শনিবার, ২১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

খুলনার মনি এখন...

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

খুলনার মনি এখন...

মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি ১৯৯৪ সালে খুলনা সিটি করপোরেশনের ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার (কাউন্সিলর) নির্বাচিত হয়েছিলেন। সেই থেকে জনপ্রতিনিধিত্বের দীর্ঘ পথচলায় আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। চারবার ভারপ্রাপ্ত মেয়র হন তিনি। ২০১৩ সালে বিপুল ভোটের ব্যবধানে বিজয়ী হয়ে মেয়রের চেয়ারে বসেন। সরকারি আদেশে গত বছর মনিকে বরখাস্ত করা হয়। পুলিশের করা মামলায় কারাভোগও করেন তিনি। জামিনে ছাড়া পেয়ে এখন তার সময় কাটে দলীয় নেতা-কর্মীদের নিয়ে কাজ করে, বই পড়ে আর সাংসারিক কাজ করে।

মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মনি ক্রীড়া সংগঠকও। ২০০১ থেকে ২০০৭ সাল পর্যন্ত তিনি খুলনা জেলা ক্রীড়া সংস্থার সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা সংসদ খুলনা জেলা কমিটির ডেপুটি কমান্ডার ও পরে কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। ১৯৭৮ সালে বিএনপির রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন মনিরুজ্জামান মনি। তিনি খুলনা যুবদলের প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন দীর্ঘদিন। বর্তমানে তিনি খুলনা মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক। ১৯৯৪ সালে তিনি প্রথম খুলনা সিটির ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের কমিশনার নির্বাচিত হয়ে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। এ সময়ের মধ্যে তিনি চারবার ভারপ্রাপ্ত মেয়র হয়েছিলেন। এর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ২০০৭ সালের নভেম্বর থেকে ২০০৮ সালের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত মেয়র ছিলেন। ২০০৮ সালে মেয়র নির্বাচনে তিনি সাবেক ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী তালুকদার আবদুল খালেকের কাছে পরাজিত হন। কিন্তু ২০১৩ সালে নগরবাসী আস্থা রাখে তার প্রতি। ৬২ হাজার ভোটের ব্যবধানে তিনি খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র নির্বাচিত হন। নগরপিতা হিসেবে প্রত্যয় নেন নগরবাসীর সেবা করার। স্বাস্থ্যসেবা, শিক্ষা, পয়ঃনিষ্কাশন, জলাবদ্ধতা দূরীকরণে উদ্যোগ নেন। এরই মধ্যে তিনি হয়ে ওঠেন গণমানুষের নেতা। সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জয়ের পর তৃণমূল থেকে উঠে আসা মনিরুজ্জামান মনির চেষ্টা ছিল মানুষের সেবায় নিজেকে বিলিয়ে দেওয়ার। কিন্তু এবার ঘটে ছন্দপতন। ২০১৩ সালের ২৬ নভেম্বর পুলিশের ওপর হামলা ও নাশকতার অভিযোগে দায়ের করা মামলায় মনিকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়। তাই, ২০১৫ সালের ২ নভেম্বর স্থানীয় সরকার ও পল্লী উন্নয়ন মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। গত ২২ মার্চ তিনি খুলনা মহানগর দায়রা জজ আদালতে আত্মসমর্পণ করলে বিচারক জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠান। হাজতবাসের পর ১৮ এপ্রিল জামিনে মুক্ত হয়ে তিনি ফিরে আসেন মানুষের মাঝে। মেয়রের পদ থেকে বহিষ্কৃত হলেও মানুষের হৃদয়জয়ী মনিরুজ্জামান মনি এখনো নিজের অবস্থান ধরে রেখেছেন খুলনাবাসীর মধ্যে। নগরভবন ঠিকানা না হলেও খুলনা মহানগরীর মানুষ এখনো তাকে ‘মেয়র মনি’ বলেই উল্লেখ করে। আপদে-বিপদে ছুটে যায় তার কাছে। মামলায় মেয়র পদ থেকে বরখাস্ত হওয়াকে মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মনিরুজ্জামান মনি প্রতিপক্ষ রাজনৈতিক দলকে কোণঠাসা করার চেষ্টা বলেই মনে করেন। তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, শুধু সিটি করপোরেশন নয়, উপজেলা পর্যায়ে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের একই ভাগ্য বরণ করতে হয়েছে।

তিনি বলেন, ‘সরকার আইন করছে যেন বিরোধী দলের নেতা-কর্মীরা কেউ কোনো কাজ না করতে পারেন। এ অবস্থায় বরখাস্ত বিষয়ে আইনি লড়াই করে লাভ কী? তাই দলকে শক্তিশালী করাসহ পড়াশোনা ও সাংসারিক কাজেই ব্যস্ত থাকছি।’ জানা যায়, মনিরুজ্জামান মনির এখন সকাল-সন্ধ্যা কাটে সাধারণ মানুষকে নিয়ে। খুব ভোরে ঘুম থেকে ওঠার পর স্থানীয়ভাবে গড়ে তোলা ওয়ার্কার্স ফোরামের সঙ্গীদের নিয়ে হাঁটতে বের হন। এই ক্লাবের সদস্য বয়স্ক মানুষ থেকে কিশোর-তরুণ সবাই মনির কাছে আসতে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। গল্প করতে করতে তার সঙ্গ উপভোগ করেন। তাকে ছাড়া যেন সকালটাই পূর্ণতা পায় না। নগরভবনের ভারমুক্ত হওয়ার পর মনিরুজ্জামান মনি নিজেকে শতভাগ সঁপে দিয়েছেন রাজনীতি ও সামাজিক কর্মকাণ্ডে। মনি মনে করেন, মানুষের ভালোবাসার জন্যই তিনি ওয়ার্ড কমিশনার থেকে মেয়র হতে পেরেছিলেন। এ ভালোবাসাকে জীবনের বড় অর্জন মেনে নিয়ে তিনি নিজেকে উৎসর্গ করতে চান মানুষের কল্যাণে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর