সোমবার, ৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
দীপন-টুটুলের ওপর হামলা

মাস্টারমাইন্ড সবুর গ্রেফতার

নিজস্ব প্রতিবেদক

মাস্টারমাইন্ড সবুর গ্রেফতার

প্রকাশক আহমেদুর রশীদ চৌধুরী টুটুল হত্যাচেষ্টার মামলায় জড়িত ও ফয়সাল আরেফিন দীপন হত্যার মাস্টারমাইন্ড আবদুস সবুরকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। গত শনিবার সকালে গাজীপুরের টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশ বলছে, দীপনকে হত্যা ও টুটুলকে হত্যাচেষ্টায় জড়িত জঙ্গি সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্যদের অস্ত্র সামরিক প্রশিক্ষণ দেওয়া, ঘটনাস্থল রেকি এবং অপারেশন প্ল্যান তৈরি করা ছাড়াও ঘটনার সার্বিক দায়িত্বশীল ব্যক্তি ছিল সবুর। লেখক, প্রকাশক হত্যায় জড়িত ছয়জনকে চিহ্নিত করে তাদের ধরিয়ে দিতে মে মাসে ১৮ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করে পুলিশ, যাদের মধ্যে সবুরও একজন। তার নামে পুরস্কারের অঙ্ক ছিল দুই লাখ টাকা। এর আগে সুমন নামে আরেকজনকে ১৫ জুন রাজধানীর বিমানবন্দর থেকে গ্রেফতার করে টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলায় রিমান্ডে নিয়েছিল পুলিশ। পরে সুমন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দেয়। এদিকে প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টা মামলায় গ্রেফতারকৃত আসামি সবুরকে ছয় দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দিয়েছে আদালত। গতকাল ঢাকার অতিরিক্ত মুখ্য মহানগর হাকিম মো. কায়সারুল ইসলাম এ আদেশ দেন। এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবির (দক্ষিণ) পরিদর্শক মো. বাহাউদ্দিন আসামিকে ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করে ১০ দিন রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করেন। শুনানি শেষে বিচারক ছয় দিন রিমান্ডে নেওয়ার অনুমতি দেন। গতকাল দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম বলেন, ১৫ জুন বিমানবন্দর এলাকা থেকে প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টায় সরাসরি অংশগ্রহণকারী আসামি সুমন এবং ২৩ আগস্ট টঙ্গীর চেরাগআলী থেকে প্রকাশক দীপন হত্যায় জড়িত আসামি মইনুলকে গ্রেফতার করা হয়। তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে টঙ্গী রেলস্টেশন থেকে সবুরকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি আরও বলেন, শুদ্ধস্বর প্রকাশক টুটুল হত্যাচেষ্টায় জড়িত এবং দীপন হত্যা মামলার ‘মাস্টারমাইন্ড’ সবুর। সে এবিটির সদস্যদের প্রশিক্ষণ দেওয়া, ঘটনাস্থল রেকি করা এবং হামলা পরিকল্পনা তৈরি করা ছাড়াও ওই ঘটনার সার্বিক দায়িত্বে ছিল। সে মোহাম্মদপুরে নবোদয় হাউজিংয়ে এবিটির বোমা প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বোমা তৈরির প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে এবং বাড্ডার সাঁতারকুলে এবিটির নতুন আস্তানার প্রশিক্ষক ছিল। মনিরুল ইসলাম বলেন, সবুর এবিটির সদস্যদের উদ্বুদ্ধ করার কাজ করত। জঙ্গি গোষ্ঠীগুলো তরুণদের নিশানা করে এবং অপেক্ষাকৃত কম বুদ্ধিসম্পন্নদের হত্যাকাণ্ডে ব্যবহার করে। সবুর ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও মুক্তমনা ব্লগের প্রতিষ্ঠাতা ও বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায় হত্যাকাণ্ড, জাগৃতি প্রকাশনীর দীপন হত্যাকাণ্ড ও শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর টুটুল হত্যার পরিকল্পনা করা থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সব পর্যায়েই তার সম্পৃক্ততা পেয়েছে পুলিশ। সবুরের গ্রামের বাড়ি কুমিল্লায়। সে গেন্ডারিয়ার ফরিদাবাদ কওমি মাদ্রাসার ছাত্র ছিল। গত বছর ৩১ অক্টোবর লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বরের কার্যালয়ে ঢুকে টুটুল এবং তার সঙ্গে থাকা ব্লগার তারেক রহিম ও রণদীপম বসুকে কুপিয়ে জখম করে দুর্বৃত্তরা। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে শাহবাগে জাগৃতি প্রকাশনীর কর্ণধার দীপনের রক্তাক্ত লাশ পাওয়া যায়। এ ঘটনায় শাহবাগ ও মোহাম্মদপুর থানায় দুটি মামলা হয়। সে সময় থেকেই পুলিশের সন্দেহ ছিল এবিটিকে ঘিরে।

সর্বশেষ খবর