মঙ্গলবার, ৭ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

আত্মশুদ্ধির মাস

ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ

মাহে রমজানের চাঁদ দেখা গেছে। হিজরি সনের নবম মাস। পবিত্র রমজানের শুভ সূচনায় সবাইকে আন্তরিক অভিবাদন। আত্মশুদ্ধি আর আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অসীম রহমত ও কল্যাণের সওগাত নিয়ে রমজান আমাদের মাঝে সমুপস্থিত। সুস্বাগত মাহে রমজান। আল কোরআনে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন মাহে রমজানে রোজা পালন বা সিয়াম সাধনাকে ‘পরহেজগারি অর্জনের জন্য’ ফরজ বা অবশ্য পালনীয় বলে বিধান দিয়েছেন। বলা হয়েছে, ‘পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের জন্যও একই বিধান ছিল’। অর্থাৎ রোজা পালন শুধু কোরআনের বিধান ঘোষিত হওয়ার পর থেকে প্রবর্তিত হয়নি। আত্মশুদ্ধি ও বিধাতার নৈকট্য লাভের জন্য কৃচ্ছ তা সাধন ইবাদত হিসেবে শুধু ইসলামে পরিপালনীয় নয়, স্থান-কাল-পাত্র ভেদে সব সম্প্রদায়ের মধ্যে আত্মিক নির্বাণ লাভের এ সাধনা বিদ্যমান। ইসলামের পাঁচ প্রধান পালনীয় বিধানের মধ্যে মাহে রমজানে রোজা পালন অন্যতম। কেননা রমজানেই ‘হুদাল্লিনাছি’ (মানুষের জন্য হেদায়েত) ‘বায়্যিনাতিম-মিনাল হুদা’ (সত্পথযাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথনির্দেশ) এবং ‘ফুরকান’ (ন্যায়-অন্যায়ের পার্থক্য নির্দেশকারী) হিসেবে আল কোরআন অবতীর্ণ হয়। মহিমান্বিত মাহে রমজানের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে আল কোরআনে। বলা হয়েছে, ‘রমজান মাস এমন একটি মাস, এই মাসেই কোরআন মাজিদ নাজিল করা হয়েছে।’ (২ সুরা বাকারা আয়াত ১৮৫)। এই আয়াতের পরবর্তী বাক্যে উল্লেখ করা হয়েছে, ‘কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে যেন অবশ্যই এ মাসের রোজা পালন করে।’ তবে মাহে রমজানে রোজা পালনের আবশ্যিক এ বিধান এ মাসে ‘অসুস্থ’ আর ‘মুসাফির’দের জন্য শিথিল করে দিয়ে বলা হয়েছে, ‘অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটিও যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্টদায়ক হবে তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে।’ আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সিয়াম সাধনার এ সুযোগকে তার প্রিয় বান্দাদের জন্য ‘সহজ করতে চান’, তিনি ‘কোনো জটিলতা কামনা করেন না।’ সুতরাং দেখা যাচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ আসমানি কিতাব আল কোরআন অবতীর্ণ হওয়ার গৌরবে দীপ্ত ও তাত্পর্যমণ্ডিত মাহে রমজান। এ মাসে রোজা পালন আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের তরফ হতে এক বিশেষ নির্দেশ। কেননা, এ রোজা পালনের মধ্যে রয়েছে ‘অধিকতর কল্যাণ’ (২ সুরা বাকারা, আয়াত ১৮৪)। আত্মিক, শারীরিক, মানসিক সর্বোপরি সামাজিক কল্যাণ নিশ্চিতকারী এমন কল্যাণপ্রদ পরিপালনীয় বিষয় আর নেই। শুধু আল কোরআন নয়, মাহে রমজানে অন্য আসমানি কিতাবসমূহও অবতীর্ণ হয়েছিল। হজরত ওয়াসেলাহ ইবনে আসকা (রা.) বর্ণিত হাদিসে উল্লিখিত আছে, রসুলে করিম (সা.) বলেছেন, ‘হজরত ইবরাহিম (আ.)-এর সহিফাসমূহ রমজান মাসের প্রথম রাতে নাজিল হয়েছে। তাওরাত হজরত মুসা (আ.)-এর কাছে রমজান মাসের ছয় তারিখে দিবাগত রাতে, হজরত ঈসা (আ.)-এর কাছে ইনজিল কিতাব এই মাসের ১৩ তারিখে এবং মহানবী (সা.)-এর প্রতি কোরআন শরিফ রমজান মাসের ২৪ তারিখে নাজিল করা হয়েছে। (মসনদে আহমদ)। হজরত জাবের (রা.) বর্ণিত অপর এক হাদিসে উল্লিখিত হয়েছে, ‘জবুর’ রমজান মাসের ১২ তারিখে নাজিল হয়েছে। মাহে রমজানে রোজা পালনের অতীব তাত্পর্য নির্দেশিত হয়েছে ইমাম মুহাম্মদ ইবনে ইসমাঈল বোখারি (র.) সংকলিত এবং হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বর্ণিত হাদিসে- নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘রোজা (যাবতীয় অপকর্ম আর পাপাচার থেকে শরীর ও মনের) ঢালস্বরূপ। সুতরাং রোজাদার ব্যক্তি অশ্লীল কথা বলবে না বা জাহেলি আচরণ করবে না। কেউ তার সঙ্গে ঝগড়া করতে উদ্যত হলে বা গালমন্দ করলে সে বলবে, আমি রোজা রেখেছি। কথাটি দুইবার বলবে। যার মুষ্টিতে আমার প্রাণ সে আল্লাহর শপথ, রোজাদারের মুখের গন্ধ আল্লাহর কাছে মেশকের সুগন্ধ অপেক্ষাও উত্কৃষ্ট।’ (আল্লাহ তায়ালা বলেন,) ‘আমার উদ্দেশ্যেই পানাহার ও লোভনীয় বস্তু পরিত্যাগ করা হয়। সুতরাং রোজার পুরস্কার বিশেষভাবে আমিই দান করব। আর নেক কাজের পুরস্কার দশগুণ পর্যন্ত দেওয়া হয়ে থাকে।’

সর্বশেষ খবর