সোমবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৫ ০০:০০ টা

ভূমির প্রতি ধাপেই ঘুষ : টিআইবি

ভূমি খাতের সেবা পেতে বা ব্যবস্থাপনায় ধাপে ধাপে ঘুষ লেনদেন হয়। এ অভিযোগ করেছে দুর্নীতিবিরোধী সংগঠন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। ভূমি খাতে বিরাজমান ভয়াবহ অনিয়ম ও দুর্নীতির চিত্র তুলে ধরে টিআইবি বলেছে, ভূমি উন্নয়ন করের ক্ষেত্রে ১০০ থেকে ১০ হাজার টাকা, নামজারির ক্ষেত্রে ৫ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা, রেজিস্ট্রেশনের ক্ষেত্রে ১ হাজার থেকে ৫০ হাজার টাকা এবং হাট-বাজার ইজারার ক্ষেত্রে ১০ হাজার থেকে ২০ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ আদান-প্রদান হয়। এমনকি জমির ধরন ও স্থানভেদে ঘুষের পরিমাণ নির্ভর করে বলে জানিয়েছে টিআইবি। গতকাল টিআইবির ধানমন্ডির কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ‘ভূমি ব্যবস্থাপনা ও সেবা কার্যক্রম : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনে এই তথ্য উল্লেখ করা হয়। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ভূমি জরিপের সময় জরিপকর্মীর মাধ্যমে জমির পরিমাণ কম দেখানো ও খতিয়ানে ভুল তথ্য লেখার ভয় দেখিয়ে ভূমি মালিকদের কাছ থেকে ঘুষ গ্রহণ, ঘুষের বিনিময়ে খাস জমি, অর্পিত সম্পত্তি, পরিত্যক্ত ও কোর্ট অব ওয়ার্ডস-এর সম্পত্তি দখলকারী ক্ষমতাবান ও প্রভাবশালীদের নামে রেকর্ড করা হয়। তহসিল অফিসের মাধ্যমে ঘুষের বিনিময়ে নামজারির প্যাকেজ নির্ধারণ করা হয়। কোনো কোনো ভূমি অফিসের কর্মকর্তাদের যোগসাজশে অবৈধ দখল করা খাস জমি, কোর্ট অব ওয়ার্ডস-এর এবং অর্পিত ও পরিত্যক্ত সম্পত্তি ক্ষমতাবান ও রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালীদের নামে নামজারি করানো হয়। কৃষি খাস জমি বরাদ্দের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক নেতা, ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের প্রভাব ও স্বজনপ্রীতিসহ নানা ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। ওই সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক অর্থনীতিবিদ ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপ-নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের এবং গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের সিনিয়র প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. ওয়াহিদ আলম, ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নিহার রঞ্জন রায় এবং সহকারী প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজমুল হুদা মিনা গবেষণা প্রতিবেদনটির সার-সংক্ষেপ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থাপন করেন। গত বছর অক্টোবর থেকে চলতি বছরের জুলাই মেয়াদে এই গবেষণাটি করেছে টিআইবি। সংবাদ সম্মেলনে ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ভূমি সেবায় দুর্নীতি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ ধারণ করেছে। এ খাতে গত ৫ বছরে সুশাসনের জন্য ডিজিটালাইজেশনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও আরও অগ্রগতির প্রয়োজন রয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত আইনের প্রয়োগে যথেষ্ট ঘাটতি লক্ষ্য করা যায়। প্রাতিষ্ঠানিকভাবে অনেক ক্ষেত্রে দুর্বলতা রয়েছে। ভূমি সংক্রান্ত মামলা ক্রমান্বয়ে বাড়ছে। এর পরিচালনায় রয়েছে দীর্ঘসূত্রতা। এ খাত সংক্রান্ত ১৮ লাখ মামলা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় রয়েছে, যা মোট মামলার ৬০ শতাংশ। এ ছাড়া ভূমি রেজিস্ট্রেশন, নামজারি ও করের হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে সুশাসনের ঘাটতি আছে। ভূমি সেবা নারীবান্ধব নয়, যা আমাদের উদ্বিগ্ন করেছে। ভূমি প্রশাসন ও ব্যবস্থাপনায় সমন্বয়ের ঘাটতি দূরীকরণে সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ প্রয়োজন। সংবাদ সম্মেলনে ভূমি খাতে বিরাজমান দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার উন্নয়ন এবং সুশাসন নিশ্চিতকল্পে টিআইবি উত্থাপিত ১২ দফা সুপারিশে বলা হয়, ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ভূমি সংক্রান্ত সব প্রশাসনিক ও ব্যবস্থাপনা কাঠামো পরিচালনার জন্য একক অধিদফতর গড়ে তুলতে হবে। বছরে ভূমি খাতে সরকারের একাধিক ইতিবাচক পদক্ষেপের কথাও বলা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর