদ্মনাম ব্যবহার করত বছর পাঁচেক আগে। এমনকী ‘শাহরুখ খান’ নামে একটি জাল পাসপোর্টও তারা বানিয়েছিল। সেই নামটিই মার্কিন নিরাপত্তা ব্যবস্থার সিস্টেমে রয়ে গিয়েছে। মাঝে এতগুলি বছর কেটে গেলেও ভ্রান্তিমুক্তি ঘটেনি।
২০১২-র অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গেই ইয়েল বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘মাই নেম ইজ খান’-এর নায়ক ব্যঙ্গ করে বলেছিলেন, অহঙ্কার কাটানোর ভাল উপায় হল আমেরিকায় ঘুরে যাওয়া। এ দিন তিনি ফের বিরক্তি জানিয়ে টুইট করার পর তোলপাড় পড়ে যায়। আমেরিকার সহকারী বিদেশ বিষয়ক সচিব নিশা দেশাই বিসওয়াল লেখেন, ‘‘ভোগান্তির জন্য দুঃখিত। মার্কিন কূটনীতিকদেরও এমন ঝামেলায় পড়তে হয়।’’ টুইট করে দুঃখ প্রকাশ করেন ভারতে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত রিচার্ড বর্মাও। তিনি বলেন, ‘‘এমন যাতে আর না ঘটে, সেটা আমরা দেখছি। আমেরিকা-সহ গোটা বিশ্বেই তোমার কাজ লক্ষ লক্ষ মানুষকে অনুপ্রাণিত করে।’’ রাষ্ট্রদূতের এই টুইটের পর শাহরুখ অবশ্য তাকে ধন্যবাদই জানিয়েছেন।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
বিডি প্রতিদিন/১৩ আগস্ট ২০১৬/হিমেল-০৮