রবিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০১৪ ০০:০০ টা
সেমিনারে অর্থনীতিবিদ ব্যবসায়ীরা

রাজনৈতিক বাণিজ্যচক্রে দেশ

দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদরা বলেছেন, রাজনৈতিক বাণিজ্যচক্রের ভেতরে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। এখানে অব্যাহত রয়েছে রাজনৈতিক অস্বস্তি। বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়াতে বড় প্রয়োজন রাজনৈতিক সমঝোতা। ব্যবসায়ীরা বিনিয়োগের নিশ্চয়তা পেলেই এগিয়ে যাবেন। আর শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতারা বলেছেন, দেশে প্রবৃদ্ধির জন্য দরকার বিনিয়োগ। আর বিনিয়োগের জন্য দরকার সুস্থ রাজনৈতিক পরিবেশ। কিন্তু দেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিবেশকে সুস্থ বলা যায় না। এ পরিবেশকে মৃত বলা যায়। দেশে যে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েছে, তাতে বিনিয়োগ হবে না বলেই মনে করেন ব্যবসায়ীরা। রাজধানীর মতিঝিলে ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) অডিটরিয়ামে অর্থনৈতিক প্রতিবেদকদের সংগঠন ইকোনমিক রিপোর্টারস ফোরাম (ইআরএফ) আয়োজিত 'আগামী বাজেট : প্রতিশ্রুতি ও চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক আলোচনা সভায় দেশের শীর্ষ অর্থনীতিবিদ ও ব্যবসায়ী নেতারা গতকাল এসব কথা বলেন। বার্তা সংস্থা এপির সাবেক ব্যুরোপ্রধান সিনিয়র সাংবাদিক ফরিদ হোসেনের সঞ্চালনা এবং ইআরএফ সভাপতি সুলতান মোহাম্মদ বাদলের সভাপতিত্বে আলোচনায় অংশ নিয়ে পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশনের (পিকেএসএফ) চেয়ারম্যান অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জামান আহমেদ বলেন, ২০১৪-১৫ অর্থবছরের বাজেটে মানুষকে সক্ষম করে গড়ে তোলার নির্দেশনা থাকতে হবে। নজর দিতে হবে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর দিকে। কেবল সামাজিক নিরাপত্তা-কর্মসূচিতে টাকা দিলে অতিদারিদ্র্য নিরসন করা যাবে না বলে মনে করেন তিনি। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) সম্মানীয় ফেলো ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য বলেন, রাজস্ব-কাঠামো আগের চেয়ে দুর্বল হয়ে পড়েছে। দেশীয় ঋণ পরিশোধের দায় রাজস্ব বাজেটে রয়ে গেছে। উন্নয়ন প্রশাসনের স্থবিরতা বিরাজ করছে প্রকট আকারে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, আগামী অর্থবছরের বাজেট দুই লাখ ৩৫ হাজার কোটি টাকা হলে তা বাস্তবসম্মত হতে পারে। তবে দুই লাখ ৫৫ হাজার কোটি টাকার হলে তা পরিণত হবে কাগুজে বাজেটে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ বলেন, রূপকল্পভিত্তিক বাজেট না হওয়াই ভালো। আগামী বাজেটে বিনিয়োগ, কর্মসংস্থান, সুষম উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে বিশেষ নজর দিতে হবে। দেশে কর্মসংস্থান স্থবির হয়ে আছে। আর যতটুকু রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা রয়েছে, এতে বিনিয়োগ হবে না। ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন বাংলাদেশ শিল্প ও বণিক সমিতি ফেডারেশনের (এফবিসিসিআই) সভাপতি কাজী আকরাম উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'পোশাকশিল্প যত ওপরে উঠিয়েছে, রানা প্লাজার ঘটনা ততই নিচে নামিয়েছে আমাদের। এ নিয়ে বিদেশিরা সাহায্য করতে চায় না। কিন্তু কটূক্তি করতে মোটেই ছাড়ে না তারা।'

এফবিসিসিআইর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টু বলেন, ব্যবসায়ীদের দোষ দেওয়া দেশে একটা অভ্যাসে পরিণত হয়েছে। বাজেট নিয়ে এত হইচই বিশ্বের কম দেশেই হয়। দেশে এখন শুল্ককরের হার স্থিতিশীল রয়েছে। ভবিষ্যতে কমবে। চট্টগ্রাম স্টক একচেঞ্জের (সিএসই) চেয়ারম্যান ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ বলেন, অর্থবছরের সময়সীমা পরিবর্তন জরুরি। এটি মার্চ বা এপ্রিল থেকে শুরু করা যেতে পারে। ভারতসহ বিশ্বের বহু দেশ এটি করেছে। এটি করা গেলে বাজেটের অপচয় রোধ করা যাবে বলে মনে করেন তিনি। পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি আতিকুল ইসলাম বলেন, পোশাক ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্স দৃশ্যমান কারখানা পরিদর্শন করছে। এতে ইতোমধ্যে সাড়ে ১৭ হাজার শ্রমিক বেকার হয়ে পড়েছে। আগামী পাঁচ মাসে আরও পাঁচ লাখ শ্রমিক বেকার হয়ে পড়বে বলে তিনি মনে করেন। আবাসন ব্যবসায়ীদের সংগঠন রিয়েল এস্টেট অ্যান্ড হাউজিং অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (রিহ্যাব) সাবেক সভাপতি ড. তৌফিক এম সেরাজ বলেন, হয়রানির কারণে অপ্রদর্শিত অর্থ বিনিয়োগ হচ্ছে না। ১০ বছর আগে অনেকে ফ্ল্যাট কিনলেও রেজিস্ট্রেশন করেননি। বিষয়টি বাজেটে স্পষ্ট হওয়া জরুরি।

 

অন্যান্যের মধ্যে আলোচনায় অংশ নেন বাংলাদেশ রপ্তানিকারক সমিতির সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী, ঢাকা চেম্বারের সভাপতি মোহাম্মদ শাহাজাহান খান, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) সাবেক সভাপতি রকিবুর রহমান প্রমুখ।

 

সর্বশেষ খবর