রবিবার, ১৫ ডিসেম্বর, ২০১৩ ০০:০০ টা

আজ জামায়াতের হরতাল

আগেই ব্যাপক সহিংসতা

আজ রাজধানীসহ সারা দেশে জামায়াতে ইসলামীর ডাকা সকাল-সন্ধ্যা হরতাল। তবে হরতালের আগেই রাজধানীজুড়ে তাণ্ডবলীলা চালিয়েছে জামায়াত-শিবির। মানবতাবিরোধী অপরাধে জামায়াত নেতা আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসির পর রাজধানীতে দ্বিতীয় দিনের মতো সহিংসতা অব্যাহত রেখেছে তারা। গতকালও ককটেল বিস্ফোরণ, গাড়িতে অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটিয়েছে জামায়াত-শিবির কর্মীরা। অন্যদিকে গত শুক্রবার রাজধানীতে জামায়াত-শিবিরের নাশকতার ঘটনায় মতিঝিল, রামপুরা ও মুগদা থানায় মামলা হয়েছে।

গতকাল সকাল ৯টার দিকে যাত্রাবাড়ীর কুতুবখালী এলাকায় ডাকুখান সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সামনে উৎসব পরিবহনের একটি গাড়িতে ভাঙচুর চালায়। পরে শিবির কর্মীরা ওই বাসে আগুন ধরিয়ে চলে যায়। এ ঘটনায় কেউ হতাহত হয়নি।

গতকাল ভোর সাড়ে ৬টার দিকে জুরাইনে ৮৮ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে আগুন ধরাতে গিয়ে জনতার ধাওয়ার মুখে পালিয়েছে শিবির কর্মীরা। তবে টিনের তৈরি ওই কার্যালয়টি এখন ব্যবহার হচ্ছে না বলে জানিয়েছেন কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাজহারুল ইসলাম।

ওসি বলেন, সকাল সাড়ে ৬টার দিকে জামায়াত-শিবির কয়েকজন এখানে আগুন দেওয়ার চেষ্টা করে। তারা অফিসের কাঠের দরজায় আগুন দেয়। টহলরত পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়।

সকাল ৯টার দিকে মগবাজার এলাকায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা ঝটিকা মিছিল থেকে রাস্তায় চলাচলকারী চারটি যানবাহন ভাঙচুর করে। পুলিশের ধাওয়ায় মিছিলকারীরা অন্তত ৫-৭টি ককটেল বিস্ফোরণ করতে করতে বিভিন্ন গলি দিয়ে পালিয়ে যায়।

সকাল ১০টার দিকে পুরান ঢাকার ধোলাইখালে ঝটিকা মিছিল করে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবির। পুলিশ মিছিলে বাধা দিলে শিবির কর্মীদের সঙ্গে তাদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। এ সময় এখানে ৩-৪টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় শিবির কর্মীরা। পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।

গতকাল দুপুর আড়াইটার দিকে মহাখালী পুষ্টি বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের পেছন থেকে বনানী থানা ছাত্রশিবির সভাপতি শহিদুল্লাহকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ওই সময় সেখানে শিবিরের কর্মীদের গোপন বৈঠক চলছিল।

বনানী থানার উপপরিদর্শক মোহাম্মদ মোর্শেদ জানান, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে অভিযান চালানো হয়। তবে শহিদুল্লাহ ছাড়া বাকিরা পালিয়ে যায়। শহিদুল্লাহ আইএসটি'র তৃতীয় বর্ষের ছাত্র।

বেলা ৩টার দিকে নাইটেঙ্গেল মোড়ে ৩-৪টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায় জামায়াত-শিবিরের কর্র্মীরা। পরে পুলিশ ধাওয়া দিলে তারা পালিয়ে যায়। পুলিশ ওই স্থান থেকে তিনটি তাজা ককটেল উদ্ধার করে।

বিকাল সাড়ে ৩টার দিকে মিরপুর সাড়ে ১১ নম্বর বাস স্ট্যান্ডের পাশে দুর্বৃত্তরা পুলিশের সামনেই দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়। এ সময় গোটা এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে যায় বাসস্ট্যান্ড এলাকা।

শুক্রবারের ঘটনায় মামলা : গত শুক্রবার জুমার নামাজের পর রাজধানীর ফকিরাপুল, আরামবাগ, মতিঝিল এজিবি কলোনি, আইডিয়াল স্কুলের সামনে, কমলাপুর, পল্টনসহ বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ মিছিলসহ ককটেল বিস্ফোরণ, অগ্নিসংযোগ ও ভাঙচুর চালায় জামায়াত-শিবির কর্মীরা। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে রাজধানীর তিনটি থানায়। বিস্ফোরক দ্রব্য ও দণ্ডবিধি ধারায় পুলিশ বাদী হয়ে এসব মামলা করেন। মতিঝিল থানার এসআই নাজমুল হাসান জানান, শুক্রবারের ঘটনায় মোতাসিন বিল্লা, আবদুর রহমান, মাহফুজুর রমান, শহিদুল ইসলাম, মফিজুর রহমানসহ ১২ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা হয়েছে। এখানে অজ্ঞাত কাউকে আসামি করা হয়নি।

রামপুরা থানা সূত্রে জানা যায়, এখানে ফয়েজ উদ্দিনের নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত ৪০-৫০ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে।

মুগদা থানার দায়েরকৃত মামলার বাদী এসআই খায়রুজ্জামান জানান, শুক্রবারের ঘটনায় বিস্ফোরক দ্রব্য ও পেনাল কোড আইনে মামলা হয়েছে। মামলায় ২৭ জনের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ১৬০-১৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

বর্তমান সরকারের আমলে খুন হয়েছে ১২০০ : জামায়াতে ইসলামীর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, এ সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে গণহত্যা চালিয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ১ হাজার ২০০ জনকে খুন করেছে। আহত করেছে প্রায় ৭০ হাজার। আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরীণ কোন্দলে নিহত হয়েছে ১৭৫ জন। সারা দেশে খুনের ঘটনা ঘটেছে প্রায় ১৯ হাজার। তিনি বলেন, বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে শত শত। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ১১ জন মানুষ খুন হয়েছে। সুতরাং এ সরকার গণহত্যাকারী, খুনি ও জালেম। এ সরকারের আমলে মানুষের জান, মাল, ইজ্জতের কোনো নিরাপত্তা নেই।

গতকাল সন্ধ্যায় এক বিবৃতিতে আজ সকাল-সন্ধ্যা সারা দেশে সর্বাত্দক হরতাল কর্মসূচি শান্তিপূর্ণভাবে পালনের আহ্বান জানিয়ে তিনি আরও বলেন, সরকার সব আইনি ও মানবিক অধিকারকে পদদলিত করে সুপরিকল্পিতভাবে শহীদ আবদুল কাদের মোল্লাকে হত্যা ও সারা দেশে নৈরাজ্য সৃষ্টি করেছে। তিনি বলেন, সরকার সারা দেশে তার এজেন্টদের দ্বারা নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে। সরকারের নির্দেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গুলি চালিয়ে গত ২ দিনে ১৬ জনকে নির্মমভাবে হত্যা করেছে। তিনি বলেন, এদেশের মানুষ আন্দোলন, সংগ্রাম ও রক্তপিচ্ছিল পথ পেরিয়ে অতীতে যেভাবে নিজেদের দাবি আদায় করেছে এখনো সেভাবেই জনগণের ন্যায্য ভোটাধিকারসহ সব সাংবিধানিক অধিকার আদায় করে ছাড়বে।

 

 

সর্বশেষ খবর