শিরোনাম
মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

কে এম নুরুল হুদা সিইসি

নতুন নির্বাচন কমিশন ঘোষণা । কমিশনার হলেন মাহবুব তালুকদার রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম, শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী

গোলাম রাব্বানী ও রফিকুল ইসলাম রনি

কে এম নুরুল হুদা সিইসি

নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন সাবেক সচিব কে এম নুরুল হুদা। এ ছাড়া নতুন চার নির্বাচন কমিশনার হলেন— সাবেক অতিরিক্ত সচিব মাহবুব তালুকদার, সাবেক সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ বেগম কবিতা খানম এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদৎ হোসেন চৌধুরী। এই প্রথম একজন নারী কমিশনার পেল ইসি। নতুন ইসি নিয়োগে সার্চ কমিটির দশটি নামের সুপারিশ থেকে পাঁচজনের এই ইসি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ গঠন করেছেন বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম গত রাতে এক সংবাদ সম্মেলনে জানান। এ ছাড়া সিইসি ও চার নির্বাচন কমিশনার নিয়োগে রাতে আলাদা প্রজ্ঞাপনও জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, সংবিধানের ১১৮ (১) অনুচ্ছেদে প্রদত্ত ক্ষমতাবলে মহামান্য রাষ্ট্রপতি প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ করেছেন। রাষ্ট্রপতি গঠিত সার্চ কমিটির সুপারিশে সিইসি পদে কে এম নুরুল হুদার সঙ্গে ছিল সাবেক মন্ত্রিপরিষদ সচিব আলী ইমাম মজুমদারের নাম। ২০০৮ সালে অবসরে যাওয়া আলী ইমাম এবারও বাদ পড়লেন। এর আগেও ২০১২ সালে সিইসি পদের জন্য সার্চ কমিটি আলী ইমাম মজুমদারের নাম সুপারিশ করেছিল। তবে শেষ পর্যন্ত নিয়োগ পেয়েছিলেন কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ।

নতুন সিইসি ১৯৭৩ ব্যাচের সরকারি কর্মকর্তা নুরুল হুদার বাড়ি পটুয়াখালীতে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং পরিবেশ ও বন মন্ত্রণালয়, সংসদ সচিবালয়ের যুগ্মসচিব ও অতিরিক্ত সচিবের দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার আমলে দীর্ঘদিন ওএসডি থাকার পর ২০০৬ সালে সচিব হিসেবে অবসরে যান তিনি। সার্চ কমিটির সুপারিশে নির্বাচন কমিশনার হিসেবে আরও যে চারটি নাম ছিল তারা হলেন পরিকল্পনা কমিশনের সাবেক সদস্য আবদুল মান্নান, ড. তোফায়েল আহমেদ, অধ্যাপক ড. জারিনা রহমান খান ও অধ্যাপক নাজমুল আহসান কলিমুল্লাহ। এদিকে, সিইসি পদে কে এম নুরুল হুদা ও আলী ইমাম মজুমদারের নামের প্রস্তাব কোন রাজনৈতিক দলের কাছ  থেকে এসেছিল, তা স্পষ্ট করে বলতে পারেননি মন্ত্রিপরিষদ সচিব, যার দফতর সার্চ কমিটিকে সাচিবিক সহায়তা দিয়েছিল। সাংবাদিকদের প্রশ্নে মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘এখন আমার মনে আসছে না, তবে বড় দুটি দল (আওয়ামী লীগ, বিএনপি) নয়, অন্য দল।’ নতুন কমিশনারদের মধ্যে সেনা কর্মকর্তা শাহাদৎ হোসেন ও কবিতা খানমের নাম ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের কাছ থেকে এসেছিল বলে তিনি জানান। বিএনপির প্রস্তাব করা পাঁচটি নাম থেকে দুজন মাহবুব তালুকদার ও অধ্যাপক তোফায়েল আহমেদের নাম সার্চ কমিটির ১০ জনের তালিকায় এসেছিল বলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব জানান। তার মধ?্য থেকে একজন পেয়েছেন রাষ্ট্রপতির মনোনয়ন। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ আগেই জানিয়েছিল তারা রাষ্ট্রপতির সিদ্ধান্ত মেনে নেবে। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন বিদায় নিচ্ছে আগামীকাল; তারপর আসবে কে এম নুরুল হুদার ইসি। এটি হবে বাংলাদেশের দ্বাদশ ইসি। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশনের বিদায়ের ক্ষণ ঘনিয়ে আসায় সাংবিধানিক এখতিয়ার অনুযায়ী নতুন ইসি গঠনের উদ্যোগ নেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।

রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের পর ২৫ জানুয়ারি ছয় সদস্যের সার্চ কমিটি গঠন করেন তিনি। বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন এ কমিটিতে সদস?্য করা হয় বিচারপতি ওবায়দুল হাসান, পিএসসির চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক, কম্পট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল (সিএজি) মাসুদ আহমেদ, অধ্যাপক সৈয়দ মন্জুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ উপাচার্য শিরীন আখতারকে। সার্চ কমিটিকে ১০ দিনের মধ্যে সুপারিশ জমা দিতে বলা হয়। রাজনৈতিক দলগুলো থেকে নামের প্রস্তাব নিয়ে বিশিষ্টজনদের সঙ্গে দুই দফা বৈঠকের পর তারা ২০ জনের নামের তালিকা করেন। গতকাল বিকালে শেষ বৈঠকে ১০ জনের নাম চূড়ান্ত করে তারা তালিকাসহ নিজেদের কাজের প্রতিবেদন নিয়ে সন্ধ্যায় বঙ্গভবনে যান এবং তা তুলে দেন রাষ্ট্রপতির হাতে। এরপর মন্ত্রিপরিষদ সচিব শফিউল আলম সচিবালয়ে সাংবাদিকদের জানান, রাত ৯টায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে সংবাদ সম্মেলন করে বিস্তারিত জানানো হবে। এর মধ্যে তোড়জোড় শুরু হয় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে সংবাদ সম্মেলনে মন্ত্রিপরিষদ সচিব বলেন, ‘সার্চ কমিটি সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে। সেই প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ প্রক্রিয়ায় কার্যক্রম গ্রহণ করি এবং মহামান্য রাষ্ট্রপতির স্বাক্ষর শেষে এ কার্যক্রম চূড়ান্ত করা হয়েছে।’ এরপর সার্চ কমিটি প্রস্তাবিত ১০ জনের নাম পড়ে শুনিয়ে তিনি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং চারজন নির্বাচন কমিশনারের নাম ঘোষণা করেন। শফিউল আলম বলেন, ‘আশা করছি নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে কোনো বিতর্ক হবে না।’ একটি রাজনৈতিক দল নির্ধারিত সময়ের পরে সার্চ কমিটিতে নাম জমা দিয়েছিল জানিয়ে তিনি বলেন, মোট ১২৮টি নাম সার্চ কমিটিতে জমা পড়ে। পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশনে বড় বড় সব দলের (প্রস্তাবিত) নামই আছে বলে জানান শফিউল আলম। সার্চ কমিটির চূড়ান্ত সুপারিশে কোন দল কোন কোন নামগুলো প্রস্তাব করেছিল— এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তা রেকর্ড দেখে বলতে হবে, আমার মেমোরিতে নেই।’ রাজনৈতিক দলগুলোর পক্ষ থেকে সার্চ কমিটিতে জমা দেওয়া ব্যক্তিদের নির্দলীয় বলেই মনে করছেন শফিউল আলম। কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ নেতৃত্বাধীন বর্তমান নির্বাচন কমিশনের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামীকাল। দায়িত্ব নেবে নতুন কমিশন। তাদের অধীনেই হবে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন।

দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালনের অঙ্গীকার নতুন সিইসির : প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পেয়ে সাংবিধানিক এই দায়িত্ব নিরপেক্ষভাবে পালনের অঙ্গীকার করেছেন কে এম নুরুল হুদা। ইসি নিয়োগের সার্চ কমিটির তালিকা থেকে গতকাল রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ পরবর্তী সিইসি হিসেবে সাবেক সচিব নুরুল হুদাকে নিয়োগ দেন। গতকাল তাত্ক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, রাষ্ট্রপতি আমাকে সাংবিধানিক এ গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগ দেওয়ায় কৃতজ্ঞ। সাংবিধানিক দায়িত্বটি আমি নিরপেক্ষভাবে সংবিধান ও আইন মেনে পালন করব। তিনি বলেন, আমি আগে দায়িত্ব নিই, তারপর সবার সঙ্গে বসব। সার্বিক কার্যক্রম পর্যালোচনা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নিয়ে আপনাদের সঙ্গেও কথা বলব।

কাল শেষ ইসির মেয়াদ : বর্তমান নির্বাচন কমিশনকে বিদায় ও নতুন ইসিকে বরণ করতে প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়। কাল ৮  ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্তি হচ্ছে বর্তমান নির্বাচন কমিশনের। এ উপলক্ষে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ  নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশনের বিদায় সংবর্ধনা দেবে ইসি সচিবালয়। বিদায়ের আগে আজ রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করবেন তারা। ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছে এ কমিশন। গতকাল নির্বাচন কমিশনাররা নিজ নিজ ফাইলপত্র গুছিয়ে নিয়েছেন। অনেকে তাদের নিজের স্মৃতিমূলক বিভিন্ন ছবিও নিজ বাসায় নিয়ে গেছেন। একই সঙ্গে তারা সরকারি বাসা ছাড়ারও প্রস্তুতি নিয়েছেন বলে জানা গেছে। বিদায়ের আগে কমিশন আজ সকালে সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাবেন। আর বিকালে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে দেখা করবেন।

এ বিষয়ে ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান জানান, ইতিমধ্যে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে সাক্ষাতের সময়সূচি চূড়ান্ত হয়েছে। আর ৮  ফেব্রুয়ারি বর্তমান কমিশন বিদায় নেবে। এর মধ্যে সিইসি কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ, তিন নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ আবদুল মোবারক, আবু হাফিজ, জাবেদ আলী কাল ৮ ফেব্রুয়ারি এবং আরেকজন নির্বাচন কমিশনার  মো. শাহনেওয়াজ ১৪ ফেব্রুয়ারি পাঁচ বছর মেয়াদ পূর্ণ করবেন।

এর আগে প্রথমবারের মতো দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করে রাষ্ট্রপতি সার্চ কমিটির মাধ্যমে বাছাই করে ২০১২ সালে বর্তমান ইসির নিয়োগ দেন। ইসি সচিবালয় জানিয়েছে, বিদায়ের আগে বর্তমান সিইসি একটি সংবাদ সম্মেলনও করতে পারেন। এ জন্য ইসি সচিবালয় বিগত পাঁচ বছরের ইসির বিভিন্ন কার্যক্রমের তালিকা প্রস্তুত করছে।

 এর মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচনসহ সর্বশেষ জেলা পরিষদ নির্বাচনের বিভিন্ন তথ্য তুলে ধরা হতে পারে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর