শনিবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৪ ০০:০০ টা

শাবিতে অস্ত্র গুলিসহ ২২ কর্মী আটক

ছাত্রলীগ জড়িত নয় : সভাপতি

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (শাবিপ্রবি) দুই গ্রুপের বন্দুকযুদ্ধের ঘটনায় সিলেট নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে ছাত্রলীগের ২২ কর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। এ সময় এক কর্মীর বাসা থেকে উদ্ধার করা হয়েছে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র। সংঘর্ষের ঘটনায় পুলিশ বাদী হয়ে ছাত্রলীগের তিন শতাধিক নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দুটি মামলা করেছে। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে গতকাল পর্যন্ত কোনো মামলা হয়নি।
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শাবিপ্রবিতে সংঘর্ষের ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের গ্রেফতারে বৃহস্পতিবার রাত থেকে গতকাল পর্যন্ত নগরীর বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় মহানগর পুলিশ। অভিযানে ছাত্রলীগের ২২ কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়। বৃহস্পতিবার রাতে নগরীর মদিনা মার্কেট এলাকায় ছাত্রলীগ কর্মী শিপলুর বাসায় অভিযান চালিয়ে একটি রিভলবার, ৪ রাউন্ড গুলি ও ১৭টি রামদা উদ্ধার করা হয়। এ সময় শিপলু পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে পালিয়ে যায়। সংঘর্ষের ঘটনায় জালালাবাদ থানার এসআই প্রদীপ বাদী হয়ে অস্ত্র আইনে এবং এসআই আবুল কালাম বাদী হয়ে পুলিশের ওপর আক্রমণের অভিযোগে পৃথক মামলা করেছেন। এদিকে, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের নির্দেশ মতো গতকাল সকাল ৯টার মধ্যে ছাত্রীরা হল ছেড়ে চলে গেছেন। এর আগে বৃহস্পতিবার বিকাল ৪টার মধ্যে ছাত্ররা হল ছেড়ে চলে যান। অনেক ছাত্র হল ছেড়ে সহপাঠীদের মেসেও অবস্থান নিয়েছেন। প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার শাবিপ্রবি ছাত্রলীগের অঞ্জন-উত্তম ও পার্থ-সবুজ গ্রুপের মধ্যে বন্দুকযুদ্ধে গুলিবিদ্ধ হয়ে ছাত্রলীগ কর্মী সুমন দাস মারা যান। এ ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর হিমাদ্রি শেখর রায়, শাবি ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি অঞ্জন রায় ও ছাত্রলীগ কর্মী খলিলুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। এ ঘটনার পর অনির্দিষ্টকালের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা করা হয়।
শাবিপ্রবিতে সংঘর্ষের দায় ছাত্রলীগের নয় : শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগ জড়িত নয় বলে দাবি করেছে সংগঠনটি। ছাত্রলীগ কেন্দ্রীয় সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ এ ঘটনার জন্য গণমাধ্যম, বিশ্ববিদ্যালয় ও পুলিশ প্রশাসনকে দায়ী করেছেন। গতকাল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি করা হয়। সম্মেলনে সংগঠনের যুগ্ম-সম্পাদক শামসুল কবির রাহাত, মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তাক, সাংগঠনিক সম্পাদক তরিকুল ইসলাম, দফতর সম্পাদক শেখ রাসেল, ঢাবি শাখা সভাপতি মেহেদী হাসান, সাধারণ সম্পাদক ওমর শরীফ, সদস্য এনামুল হক প্রিন্স, শাবিপ্রবির সাবেক আহ্বায়ক শামসুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। কিছু গণমাধ্যম অপপ্রচার করছে দাবি করে সম্মেলনে ছাত্রলীগ সভাপতি এইচএম বদিউজ্জামান সোহাগ বলেন, ছাত্রলীগ থেকে বহিষ্কৃত ও বহিরাগতদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করা হয়েছে। এতে সুমন দাস নামের একজন বহিরাগত নিহত হন। কিছু গণমাধ্যম ঢালাওভাবে এ ঘটনার দায় ছাত্রলীগের ওপর চাপানোর হীন প্রচেষ্টা করছে। কিন্তু সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত ও বহিরাগতদের দায় কেন ছাত্রলীগের ঘাড়ে বর্তাবে। তিনি বলেন, সংগঠন থেকে বহিষ্কৃত ছাত্রলীগের সাবেক কেন্দ্রীয় সদস্য উত্তম কুমার দাস এ ঘটনার অন্যতম হোতা। সে সদ্য বিদায়ী আহ্বায়ক শামসুজ্জামান চৌধুরী সুমনকে চাপাতি দিয়ে হামলা করে গুরুতর আহত করে। এ ঘটনায় সুমন  ২০১৩ সালের ৯ মে জালালাবাদ থানায় উত্তমের বিরুদ্ধে হত্যাচেষ্টা মামলা করেন। পুলিশ প্রশাসনকে বার বার অনুরোধ করেছিলাম সন্ত্রাসী উত্তমকে গ্রেফতার করতে। কিন্তু পুলিশ প্রশাসন তাকে গ্রেফতার করেনি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাকে ক্যাম্পাসে অবস্থান করতে দিয়েছে। আমাদের কাছে বিস্ময়, একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে কীভাবে মামলার তালিকাভুক্ত আসামি অবস্থান করে। এ ছাড়া পুলিশের নাকের ডগা দিয়ে ঘুরে বেড়ালেও তাকে গ্রেফতার করা হয়নি। এর দায়ভার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর ও পুলিশ প্রশাসনকে নিতে হবে। তিনি বলেন, কোনো নেতা-কর্মী সংগঠন পরিপন্থী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হলে আমরা তাদের ক্ষেত্রে জিরো টলারেন্সে থাকি। সঙ্গে সঙ্গে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করি। কিন্তু কাউকে বহিষ্কার করার পর যদি সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে লিপ্ত হয় তাহলে তার বিরুদ্ধে আমাদের করার কিছু থাকে না। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলার আহ্বায়ক আবদুল মালেক জনিকে প্রকাশ্যে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় চিহ্নিত আসামিদের পুলিশ গ্রেফতার করতে পারেনি। চবির বহিষ্কৃত নেতা জালাল প্রশাসনের ছত্রছায়ায় কীভাবে ছাত্রলীগের নামে গ্রুপ চালায়। এ ছাড়া শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষকদের আঞ্চলিক গ্রুপিংকে ছাত্রলীগের ঘাড়ে চাপানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। একের পর এক সংঘর্ষের ঘটনায় ছাত্রলীগের চেইন অব কমান্ড কি ভেঙে পড়েছে- প্রশ্নের জবাবে ছাত্রলীগ সভাপতি বলেন, চেইন অব কমান্ড ঠিক আছে। বেশির ভাগ জায়গায় সংঘর্ষে ছাত্রলীগ জড়িত নয়। অনেক সময় অন্য সংগঠন জড়িত থাকলেও মিডিয়ায় ছাত্রলীগের নাম দেওয়া হয়।

সর্বশেষ খবর