বৃহস্পতিবার, ২৮ জানুয়ারি, ২০১৬ ০০:০০ টা

পঁচানব্বই বছরেও তারুণ্যে টি এইচ খান

মাহমুদ আজহার

পঁচানব্বই বছরেও তারুণ্যে টি এইচ খান

বিচারপতি টি এইচ খান। ৯৫ বছর পেরিয়েও যেন তারুণ্যের প্রতীক। আজও সক্রিয় আইন পেশায়। বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্টে সবচেয়ে প্রবীণ আইনজীবী। জটিল মামলা নিয়ে এখনো আইন পেশায় সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে লড়ছেন। বয়োবৃদ্ধ হওয়ার কারণে শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কিছুটা কমলেও বড় ধরনের কোনো অসুখে নেই এই বিচারপতি। সুপ্রিমকোর্টের আপিল বিভাগে এখনো নিয়মিত প্র্যাকটিস করছেন। বিএনপির এক নম্বর ভাইস চেয়ারম্যানও টি এইচ খান। দলের ষষ্ঠ জাতীয় কাউন্সিলে বিএনপি চেয়ারপারসন নির্বাচনের জন্য গঠিত কমিশনের প্রধানেরও দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে তাকে। মোহাম্মদপুরের তাজমহল রোডের বাসায় আইনি বিষয় নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি ছাড়াও পত্রিকা পড়েন। বিবিসি, সিএনএনসহ বাংলাদেশের টিভির সংবাদ দেখে সময় কাটে বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই রাজনীতিকের। তবে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে চান না। এ নিয়ে সম্প্রতি সুপ্রিমকোর্টে একাধিকবার তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি। টি এইচ খানের বড় ছেলে অ্যাডভোকেট আফজাল এইচ খান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ‘বাবা পরিবারের সঙ্গে যখন কথা বলেন, তখন রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে কোনো মন্তব্য করতে চান না। তবে দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে তিনি বিব্রত, বিচলিত ও অনেকাংশে হতাশ। বাবা প্রায়ই বলেন, দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও সুদৃঢ় হওয়া জরুরি। বিচার বিভাগ, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, প্রশাসনসহ সব সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলো আরও শক্তিশালী করতে হবে। চলমান আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়েও উদ্বেগ প্রকাশ করেন বাবা।’ সব সময় তিনি বলেন, ‘ব্যক্তির চেয়ে দেশ বড়।’

বাবা বলেন, ‘আমি আশাবাদী, দেশের পরিস্থিতি উত্তরোত্তর ভালো হবে। তরুণ প্রজন্ম দেশের নেতৃত্ব দেবে। দেশ আরও অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে। অনেক সময় নষ্ট হয়ে গেছে। স্বাধীনতার ৪৪ বছর পার হয়ে গেছে। এখন সুশাসন প্রতিষ্ঠা জরুরি। জনসেবার মনোভাব নিয়ে সবাইকে দেশের জন্য কাজ করতে হবে।’ হাঁটুতে দুর্বলতার কারণে প্রবীণ এই আইনজীবীর কারও সহায়তায় চলাফেরা করতে হয়। বাসায় নিজে নিজেই ওয়াকার দিয়ে চলাচল করেন। তবে বার্ধক্যজনিত কারণে শ্রবণ ও দৃষ্টিশক্তি কিছুটা লোপ পেয়েছে। তিন ছেলে আফজাল এইচ খান, ফজলে এলাহী খান ও ফায়সাল এইচ খান। আফজাল এইচ খান আর ফয়সাল এইচ খান আইনপেশায় নিযুক্ত। ফজলে এলাহী খান একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত। একমাত্র মেয়ে ডা. মাহমুদা ফাতেমা খান রাজধানীর হলি ফ্যামিলিতে চিকিত্সা পেশায় নিযুক্ত। ২০১১ সালের ১৭ মে টি এইচ খানের সহধর্মিণী মারা যান।  

১৯৬৯ সালের মার্চে তত্কালীন পূর্ব পাকিস্তানের হাইকোর্টে বিচারপতি নিযুক্ত হন টি এইচ খান। এর আগে তিনি পূর্ব পাকিস্তানে ‘সিনিয়র গভর্নমেন্ট প্লিডার’ অ্যাডভোকেট জেনারেলের (বর্তমান অ্যাটর্নি জেনারেল) দায়িত্ব পালন করেন। ’৭৩ সালে ফের আইন পেশায় ফিরে আসেন। একাধিকবার তিনি বাংলাদেশ সুপ্রিমকোর্ট বারের সভাপতি ছিলেন। ’৭৯ সালে তিনি জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। একাধারে তিনি আইন ও বিচার, শিক্ষা, ভূমি, প্রশাসন, তথ্য ও বেতার, ধর্ম, যুব ও ক্রীড়া এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৯১ থেকে ২০১৩ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন প্রবীণ এই বিচারপতি। ১৯৯৫ সালে জাতিসংঘের অধীনে আফ্রিকার রুয়ান্ডার গণহত্যার বিচারের জন্য গঠিত ইন্টারন্যাশনাল ক্রিমিনাল ট্রাইব্যুনালে (আইএসটিআর) ৫ বছর বিচারপতি ছিলেন। ২০০১ সালে সেখান থেকে ফিরে তিনি ফের আইন পেশায় যুক্ত হন। আন্তর্জাতিক আদালতে এশিয়া মহাদেশের টি এইচ খানই একমাত্র বিচারপতি। ময়মনসিংহের ফুলপুর হাইস্কুল থেকে মেট্রিকুলেশন এবং আনন্দ মোহন কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েড পাস করেন। পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে দর্শনশাস্ত্রে সর্বোচ্চ ডিগ্রি নেন। একই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকেই আইন বিভাগে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম স্থান লাভ করেন। বেশকিছু দিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও জগন্নাথ কলেজে অধ্যাপনাও করেন সুপ্রিমকোর্টের প্রবীণ এই আইনজীবী।

সর্বশেষ খবর