মঙ্গলবার, ১৯ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অচিরেই প্রয়োজন মধ্যবর্তী নির্বাচন

শফিউল আলম দোলন

গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অচিরেই প্রয়োজন মধ্যবর্তী নির্বাচন

জয়নুল আবদিন ফারুক

বিএনপির প্রচার সম্পাদক ও জাতীয় সংসদের সাবেক বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক বলেছেন, দেশে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে অচিরেই সকলের গ্রহণযোগ্য একটি মধ্যবর্তী জাতীয় নির্বাচন প্রয়োজন। তিনি বলেন, গণতন্ত্র না থাকলে একটি দেশে যত উন্নয়নই হোক না কেন, সে উন্নয়ন কখনই টেকসই হয় না। টেকসই উন্নয়নের জন্য গণতন্ত্র অপরিহার্য। এ জন্য যতদ্রুত সম্ভব দেশের গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে হবে। গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে দেশের রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক প্রভৃতি বিষয়ে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন। জয়নুল আবদিন ফারুক বর্তমান রাজনৈতিক অবস্থা প্রসঙ্গে বলেন, আওয়ামী লীগের মতো একটি ঐতিহ্যবাহী দলের কাছ থেকে মানুষ এমন পরিস্থিতি আশা করেনি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর মানুষ আশা করেছিল— জনগণের প্রতি সম্মান দেখিয়ে আওয়ামী লীগ সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে আরেকটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের আয়োজন করবে। যেটি করেছিলেন— বেগম খালেদা জিয়া ১৯৯৬ সালে। তৎকালীন বিরোধী দল আওয়ামী লীগসহ জনগণের দাবির প্রেক্ষিতে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিল পাস করে এক মাসের মাথায় ক্ষমতা ছেড়ে দেন বেগম জিয়া। আমরা ভেবেছিলাম আওয়ামী লীগও আমাদের মতো জনগণের প্রতি সম্মান দেখিয়ে এমন একটি নজির সৃষ্টি করবে। কিন্তু সেটি তো করেইনি, বরং সরকারের মন্ত্রী-এমপিরা বলে বেড়াচ্ছেন যে, আগামী ২০১৯ সালের আগে কোনো নির্বাচন তো হবেই না, বরং ২০১৯ সালেও নির্বাচন হবে আওয়ামী লীগের অধীনেই। এ প্রসঙ্গে বিএনপির কেন্দ্রীয় এই প্রচার সম্পাদক বলেন, ৫ জানুয়ারির ভোটারবিহীন নির্বাচনের পর আওয়ামীপন্থি অনেক বুদ্ধিজীবী প্রায়ই বলে থাকেন যে, সে নির্বাচনে বিএনপি না গিয়ে ভুল করেছে। কারণ নির্বাচনে গেলে বিএনপির পাস করার এবং সরকারে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল। তিনি বলেন, আওয়ামী বুদ্ধিজীবীদের এই ধারণা বা মন্তব্যকে ইতিমধ্যেই ভুল প্রমাণিত করেছে ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিনটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ পৌরসভা নির্বাচন। এসব নির্বাচনে দেশের সর্বস্তরের মানুষ অবাক নয়নে দেখেছেন নির্বাচনগুলো কীভাবে হয়েছে। মানুষের ভোটাধিকার কীভাবে হরণ করা হয়েছে। কাজেই আওয়ামী লীগের অধীনে যে নিরপেক্ষ নির্বাচনের কোনো নজির নেই, তা আবারও প্রমাণ করল উল্লিখিত নির্বাচনসমূহে। জয়নুল আবদিন ফারুক বলেন, সরকার মনে করেছে যে, বিরোধী দলের নেতা-কর্মীদের মামলা-হামলা দিয়ে ক্ষমতা দীর্ঘস্থায়ী করবেন। কিন্তু বাংলাদেশে কেন, পৃথিবীর কোনো দেশেই কোনো সরকারের এভাবে ক্ষমতায় টিকে থাকার কোনো নজির নেই। বাংলাদেশেও সম্ভব নয়। জনগণ যখন জেগে উঠবে, তখন আর কিছুই করার থাকবে না। এ জন্য বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বার বার আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেশের চলমান রাজনৈতিক সংকট নিরসনের জন্য সরকারের প্রতি যে আহ্বান জানাচ্ছেন, সরকারের উচিত সেটি গ্রহণ করে অবিলম্বে একটি অবাধ, সুষ্ঠু মধ্যবর্তী জাতীয় নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। তার আগে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা করে সংবিধান অনুযায়ী একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। যদি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় না হয় তাহলে বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বেই গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনে দলমতনির্বিশেষে সবার অংশগ্রহণের বিকল্প নেই। দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সম্পর্কে তিনি বলেন, ঘরের ভিতরে গিয়ে দুর্বৃত্তরা নারায়ণগঞ্জে অবুঝ দুই শিশুসহ পাঁচজনকে জবাই করে হত্যা করেছে। ঘরে-বাইরে কেউ আর আজ নিরাপদ নয়। সরকার পুলিশবাহিনীকে রাজনৈতিক স্বার্থে ব্যবহার করছে তাতেও কোনো সন্দেহ নেই। সম্প্রতি পুলিশবাহিনীর অতি উৎসাহী কিছু অফিসার নিজেরাই তাদের ব্যক্তিস্বার্থে বেশি করে ব্যবহৃত হচ্ছেন। বিরোধী রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী ছাড়াও বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষকে ধরে নিয়ে মামলা ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে অর্থ আদায় করছেন। আর টাকা-পয়সা না দিতে পারলে অকথ্য নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। নির্যাতনের পর হয় অস্ত্র, মাদক, নাশকতা কিংবা জঙ্গিসংক্রান্ত মামলায় ফাঁসিয়ে দিচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর