রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক জাতীয় কাউন্সিল

অপেক্ষায় শত সাবেক ছাত্রনেতা

নিজস্ব প্রতিবেদক

আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে কাঙ্ক্ষিত পদের জন্য মুখিয়ে আছেন ১০০ সাবেক ছাত্রনেতা। নানাভাবে দলীয় সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন তারা। দলীয়   সভানেত্রীর কার্যালয়, গণভবন ও প্রধানমন্ত্রীর যে কোনো অনুষ্ঠানে যোগদান করছেন, সেখানে যাতায়াত বাড়িয়েছেন কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদপ্রত্যাশী এই নেতারা। কাঙ্ক্ষিত পদ পেতে দলের সিনিয়র নেতাদের বাসাবাড়িতে ধরনা দিচ্ছেন বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিপি, সহযোগী সংগঠনের সাবেক সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকরা। পদপ্রত্যাশী এমন সাবেক ৫০ জন ছাত্রনেতার তালিকা এখন আওয়ামী লীগ সভানেত্রীর টেবিলে। আকাঙ্ক্ষিত পদে কে আসছেন, তা নিয়েই আওয়ামী লীগে আলোচনা। অন্যদিকে বিগত জাতীয় সংসদ, পৌরসভা, উপজেলা ও ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় যাদের বহিষ্কার করা হয়েছিল, তারা সাধারণ ক্ষমা পেলেও এবারের কাউন্সিলে ভোটার হতে পারবেন না। তাদের দর্শক সারিতেই থাকতে হবে। আগামী ২২ ও ২৩ অক্টোবর রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ‘উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার’ স্লোগান নিয়ে অনুষ্ঠিত হবে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় কাউন্সিল। এবারের কাউন্সিলে মূল আকর্ষণ থাকছেন সাবেক ছাত্রলীগ নেতারা। আসন্ন কাউন্সিলে ডজনখানেক সাবেক ছাত্রনেতার স্থান হচ্ছে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে। কারা হচ্ছেন সেই সৌভাগ্যবান সাবেক ছাত্রনেতা, তা নিয়েই আলোচনা এখন কেন্দ্র থেকে তৃণমূলে। দলীয় সূত্রমতে, চলতি বছরের কাউন্সিলকে গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট ও আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন— এ দুটি বিষয় মাথায় রেখেই আগামীর নেতৃত্ব নির্বাচন করা হচ্ছে। এজন্য অভিজ্ঞ ও পরীক্ষিতদের স্থান দেওয়ার পাশাপাশি সাবেক ছাত্রনেতা-তরুণদের প্রাধান্য দেওয়া হবে। বর্তমানে ৭৩ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি রয়েছে। এবারের কাউন্সিলে দলের কেন্দ্রীয় কমিটির কলেবর বৃদ্ধি করে এর আকার ৮১ করা হচ্ছে। বিতর্কিতরা বাদ পড়ার পাশাপাশি সৃষ্টপদে আসতে সাবেক ছাত্রনেতারা মুখিয়ে রয়েছেন। দলীয় সূত্র জানায়, কাউন্সিলের বেশ কয়েক মাস আগে থেকেই কেন্দ্রীয় কমিটিতে পরিবর্তন আসার বিষয়টি আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা-কর্মীর মধ্যে আলোচিত হচ্ছে। দলটির একাধিক দায়িত্বশীল নেতা জানিয়েছেন, এবারের কাউন্সিলে হাইব্রিড, হঠাৎ গজিয়ে ওঠা নেতারা ঠাঁই পাবেন না কেন্দ্রীয় কমিটিতে। আগামী দিনের মাঠের রাজনীতিতে চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় দক্ষ সংগঠক, ছাত্রলীগের শীর্ষ পদে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক ছাত্রনেতা, দলের প্রতি একনিষ্ঠরাই কমিটিতে স্থান পাবেন। ২০০১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী সময়ে দলের চরম দুর্দিনে যারা সক্রিয় অবদান রেখেছেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে। একই সঙ্গে গত সাত বছরে যারা ব্যাংক, বীমা, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সরকারের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা নিয়েছেন অথচ পদে থেকে দলকে গতিশীল করতে ভূমিকা রাখতে পারেননি, তারা বাদ পড়তে পারেন।

কাউন্সিল প্রসঙ্গে একাধিক নেতা জানান, দলের অনেক নেতাই এখন বয়সের ভারে ন্যুব্জ। আগের মতো দলে সময় দিতে পারছেন না তারা। ভিশন-২০৪১ বাস্তবায়নে দলকেই মুখ্য ভূমিকা পালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে প্রযুক্তিতে স্বনির্ভর তরুণ নেতৃত্ব প্রয়োজন বলে মনে করেন দলের হাইকমান্ড। এক কথায় দলের ২০তম জাতীয় কাউন্সিলের মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতে নতুন নেতৃত্বের জোয়ার তৈরি হবে। ২০০৯ সালে ক্ষমতায় আসার পর দলের প্রবীণদের পাশাপাশি সরকার পরিচালনায় মন্ত্রিসভাসহ বিভিন্ন দফতরে তরুণদের জায়গা দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দায়িত্বপ্রাপ্ত তরুণ সদস্যরা যোগ্যতা প্রমাণে প্রবীণদের চেয়ে পিছিয়ে নেই। বরং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য দেখিয়েছেন। এরই ধারাবাহিকতায় দলেও এর প্রতিফলন চান সভানেত্রী শেখ হাসিনা। জানা গেছে, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ছাড়াও বঙ্গবন্ধুর আদর্শের রাজনীতির পরীক্ষিত, ত্যাগী, প্রবীণ ও মরহুম নেতাদের উত্তরসূরি এবং বিগত সময়ে সারা দেশে জনপ্রিয়, রাজপথ দাবড়ানো একঝাঁক তরুণ নেতাকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে ঠাঁই দেওয়া হবে। সম্প্রতি ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগের পূর্ণাঙ্গ কমিটি ঘোষণা করা হয়েছে। এতে বিতর্কিতদের বাদ দিয়ে স্থান দেওয়া হয়েছে ছাত্রলীগের সাবেক নেতাদের; যার অধিকাংশই অপেক্ষাকৃত তরুণ।

মহানগরের দুই কমিটিতে সাবেক ছাত্রনেতাদের স্থান হওয়ায় কেন্দ্রীয় কমিটিতে পদ পেতে আশায় বুক বেঁধেছেন ছাত্রলীগের সাবেক শীর্ষ নেতারা। তারা দলের হেভিওয়েট নেতাদের বাসাবাড়ি, অফিসে যাওয়া-আসা বাড়িয়ে দিয়েছেন। নানাভাবে দলীয় সভানেত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছেন। ২০০১-২০০৬ সাল এবং ১/১১-এর প্রেক্ষাপটে তাদের কী ভূমিকা তা সামাজিক মাধ্যমে তুলে ধরছেন। দলীয় কর্মসূচিতে অংশগ্রহণের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডেও সম্পৃক্ততা বাড়িয়েছেন কয়েক গুণ। সাধারণ ক্ষমা পেলেও ২২-২৩ অক্টোবর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে অনুষ্ঠেয় আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে দলের বহিষ্কৃত নেতাদের থাকতে হবে দর্শক সারিতে। সম্মেলনে কাউন্সিলর হওয়ার সুযোগও পাচ্ছেন না তারা। আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কাউন্সিলররাই দলের নতুন নেতা নির্বাচন করেন। ৬ সেপ্টেম্বর আওয়ামী লীগের সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ফোরাম কার্যনির্বাহী সংসদসহ উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে দলের বহিষ্কৃত নেতাদের ক্ষমা করার সিদ্ধান্ত হয়। দলটির একজন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জানিয়েছেন, বহিষ্কৃতরা দলে ফেরার এবং কেন্দ্রীয় কাউন্সিল অধিবেশনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলেও কাউন্সিলর হতে পারবেন না। তাদের দর্শক সারিতেই বসতে হবে।

সর্বশেষ খবর