বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ষোড়শ সংশোধনী শুনানির জন্য ১২ অ্যামিকাস কিউরি

নিজস্ব প্রতিবেদক

উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে আপিলের শুনানিতে আদালতকে সহযোগিতার জন্য অ্যামিকাস কিউরি নিয়োগ করা হয়েছে। একই সঙ্গে শুনানি ৭ মার্চ পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে। গতকাল প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বে আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ এ আদেশ দেয়। এ ছাড়া মামলার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে লিখিত বক্তব্য দাখিল করতে বলা হয়েছে। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম ও রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মনজিল মোরসেদ। অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ পাওয়া ১২ জন সিনিয়র আইনজীবী হলেন—বিচারপতি টি এইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, এ এফ হাসান আরিফ, রোকনউদ্দিন মাহমুদ, আবদুল ওয়াদুদ ভূঁইয়া, এ জে মোহাম্মদ আলী, এম আই ফারুকী, ফিদা এম কামাল, আজমালুল হোসেন কিউসি ও শফিক আহমেদ।

এ-বিষয়ক রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে দেওয়া রায়ে ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট। ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ বলে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের পর তা চূড়ান্ত নিষ্পত্তির জন্য রিট আবেদনকারীপক্ষে গত বছরের ২৮ নভেম্বর আপিল বিভাগে আবেদন করা হয়। অন্যদিকে হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে।

পরে আপিল বিভাগ ওই আবেদনের ওপর ৫ জানুয়ারি শুনানির দিন ধার্য করে। ওই দিন রাষ্ট্রপক্ষ চার সপ্তাহ সময় চেয়ে আবেদন করে। চেম্বার আদালত ৮ ফেব্রুয়ারি দিন ধার্য করে। এ অবস্থায় গতকাল নির্ধারিত দিনে রাষ্ট্রপক্ষ আবারও আট সপ্তাহ সময়ের আবেদন করে। গতকালের শুনানিতে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম বলেন, ‘মামলাটি অনেক গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া হাই কোর্টের রায় অনেক বড়। এর সঙ্গে অনেক আইনি বিষয় জড়িত। প্রস্তুতির জন্য সময় প্রয়োজন।’ এ পর্যায়ে আদালত বলেন, ‘দেশের বিচার বিভাগের জন্য আইন থাকবে না? আইন করার জন্য আপনারাই তো অস্থির হয়ে গেলেন। এখন আবার পেছনে চলে যাচ্ছেন। সময় চাইছেন। আপনারা কি ২০১৭ সালও পার করতে চান?’ জবাবে অ্যাটর্নি জেনারেল আবারও সময়ের প্রয়োজন বলে জানান। আদালত বলে, ‘বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের শৃঙ্খলার বিষয়ে দেশে কোনো আইন নেই। একটি দেশে বিচার বিভাগ এভাবে থাকবে? বিচার বিভাগকে ফেলে রেখেছেন। একটা দেশ এভাবে চলতে পারে না।’ এ পর্যায়ে আইনজীবী মনজিল মোরসেদ বলেন, ‘উচ্চ আদালতের বিচারকদের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিষ্পত্তির কোনো আইন নেই। তাই এটা দ্রুত নিষ্পত্তি হওয়া প্রয়োজন।’ এ পর্যায়ে আদালত এক সপ্তাহ সময় দিতে চাইলে অ্যাটর্নি জেনারেল বলেন, ‘আট সপ্তাহ সময় প্রয়োজন। এক সপ্তাহে হবে না।’ তখন আদালত বলে, ‘হাই কোর্টে আপনারা শুনানি করেছেন। সব আপনার জানা। তাই আপনি লিখিতভাবে যুক্তিতর্ক দাখিল করবেন। আপনারা (উভয় পক্ষ) এক ঘণ্টা করে শুনানি করবেন। আর আমরা অ্যামিকাস কিউরির বক্তব্য শুনব। ১২ জন সিনিয়র আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দিচ্ছি। তারাও লিখিতভাবে তাদের বক্তব্য দাখিল করবেন। তাদের বক্তব্য ১০ মিনিট করে শুনব।’ এ পর্যায়ে আদালত ২৭ ফেব্রুয়ারি শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করলে অ্যাটর্নি জেনারেল আবারও বলেন, ‘আমি আট সপ্তাহ সময় চেয়েছি। আর আপনারা দিচ্ছেন দুই সপ্তাহ।’ আদালত বলে, ‘রাষ্ট্রপক্ষে কোনো কিছু আটকে থাকে না। আপনারা হাই কোর্টে বিস্তারিত শুনানি করেছেন। আপনি সব জানেন। আপনি সব বিষয়ে দক্ষ। আপনি অনেক বড় মাপের আইনজীবী। সরকারের আস্থাভাজন। আট বছর ধরে এ পদে আছেন। আমাদের কোনো সমস্যা হলে আমরাও আপনাকে ডাকি। আপনার ওপর আস্থা আছে। আপনি যুদ্ধাপরাধের মামলা, জমিজমা-সংক্রান্ত মামলা, ডেথ রেফারেন্স, সাংবিধানিক মামলা—সবই করেন। আপনি একজন দক্ষ আইনজীবী।’ পরে ৭ মার্চ শুনানির পরবর্তী দিন ধার্য করা হয়।

২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর উচ্চ আদালতের বিচারপতিদের অপসারণের ক্ষমতা সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী আনা হয়। বিলটি পাসের পর ২২ সেপ্টেম্বর তা গেজেট আকারে প্রকাশ করা হয়। সংবিধানের এ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাই কোর্টে একটি রিট আবেদন করেন। প্রাথমিক শুনানির পর ষোড়শ সংশোধনী কেন অবৈধ ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না তা জানতে চেয়ে রুল জারি করে হাই কোর্ট। রুলের শুনানি শেষে গত বছরের ৫ মে সংখ্যাগরিষ্ঠ মতের ভিত্তিতে দেওয়া রায়ে ষোড়শ সংশোধনীকে অবৈধ ঘোষণা করে হাই কোর্ট। হাই কোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি পেয়ে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে।

সর্বশেষ খবর