সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

লতিফ সিদ্দিকী এমপি পদ ছাড়ছেন

লতিফ সিদ্দিকী এমপি পদ ছাড়ছেন

সংসদ সদস্য পদ নিয়ে বিতর্ক নিষ্পত্তির শুনানিতে অংশ নিয়ে আলোচিত আবদুল লতিফ সিদ্দিকী স্বেচ্ছায় সংসদ সদস্য পদ ছাড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গতকাল নির্বাচন কমিশনের শুনানিতে হাজির হয়ে টাঙ্গাইল-৪ আসনের এই সংসদ সদস্য বলেন, ‘আমি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব। এই সিদ্ধান্ত জানিয়ে গেলাম। এ নিয়ে আর শুনানি করার দরকার নেই।’ প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের উপস্থিতিতে এ ঘোষণা দেন তিনি। মাত্র ১৪ মিনিটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ও আবদুল লতিফের শুনানি শেষ হয়। এ ছাড়া এই শুনানি বন্ধের জন্য উচ্চ আদালতে গিয়েছিলেন আবদুল লতিফ। কিন্তু হাইকোর্ট তার আবেদন নাকচ করে দেন এবং গতকাল আপিলেও তা বহাল থাকে। সকালে আপিল বিভাগের আদেশ পাওয়ার পর নির্বাচন কমিশনে যান আবদুল লতিফ সিদ্দিকী ও তার আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া। এদিকে শুনানি শেষে সিইসি বলেন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী সেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন। এখন কীভাবে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয় তা সংবিধানে বলা আছে। তিনি তা মেনেই কাজ করবেন আশা করি। শুনানি মুলতবি ঘোষণা করে তিনি বলেন, দুই সপ্তাহের মধ্যে বিতর্ক নিষ্পত্তির বিধান থাকায় এ বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্তও পরে জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। শুনানি শেষে ইসি সচিবালয়ে নির্বাচন কমিশনার মো. শাহ নেওয়াজ বলেন, আগামী ৬ সেপ্টেম্বর আবদুল লতিফ সিদ্দিকীর এমপি পদ নিয়ে বিতর্কের পরবর্তী শুনানির দিন ধার্য করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। সেদিনই পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
 

১৪ মিনিটের শুনানি : গতকাল ইসির সম্মেলন কক্ষে নির্ধারিত শুনানিতে অংশ নেন সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার। এ সময় ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম ও আইন শাখার যুগ্ম সচিব মো. শাহজাহান উপস্থিত ছিলেন। বেলা পৌনে ১১টার দিকে নির্বাচন কমিশনে আসেন লতিফ সিদ্দিকী। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক উপস্থিত না থাকলেও তার প্রতিনিধিত্ব করেন দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবির কাউছার ও সাইফুদ্দিন খালেদ। ইসির যুগ্ম সচিব আবদুল লতিফ সিদ্দিকীকে তার বক্তব্য তুলে ধরার আমন্ত্রণ জানালে তিনি নিজের আসন থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বলেন, আমি কি এখানে কথা বলব, নাকি পাশের ডায়াসে যাব? এরপর এগিয়ে এসে সামনে রাখা ডায়াসে দাঁড়িয়ে নিজের বক্তব্য উপস্থাপন শুরু করেন। আবদুল লতিফ সিদ্দিকী বলেন, আমার নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। আমি সাচ্চা মুসলমান, আমি জন আস্থায় বিশ্বাস করি। জনতার আদালতে আমি গিয়েছি। আমি সংসদ সদস্য। আইনগত ও সাংবিধানিকভাবে সংবিধানের ৬৬(৪) অনুযায়ী আমার বিষয়ে স্পিকারের সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা না থাকায় আমাকে হাইকোট-সুপ্রিমকোর্টে যেতে হয়েছে। নিজের অবস্থান তুলে ধরতে গিয়ে আবদুল লতিফ জানান, তিনি বহুবার বহিষ্কৃত হলেও এমনটা আগে কখনো হয়নি। মাননীয় প্রধান নির্বাচন কমিশনার আমি আনন্দের সঙ্গে, নির্লিপ্তভাবে ঘোষণা করছি-আমি টাঙ্গাইল-৪ আসনের সংসদ সদস্য পদ থেকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করব। এটা আমার ঘোষণা, আমার সিদ্ধান্ত। এ সময় নির্বাচন কমিশনের শুনানির দরকার নেই বলে মনে করেন তিনি। তিনি আরও বলেন, আপনাদের আর কোনো কার্যক্রম নেওয়ার প্রয়োজন বোধ করছি না। আপনাদের কষ্ট দিলাম। আমি সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করছি, এখন থেকে মাত্র ৫ মিনিট পরেই তা কার্যকর হবে। স্পিকারের কাছে বিষয়টি জানানো হবে। এ সময় দেশে গণতন্ত্র ও সুশাসন কায়েমের প্রত্যাশা রাখেন তিনি।
এরপর সিইসি বলেন, আবদুল লতিফ সিদ্দিকী স্বেচ্ছায় পদত্যাগের ঘোষণা দিয়েছেন, পদত্যাগের ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন। এখন কীভাবে সংসদ সদস্য পদ থেকে পদত্যাগ করতে হয় তা সংবিধানে বলা রয়েছে। তিনি তা মেনেই কাজ করবেন আশা করি। শুনানি শেষে দুই সপ্তাহের মধ্যে বিতর্ক নিষ্পত্তির বিধান থাকায় এ বিষয়ে ইসির সিদ্ধান্তও পরে জানানো হবে বলে উল্লেখ করেন সিইসি। শুনানি থেকে বের হয়ে আবদুল লতিফ সিদ্দিকী অপেক্ষমাণ সাংবাদিকদের জানান, ভালো সংবাদের অপেক্ষায় আছেন নিশ্চয়ই। তিনি বলতে থাকেন, আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার হয়েছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতির মধ্যে সিদ্ধান্ত জানাতে বিলম্ব হয়েছে। আমি অবগত ছিলাম। আমার নেতা চান না আমি এ নিয়ে বাড়াবাড়ি করি। সংসদ সদস্য পদ নিয়ে তার কোনো লোভ নেই বলে জানান তিনি। তাই দলের প্রতি, নেতার প্রতি আস্থা ও আনুগত্যের অংশ হিসেবে তিনি স্পিকারের কাছে পদত্যাগপত্র জমা দেবেন।

সর্বশেষ খবর