রবিবার, ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা

ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব সার্কে প্রভাব ফেলবে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভারত-পাকিস্তান দ্বন্দ্ব সার্কে প্রভাব ফেলবে

অধ্যাপক এহসানুল হক

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এহসানুল হক বলেছেন, ‘ভারত পাকিস্তান যুদ্ধাংদেহী অবস্থান সার্কে কিছুটা নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে প্রভাবশালী দেশ হলো ভারত ও পাকিস্তান। সার্ককে কার্যকর করতে এ দুই দেশের দ্বন্দ্ব প্রশমন জরুরি। অবশ্য ১৯৮৫ সালে সার্ক গঠিত হলেও এই দুই দেশের বৈরী অবস্থানের ফলে সার্ক তেমন কোনো কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারেনি। তবে সার্কের অস্তিত্ব বিলীন হয়নি। গত কয়েক দশক যাবৎ সার্ক তার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে সক্ষম হয়েছে।’

ভারত-পাকিস্তানের সাম্প্রতিক উত্তপ্ত পরিস্থিতি নিয়ে গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে টেলিফোনে আলাপচারিতায় এসব কথা বলেন আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিষয়ক এ বিশেষজ্ঞ। তিনি বলেন, ‘বর্তমান পরিস্থিতিতে  ভারত-পাকিস্তানের এ ধরণের টেনশন নতুন নয়। এটা বহুদিন থেকেই চলে আসছে। সম্প্রতি কাশ্মিরের উরিতে সন্ত্রাসী হামলায় ভারতের কয়েকজন সেনা সদস্য নিহত হওয়ার ঘটনায় দেশটিতে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। প্রতিশোধ নিতে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ওপর চাপ বাড়ছে। তবে ভারতের গণতন্ত্র ঐতিহাসিক। সেই গণতন্ত্র চলমান পরিস্থিতিকে উৎসাহ দেবে বলে মনে হয় না। বহির্বিশ্বে ভারতের ইমেজ যথেষ্ট ইতিবাচক। তাই আমার মনে হচ্ছে, তারা এ মুহুূর্তে সংযমই প্রদর্শন করবে।’ অধ্যাপক এহসানুল হক বলেন, ‘ভারতের রাজনৈতিক মহল থেকে চাপ রয়েছে, পাকিস্তানের ব্যাপারে কঠোর মনোভাব দেখাতে হবে। কারণ, পাকিস্তানের যে আচরণ, তা ভারতের কাছে এ মুহূর্তে গ্রহণযোগ্য নয়। তারপরও আমার মনে হয় না, ভারত এ মুহূর্তে যুদ্ধে জড়াবে। যদি ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কের আরো অবনতি হয়, তাহলে সীমান্তে উত্তেজনা ও সংঘর্ষেই সীমিত থাকবে বলে মনে হয়।’

আসন্ন সার্ক সম্মেলনে এর কোনো প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সার্কের কার্যক্রম শুরু থেকেই বির্তকের উর্দ্ধে নয়। সার্ক আটটি দেশের পারস্পরিক মনোভাবকে লালন করে। কিন্তু ভারত-পাকিস্তানের দূরত্ব যতদিন না কমে আসবে, ততদিন সার্ককে একটি কার্যকর আঞ্চলিক সংগঠন হিসেবে কার্যক্রম চালানোর ক্ষেত্রে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে।’ আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক অধ্যাপক এহসান বলেন, ‘এখনকার যে পরিস্থিতি, সেটা আন্তর্জাতিক রাজনীতিতে স্বাভাবিক ঘটনা। এ কারণে ভারতের প্রধানমন্ত্রী যদি ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় সার্ক সম্মেলনে যোগ নাও দেন, তাতে সার্কের ভবিষ্যৎ অন্ধকার তা বলা যাবে না। সার্ক তার নিজস্ব গতিতে চলবে। সার্কে বাংলাদেশের কমিটমেন্ট সবচেয়ে বেশি। ভারত পাকিস্তানের মনোভাব যতই উত্তপ্ত থাকুক, সার্কের ক্ষেত্রে ব্যাপক নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমার মনে হয় না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এই অধ্যাপক বলেন, ‘ভারত-পাকিস্তানের বৈরি আচরণ ১৯৮৫ সালেও ছিল। এত কিছুর পরও কিন্তু সার্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এখনো পর্যন্ত তার প্রাসঙ্গিকতা হারিয়ে যায়নি। যদিও অনেকেরই ধারণা ছিল, সার্ক বিলুপ্ত হয়ে যাবে।  কিন্তু এত বৈরিতার পরও বোঝা যাচ্ছে, সার্কের প্রতি তাদের যে কমিটমেন্ট, সেখান থেকে তারা সরে আসেনি।’তিনি বলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার রাজনীতিতে ভারত-পাকিস্তান এক ধরনের অসমতা আছে। সামরিক, অর্থনীতি ও রাজনীতিতে এই অসমতা দীর্ঘদিন থেকেই। তাদের এ দ্বন্দ্ব সহসাই নিরসন হবে বলে মনে হয় না।  তবে আমার মনে হয়, ভারত পাকিস্তানকে দুর্বল রাষ্ট্র হিসেবেও দেখতে চায় না। দক্ষিণ এশিয়ার শান্তি ও স্থিতিশীলতার জন্য পাকিস্তানকেও ভারত একটি কার্যকর অবস্থানে দেখতে চায়।’ অধ্যাপক এহসানুল হক বলেন, ‘ভারত ও পাকিস্তানের এই উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে বাংলাদেশকে নিরাপদ অবস্থানে থাকতে হবে। কোনো দেশের পক্ষ নেওয়ার সুযোগ নেই। তবে অবশ্যই আমরা সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। সন্ত্রাসবাদ একটি আন্তর্জাতিক সমস্যা। সেখানে শুধু বাংলাদেশই নয়, ভারত-পাকিস্তানসহ সব দেশেরই অবস্থানই এর বিরুদ্ধে।’

সর্বশেষ খবর