২৯ নভেম্বর, ২০১৯ ১০:৫৯

একজন রাজীব এর জীবনী (৭)

দেবী গাফ্ফার

একজন রাজীব এর জীবনী (৭)

অভিনেতা রাজীব ও দেবী গাফ্ফার

দরজা আমিই খুলে দিলাম।

১০ মিনিটের মতো কথা হলো, যার বর্ণনা আমার জীবনীতে উল্লেখ করেছি।
নতুন পাঠকদের কথা ভেবে আগের লেখা থেকে কিছু অংশ কপি পেস্ট করে দিলাম।

আমাকে দেখেই বললেন, আপনার খবর পেয়ে মেকআপ উঠানোর মত সময়টুকুও নষ্ট করতে ইচ্ছে করলো না।আবার যদি বাসায় থেকেও নাই বলেন? আমি ও বললাম, আপনি আমাকে খুঁজতে কক্সবাজার গেলেন কেন?

শুনেন আসল কথায় আসি। আপনি গত দুই বছর ধরে কোন না কোন ভাবে আমার পিছনে লেগে আছেন কেন?।

মেঝো মা লজ্জা পান, মেঝোমা বলেন, বাবা ও এরকমই কিছু মনে কর না।
না মেঝো মা আমি দেবীকে ভালোবাসি।
শুনেন আপনি আমাকে বিয়ে করবেন? জী।

আমার কিছু কথা আছে, কালকে দেখা করবেন। রাজীব সাহেব বললেন।
মগবাজার মোড়ে আমার বন্ধুর চাইনিজ রেস্টুরেন্ট, টাইকিং ওখানে আসবেন? ঠিক আছে।

রাজীব সাহেব চলে গেলেন, এতো সুন্দর করে মানুষ কথা বলতে পারে? দেখতে হুবহু রাজেশ খান্নার মতো না?
অমিতাভ বচ্চনের মতো ভয়েস না? দাড়ানোর ভঙ্গী, বসার স্টাইল সব যেন আলাদা, মন কাড়ে।
আগে তো চোখে পড়েনি? অর্ধেক কথা ইংরেজিতে বলেন, তাও ব্রিটিশ এক্সেন্ট?

পরের দিন উনার সঙ্গে দেখা করি।

কোন সময় না নিয়ে বলা শুরু করি।
শেষে বলি, আপনি আমাকে বিয়ে করবেন উল্টাে যৌতুক দিয়ে, করবেন?
আপনাকে দেয়ার মত আমাদের কিছু নেই।
উনি বিনয়ের সঙ্গে বলেন, জী আমার কিছু লাগবে না। কালকে আপনার গার্ডিয়ান পাঠাবেন, পরশু বিয়ে হবে।

আর যদি না পারেন আমি পরশু কক্সবাজার চলে যাবো। জি আমি কালকেই পাঠাবো। আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম বিয়ে হলে হবে না হলে আরও ভালো।

মেস ছেড়ে জাকির হোসেন রোড এ বাসা নিলেন, বাসায় একটা আলমিরা একটা নতুন খাট।
সেটা ও ধার করে কেনা। এক সেট বেতের সোফা।
শুরু হলো আমার পথ চলা।
বিয়ের কিছু দিন পরেই জয় বিজয় পেটে আসে।
তখনই জানতে পারি, কুলসুম মেম (রাজীব সাহেবের প্রথম বউ) রাজীব সাহেবের বাবা মার সঙ্গেই থাকেন।
আমি হতভম্ব, কি করবো কার কাছে যাবো। দিশেহারা অবস্থা আমার।
উনাকে জিজ্ঞাসা করি এতোবড় প্রতারণা কেন করলেন?
তখন বললেন, সবার চাপে ডিভোর্স এর পেপার উইথড্র করতে বাধ্য হন।
মাথা নিচু করে বললেন, তোমাকে হারানোর ভয়ে।
আজীবন আমার রাগ ছিল উনার এই মিথ্যাটুকুর জন্য।
অনেকবার ক্ষমাও চেয়েছেন।
আমি উনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি।

আসলে কুলসুম মেম, রাজীব সাহেব কেউ অপরাধী নন। অপরাধ তখনকার সমাজের, তাদের চিন্তা ধারার।
অন্ধকার সমাজের বলি হলেন,
উনারা দু'জন।

ভালো মন্দ মিলিয়ে দিন পার হয়েই যায়।
আমরা আবার তাজমহল রোডে বাসা নিই।
ছোট্ট বাসা, দরজার সামনেই ড্রেন। এই বাসার ভাড়া আঠারোশো টাকা।
২২ সেপ্টেম্বর ৮৬ সালে, তাজমহল রোডে জয় বিজয়ের জন্ম হয়।
বাসায় দাই এর হাতে, কোন ডাক্তার না কোন ওষুধ ও না।
ভোররাতের দিকে ওদের জন্ম হয়।
সকাল ৯টা ১০টার দিকে তিন চারজন প্রযোজক বাসায় হাজির।
ওই দিনই চার ছবি এক সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হলেন।
সৌভাগ্যের চাবিকাঠি নিয়ে দুই ভাইয়ের আগমন।
আমাদের দিন পাল্টাতে থাকলো।
বাসায় প্রথম ফ্রিজ আসলো।
কার্পেট আসলো।
দুই বাচ্চা একসাথে কাঁদে একসঙ্গে ক্ষুধা লাগে। আমি কঙ্কাল সার হতে থাকি।

বাচ্চা হওয়ার খবর পেয়ে রাজীব সাহেবের বাবা-মা আসেন।
বাবা-মাকে বেডরুম ছেড়ে দিয়ে আমরা ড্রেনের পাশের ছোট্ট ড্রইং রুমে ফ্লোরে থাকি।
দুই বাচ্চা রাত জাগে, সকালে উঠে মা-বাবার জন্য রান্না শুরু করি।
আমার ওজন কমতে থাকে।
এর মধ্যে মাঝে মাঝে ঝগড়াঝাটি ও হয়। যা সব সংসারে হয়।
বাচ্চা হওয়ার আগে, আমার হাতে প্রতিদিন এর বাজার খরচ হিসেবে পঞ্চাশ টাকা দেয়া হতো।

বাচ্চাদের জন্মের পর সেটা একশো টাকায় পৌঁছালো।
ভালোই চলতো।
মোহাম্মদপুর বাজারে বাজার করতাম। এক ভাগ মাছ পাঁচ টাকা।
১০০ টাকায় সংসার খরচ হয়ে আমার প্রতি মাসে ৫০০ টাকা জমা হতো।
বাচ্চাদের যখন বয়স আট মাস, তখন আমি প্রথম দুমকি যাই।
দুইতলা কাঠের বাড়ি, বেশ পুরনো। যে কোন মুহূর্তে ভেঙে পড়তে পারে।
বাড়ি থেকে দুরে বাথরুম। আসলে বাথরুম না, দুটো কাঠের সাঁকোর ওপর বসে কাজ সারা।

আমিও মফস্বলের মেয়ে, কয়েক বছর ঢাকায় থাকার কারণে অভ্যাস কিছুটা বিগড়ে গিয়েছিল।
ওইবার প্রথম কুলসুম মেমকে দেখি।

‘চলবে...’

(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)

বিডি প্রতিদিন/আরাফাত

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর