শনিবার, ২১ মে, ২০১৬ ০০:০০ টা

সংখ্যালঘুরা প্রতিবাদমুখর

সাত দফা দাবিতে বিক্ষোভ মানববন্ধন ও স্মারকলিপি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সাত দফা দাবিতে প্রতিবাদমুখর হয়ে উঠেছেন সংখ্যালঘুরা। গতকাল ঢাকায় তিনটি ভিন্ন কর্মসূচি পালন ছাড়াও দেশের বিভিন্ন জেলায় ডিসিদের কাছে দেওয়া হয়েছে স্মারকলিপি। অভিযোগ করা হয়েছে, ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী অব্যাহতভাবে বৈষম্য, বঞ্চনা ও অবহেলার শিকার হয়ে বর্তমানে অস্তিত্ব সংকটের মুখোমুখি হয়েছে। ঢাকার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দিয়েছে ‘বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ’। প্রেসক্লাবের সামনে দুই দফায় মানববন্ধন ও সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ হিন্দু ঐক্যজোট, বাংলাদেশ সচেতন হিন্দু পরিষদ, বাংলাদেশ সনাতন ধর্মীয় সম্মিলিত পরিষদ, জাগো হিন্দু পরিষদসহ কয়েকটি সংগঠন।

জানা যায়,বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের পক্ষ থেকে গতকাল সারা দেশে স্মারকলিপি প্রদান করা হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কেন্দ্রীয়ভাবে গতকাল সকালে রাজধানীর মিন্টো রোডে ঢাকার জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সালাহ উদ্দিনের কাছে স্মারকলিপি তুলে দেয় পরিষদের ৩১ সদস্যবিশিষ্ট প্রতিনিধিদল। এতে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি লায়ন চিত্তরঞ্জন দাস, সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি মতিলাল রায়, উত্তরের সভাপতি রূপচাঁন বিশ্বাস, সেক্রেটারি অসীম কুমার রায়, ঢাকা জেলার সভাপতি ডা. আনন্দ চন্দ্র বাউল, সেক্রেটারি প্রদীপ কুমার দাস প্রমুখ। নেতারা জানান, গত বছর ৪ ডিসেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘ধর্মীয় সংখ্যালঘু ও আদিবাসীদের মহাসমাবেশে অস্তিত্ব রক্ষার প্রত্যয়ে এবং সমঅধিকার ও সমমর্যাদা প্রতিষ্ঠা’র উদ্দেশ্যে সাত দফা দাবি উপস্থাপন করে ছয় মাস সময় দেওয়া হয়। কিন্তু এর কিছুই বাস্তবায়ন না হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী বরাবর স্মারকলিপি দেওয়া হলো। এর পরও কিছুই না হলে কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।

অন্যদিকে নিরাপত্তা বিধানের জন্য অবিলম্বে সংখ্যালঘু কমিশন গঠনের দাবি জানিয়ে গতকাল জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ সমাবেশ করে জাগো হিন্দু পরিষদ। সমাবেশে বক্তারা বলেন, টাঙ্গাইলে হিন্দু দর্জি হত্যা, পঞ্চগড়ে সাধু যজ্ঞেশ্বর রায়কে হত্যা, গোপালগঞ্জে সাধু পরমানন্দ রায়কে হত্যা, রামুর বৌদ্ধমন্দিরে আক্রমণসহ সারা দেশে হাজার হাজার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপাসনালয়ে হামলা একই সূত্রে গাঁথা। কিছুদিন আগে কুমিল্লার মনোহরগঞ্জে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকাকে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ এনে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। সম্প্রতি নারায়ণগঞ্জে পিয়ার সাত্তার লতিফ উচ্চবিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে ধর্মীয় অবমাননার অভিযোগ আনা নীল নকশার অংশবিশেষ। প্রতিটি ঘটনার মতো রাষ্ট্র শিক্ষক শ্যামল কান্তিকে নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছে। এ দায় একান্ত রাষ্ট্রের। শিক্ষক লাঞ্ছনায় জড়িতদের গ্রেফতার ও দায়িত্বে অবহেলার জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার পুলিশ সুপার এবং জেলা প্রশাসকের অপসারণ দাবি করেন তারা। সারা দেশে সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের বিচারসহ সরকারের কাছে কয়েক দফা দাবি জানানো হয় সংগঠনের পক্ষ থেকে। সমাবেশে জাগো হিন্দু পরিষদের সভাপতি রণজিৎ চন্দ্র দাস, উপদেষ্টা হীরেন্দ্রনাথ বিশ্বাসসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন। প্রেসক্লাবের সামনে বাংলাদেশ জাতীয় হিন্দু মহাজোটের এক বিক্ষোভ সমাবেশে বক্তারা অভিযোগ করেন, নিত্যদিনের নির্যাতনে বাংলাদেশ থেকে হিন্দু আজ বিলুপ্তপ্রায়। প্রতিদিনই দেশের কোনো না কোনো স্থানে হিন্দু বাড়িঘর, জমিজমা দখল, ভয়ভীতি প্রদর্শন করা হচ্ছে। দেশত্যাগে বাধ্য করা, হত্যাচেষ্টা, হত্যা, ধর্মান্তকরণের শিকার হচ্ছেন সংখ্যালঘুরা। ধর্মীয় উপাসনালয়, মন্দির-প্রতিমা ভাঙচুর, সংখ্যালঘু কিশোরী অপহরণও থেমে নেই। সমাবেশে সংগঠনটির মহাসচিব অ্যাডভোকেট গোবিন্দ চন্দ্র প্রামাণিক, প্রেসিডিয়াম মেম্বার কালিপদ মজুমদার, সহ-সভাপতি ড. সোনালী দাসসহ অন্যরা বক্তব্য দেন। এর আগে প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের কৃষিজমি দখল করে যুবলীগের নেতা আতিয়ার রহমান দিপু বালু ভরাট করছে বলে অভিযোগ করেছেন জলিলপাড় ইউনিয়নবাসী। এতে অভিযোগ করা হয়, বালু ভরাটের পাশাপাশি দিপু সংখ্যালঘুদের জমিও ভরাট করছেন। জমি তার কাছে বিক্রিতে চাপ দিচ্ছেন। সংখ্যালঘুদের দেশত্যাগের হুমকি দিচ্ছেন। যুবলীগের এ নেতার ভয়ে হিন্দুরা এখন এলাকায় আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। মানববন্ধনে সংখ্যালঘুদের অভিযোগ, দিপু নিজেকে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা জাহির করে জমিজমা করায়ত্ত করার চেষ্টা করছেন। প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অমান্য করে কৃষিজমিতে ‘সাসকো ইন্ডাস্ট্রিয়াল পার্ক’ তৈরির অপচেষ্টা চালাচ্ছেন।

সর্বশেষ খবর