শুক্রবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

এক শতাংশও নিরক্ষর থাকবে না : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, শিক্ষার মাধ্যমে আমরা জাতিকে অন্ধকার থেকে আলোর পথে এনেছি। এখন দেশে সাক্ষরতার হার ৭১ শতাংশ। এ হার বাড়াতে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। দেশের জনসাধারণকেও সাক্ষরতা বাড়ানোর কাজে এগিয়ে আসতে হবে। প্রত্যেকে নিজ নিজ এলাকায় সাক্ষরতা বাড়ানোর কাজ করলে দেশে এক শতাংশ লোকও নিরক্ষর থাকবে না। গতকাল রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে সাক্ষরতা দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর মাত্র ২ বছরে সাক্ষরতার হার ৪৫ শতাংশ থেকে বেড়ে ৬৫ দশমিক ৫ শতাংশে দাঁড়ায়। এ অর্জনের স্বীকৃতি হিসাবে বাংলাদেশ ‘ইউনেস্কো সাক্ষরতা পুরস্কার ১৯৯৮ লাভ করে। কিন্তু পরবর্তীতে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতা গিয়ে শিক্ষার অগ্রগতিতে আওয়ামী লীগ সরকার যেসব উদ্যোগ নিয়েছিল তার সবগুলোই বন্ধ করে দেয়।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষামন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ভারপ্রাপ্ত সচিব মোহাম্মদ আসিফউজ্জামান এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতরের মহাপরিচালক রুহুল আমিন সরকার। অনুষ্ঠানে ইউনেস্কোর মহাপরিচালক ইরিনা বোকোভার একটি শুভেচ্ছাবাণীও পড়ে শোনানো হয়। প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানের বক্তৃতা পর্ব শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানও উপভোগ করেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, সবার উদ্যোগেই আমরা এ দেশকে খুব দ্রুতই নিরক্ষরমুক্ত ঘোষণা করতে পারব। এ জন্য প্রত্যেককে নিজ নিজ অবস্থান থেকে স্ব স্ব এলাকার নিরক্ষরদের শিক্ষিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। তিনি বলেন, আমাদের জনপ্রতিনিধিরা আছেন, রাজনৈতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা আছেন, পাশাপাশি সরকারি-বেসরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার নাগরিক রয়েছেন। প্রত্যেকেই যদি উদ্যোগ নেন তাহলে আমরা আমাদের অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশটা আমাদের। আমাদেরই এই দেশকে গড়ে তুলতে হবে। যাতে আমরা মর্যাদার সঙ্গে চলতে পারি। আমরা বিশ্বসভায় মাথা উঁচু করে চলতে চাই। আর দেশকে উন্নত সমৃদ্ধ করে গড়ে তুলতে এবং দারিদ্র্যমুক্ত করতে শিক্ষা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ছাত্রছাত্রীদের মনোযোগ দিয়ে লেখাপড়া করে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে ওঠার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বইপত্র সাজিয়ে রাখার কোনো বস্তু নয়, তোমাদের পড়তে হবে। জ্ঞান অর্জন করতে হবে। আগামী দিনে তোমাদের মধ্য থেকেই দেশের নেতা-প্রধানমন্ত্রী হবে। কাজেই সেভাবেই নিজেদের তৈরি করতে হবে। শিক্ষকদের উদ্দেশে শেখ হাসিনা বলেন, আপনারাই পারেন নীতি ও মূল্যবোধের চর্চা শিখিয়ে দেশের প্রতিটি শিশুকে আদর্শ নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে। ভালো-মন্দ কিংবা ন্যায়-অন্যায় বিবেচনার জ্ঞান এবং দেশাত্মবোধের শিক্ষা দেওয়া আপনাদের দায়িত্ব। প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাক্ষর-জ্ঞানহীন মানুষ দৃষ্টিশক্তি থাকতেও এক ধরনের দৃষ্টিহীনতায় ভোগেন। তাই সবার মনের-জ্ঞানের চোখ খুলে দিতে, আপন ভালো-মন্দ বুঝে নিতে আমরা ব্যাপকভিত্তিক সাক্ষরতা কার্যক্রম গ্রহণ করেছি। তিনি প্রতি বছর ১ জানুয়ারি দেশব্যাপী বিনামূল্যে পাঠ্যপুস্তক বিতরণের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে বলেন, আমরা গত সাত বছরে বিনামূল্যে ১৯৩ কোটি বই বিতরণ করেছি। ১ জানুয়ারি ২০১৬ দেশব্যাপী ‘বই উৎসব’ পালিত হয়েছে। প্রাথমিক ও গণমুখী শিক্ষার প্রসারে সরকারের বিভিন্ন উদ্যোগ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তার সরকার ২০১০ সালে আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত জাতীয় শিক্ষানীতি প্রণয়ন করেছে। যেখানে প্রাথমিক শিক্ষা-শিক্ষার্থীর মানসিক বিকাশ, আচরণ ও ভাষা শেখানোর মৌলিক স্তর হিসেবে বিবেচিত হয়েছে।  শেখ হাসিনা বলেন, ৪৫২ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘মৌলিক সাক্ষরতা প্রকল্প ৬৪ জেলা’ নামে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদ ২০১৪ সালে দ্বিতীয় শ্রেণিতে উন্নীত করার প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সহকারী শিক্ষকের বেতন এক ধাপ বাড়ানো হয়েছে। ছাত্রছাত্রী ঝরেপড়ার হার আমরা ২৪ শতাংশে নামিয়ে এনেছি। বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে ২০০৭ সালে ঝরেপড়ার হার ছিল ৫০ দশমিক ৫ শতাংশ। ঝরেপড়া রোধকল্পে মিড-ডে মিল চালুর জন্য সমাজের বিত্তবানদের তিনি এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘মিড-ডে মিল কর্মসূচি ৯৬টি দারিদ্র্যপীড়িত উপজেলার ৩৩ লাখ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চালু করেছি। স্থানীয় জনগণকে সম্পৃক্ত করে পর্যায়ক্রমে সব স্কুলে মিড-ডে মিল চালু হবে।

সর্বশেষ খবর