শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ইটস পলিটিক্যাল গেইম, ফাঁকা মাঠে গোল তো দেবেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইটস পলিটিক্যাল গেইম, ফাঁকা মাঠে গোল তো দেবেই

কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ

বিগত পাঁচ বছর সাফল্যের সঙ্গে কাজ করার কথা জানিয়ে বিদায় নিলেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ। বর্জন-সহিংসতা-নৈরাজ্যের মধ্যে দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেছেন, ৫ জানুয়ারির নির্বাচন না হলে দেশে অরাজক ও সাংবিধানিক সংকটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হতো। বিএনপির বর্জনের মুখে দশম সংসদ নির্বাচনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতার রেকর্ডের বিষয়ে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ বলেছেন, ‘বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন আইনে রয়েছে। এটা শুধু আমাদের দেশের আইনে নয়, উন্নত দেশের আইনেও রয়েছে। এতে নির্বাচন কমিশনের করার কিছুই নেই। ইটস আ পলিটিক্যাল গেইম। পলিটিকসে আপনি যদি নির্বাচনে না নামেন, অন্য লোক তো ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে চলেই যাবে।’ গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে বিদায়ী ব্রিফিংয়ে তিনি এসব কথা বলেন। গতকাল বেলা ৩টার দিকে হাসি হাসি মুখে সঙ্গী নির্বাচন কমিশনার জাবেদ আলী ও মো. শাহনেওয়াজকে নিয়ে নির্বাচন ভবনের মিডিয়া সেন্টারে শেষ ব্রিফিংয়ে আসেন বিদায়ী সিইসি। এক পাশে রাখেন ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লাহকে, অন্য পাশে অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমানকে। পরে যোগ দেন নির্বাচন কমিশনার আবু হাফিজ। তবে নির্বাচন কমিশনার আবদুল মোবারক উপস্থিত ছিলেন না। বিগত পাঁচ বছর মেয়াদে সাংবিধানিক এ দায়িত্ব পালনকালে নানা কার্যক্রম তুলে ধরে কাজী রকিব জানান, অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হলেও সফলভাবে তা পার করেছেন তারা। বিশেষভাবে দশম সংসদ নির্বাচনের পূর্বাপর পরিস্থিতি স্মৃতিতে কঠিনভাবে দাগ কেটে রয়েছে তাদের। পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে অনেকটা দৃঢ়তা ছিল তার চোখেমুখে। সিইসি বলেন, ‘সব ধরনের প্রচেষ্টার পরও যখন সমঝোতায় পৌঁছানো গেল না, তখন শেষ মুহূর্তে আর কোনো উপায় না থাকায় জাতির ওই ক্রান্তিলগ্নে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা বজায় রাখার জন্য যেসব রাজনৈতিক দল গণতান্ত্রিক উপায়ে জনগণের ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতা বদলের পক্ষে ছিল, তাদের অংশগ্রহণের মাধ্যমে ৫ জানুয়ারি সংসদ নির্বাচন করা ছাড়া আমাদের আর কোনো গণতান্ত্রিক পথ খোলা ছিল না।’ নির্বাচন বর্জনকারী দলগুলোর নির্বাচন ভণ্ডুল করার প্রচেষ্টায় প্রচুর জানমালের ক্ষতি হয় বলে উল্লেখ করেন কাজী রকিব। নিজেদের দুঃসময়ের বিষয়টি অন্যদের সঙ্গে কখনো প্রকাশ না করলেও বিদায়ের সময় ৫ জানুয়ারির সংকটটি তুলে ধরার চেষ্টা করেন তিনি। তিনি বলেন, এ রকম সহিংস পরিবেশে নির্বাচন পরিচালনা করা কী যে দুষ্কর, তা খুব কম লোকই অনুধাবন করতে পারবেন। নানা সমালোচনা-বিতর্কের মধ্যেও কোনো চাপ, ফোনকল পাননি বলেও উল্লেখ করেন তিনি। বর্তমান কমিশন পাঁচ বছর মেয়াদে সাড়ে সাত হাজার ভোট করেছে। এর মধ্যে সংসদ নির্বাচন ও স্থানীয় সরকারের নির্বাচনের নানা পরিস্থিতিও তুলে ধরেন তিনি। তবে বরাবরের মতো শুরু ও শেষের নির্বাচনগুলো সুষ্ঠুভাবে হয়েছে বলে তিনি জানান। বাকি নির্বাচনগুলোও কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ হয়েছে বলে দাবি করেন কাজী রকিব। নির্বাচন বেশ সাহসিকতার সঙ্গে করতে হয়েছে জানিয়ে বিদায়ী সিইসি বলেন, ‘এ সময় নির্বাচন না হলে দেশে যে অরাজক সংকট, অসাংবিধানিক পরিস্থিতির সৃষ্টি হতো, তা আপনারা তা কল্পনাও করতে পারবেন না। তা সত্ত্বেও কমিশন অত্যন্ত সাহসিকতার সঙ্গে পরিস্থিতি মোকাবিলা করে নির্বাচন অনুষ্ঠানে সক্ষম হই।’ বর্তমান ইসিকে সরকারের আজ্ঞাবহ, অথর্ব, অপদার্থ ও মেরুদণ্ডহীন মন্তব্য শুনতে হয়েছে। এসব মন্তব্যকে রাজনৈতিক বলে উড়িয়ে দিতেন বলে জানান সিইসি। সমালোচনার মধ্যে বর্তমান কমিশন সতর্ক ছিল উল্লেখ করে বিদায়ী সিইসি বলেন, ‘শুরুতেও বলেছি, নিরপেক্ষতা কাজে প্রমাণ করব। পাঁচ বছর মেয়াদে আমরা অনেক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছি এবং তা সফলভাবে অতিক্রম করেছি। কখনো কোনো ধরনের চাপ পাইনি। আজ বলতে পারি, আমরা জাতির সামনে নিজেদের নিরপেক্ষতা প্রমাণ করতে পেরেছি।’ এ ছাড়া আগামী নির্বাচন কমিশনের প্রতি শুভ কামনা রেখে সিইসি বলেন, নতুন ইসি সদস্যরা অভিজ্ঞ ও সম্মানিত ব্যক্তি। কাজের মধ্য দিয়ে তাদের মূল্যায়ন করা উচিত।

বিদায়ী সিইসি বলেন, ‘আমরা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে দুর্বল অবস্থায় নিয়ে যাইনি। দেশে কথায় কথায় মারামারি বেড়ে গেছে। এটা এক ধরনের সামাজিক অবক্ষয়। মানুষের মধ্যে সহিষ্ণুতার অভাবের কারণে হানাহানি বেড়েছে। তবে এখন ধীরে ধীরে পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘ইদানীং রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অনেক ইতিবাচক বিষয় লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আশ?া করি দলগুলোর মধ্যে গণতান্ত্রিক চর্চা বাড়বে। একটি নির্বাচন কখনো লাথি মেরে, বেয়নেট দিয়ে খুঁচিয়ে সুষ্ঠু করা যায় না। এ জন্য গণতান্ত্রিক চর্চার উন্নয়ন দরকার।’

কাজী রকিবের এই কমিশন ২০১২ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি দায়িত্ব নেওয়ার পর তাদের পুরো মেয়াদই কেটেছে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও বৈরী পরিবেশের মধ্যে। পাঁচ সদস্যের কমিশনে সিইসি ও তিন নির্বাচন কমিশনারের গতকাল ছিল শেষ কার্যদিবস। নির্বাচন কমিশনার মো. শাহনেওয়াজ বিদায় নেবেন ১৪ ফেব্রুয়ারি। নতুন সিইসি কে এম নুরুল হুদা নেতৃত্বাধীন পাঁচ সদস্যের ইসি ১৫ ফেব্রুয়ারি শপথ নিয়েই যোগ দেবেন নির্বাচন কমিশনে, যাদের অধীনে অনুষ্ঠিত হবে একাদশ সংসদ নির্বাচন।

সর্বশেষ খবর