শিরোনাম
রবিবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

আগামী নির্বাচনে পরীক্ষামূলক ই-ভোটিং

স্বচ্ছতা আসবে ভোটিং কার্যক্রমে । জাল ভোট থাকবে না । ফিঙ্গার প্রিন্ট ও চোখের আইরিশ সুরক্ষা ব্যবস্থা । কেন্দ্রের বাইরে ডিজিটাল বোর্ডে দেখানো হবে ভোটের সংখ্যা

গোলাম রাব্বানী

আগামী নির্বাচনে পরীক্ষামূলক ই-ভোটিং

আগামী একাদশ সংসদ নির্বাচনে পরীক্ষামূলকভাবে চালু হচ্ছে ই-ভোটিং বা ইভিএম। দেশের কিছু এলাকায় আংশিকভাবে ই-ভোটিং পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা নিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এ জন্য আগের ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) বাদ দিয়ে নতুন করে উন্নত মানের ডিজিটাল ভোটিং মেশিন (ডিভিএম) তৈরির জন্য কারিগরি কমিটি গঠন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে কমিটি একটি বৈঠকও করেছে।

কারিগরি কমিটির সদস্যরা বলছেন, উন্নত দেশের মতো বাংলাদেশেও ই-ভোটিং চালু হলে ভোট গ্রহণের স্বচ্ছতা বাড়বে। থাকবে না জাল ভোট দেওয়ার প্রবণতা। ভোটের সুরক্ষার জন্য এই মেশিনে যুক্ত করা হবে ভোটারদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট ও চোখের আইরিশ। এ ছাড়া ভোটকেন্দ্রের বাইরে ডিজিটাল বোর্ডে ভোট প্রদানের সংখ্যা দেখতে পারবেন সাধারণ মানুষ। তারা বলেছেন, ডিভিএম নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চলছে। কমিটির কাছে বেশ কিছু অবজারভেশন এসেছে। অনেক বিশেষজ্ঞ ইভিএমে নতুন কিছু সংযোজন, বিয়োজন, ত্রুটি-বিচ্যুতি সারতে কয়েকটি সুপারিশ করেছে। সব নিয়ে পর্যালোচনা করে আরেকটি মিটিং করতে হবে। এরপর সব ঠিকঠাক করে দ্রুত নতুন নির্বাচন কমিশনের কাছে রিপোর্ট উপস্থাপন করা হবে। ইসির অনুমোদন পেলে মেশিন তৈরির কাজ শুরু হবে। এ ক্ষেত্রে আগামী সংসদ নির্বাচনে আংশিকভাবে ই-ভোটিং চালু করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। ইসির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, সংসদ নির্বাচনে ই-ভোটিং চালুর জন্য গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে (আরপিও) সংশোধনী আনতে হবে। সেই অনুযায়ী আইনকানুনও সংশোধন করতে হবে। এ ছাড়া জাতীয় নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং চালুর আগে রাজনৈতিক ঐকমত্য খুবই প্রয়োজন বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। সেই সঙ্গে এ প্রযুক্তিটির পুঙ্খানুপুঙ্খ পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে পরীক্ষামূলক কার্যক্রম নিতে হবে। এর আগে আইন-বিধি সংস্কারও করতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশন এসে, মাত্র ২২ মাসের মধ্যে সারা দেশে ই-ভোটিং চালু করা সম্ভব নয়, সে ক্ষেত্রে আংশিকভাবে আগামী নির্বাচনে চালু হবে ই-ভোটিং।

২০১৯ সালের জানুয়ারির মধ্যে (নভেম্বর-জানুয়ারি) একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে কে এম নূরুল হুদার নেতৃত্বাধীন  কমিশনের অধীনে। তাদের হাতে জাতীয় নির্বাচনের তফসিলের আগে সময় রয়েছে প্রায় ২১ মাস। একাদশ সংসদ নির্বাচনে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন চালু নিয়ে যখন রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনা চলছে, তখন নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থাটিও ই-ভোটিং চালুর বিষয়ে তাদের কার্যক্রম এগিয়ে নিচ্ছে। সাবেক সিইসি ড. এ টি এম শামসুল হুদা কমিশনের সময় ২০১০ সালে ইভিএম যাত্রার পর ২০১৫ সালে তা থেকে যায় কাজী রকিবউদ্দীন আহমদ কমিশনে। বিদায়ের আগে তারা নিজেদের উদ্যোগে নতুন ইভিএম চালুর প্রস্তাব রেখে যায় এবং একটি ‘টেকনিক্যাল কমিটি’ করে দেওয়া হয়।

ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) কারিগরি দিক ও ব্যবহার পর্যালোচনায় বিশেষজ্ঞদের নিয়ে ১৯ সদস্যের ‘টেকনিক্যাল কমিটি’ গঠন করে যায় সদ্য বিদায়ী কমিশন। টেকনিক্যাল কমিটির উপদেষ্টা করা হয়েছে অধ্যাপক জামিলুর রেজা চৌধুরীকে। কমিটির সভাপতি হচ্ছেন ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান। এ ছাড়া টেকনিক্যাল কমিটিতে ইসি সচিবালয়, এনআইডি উইং, বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, আহসান উল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়, ইস্ট ওয়েস্ট বিশ্ববিদ্যালয়, এমআইএসটি, এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিলের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। এর আগে ২০১০ সালে স্থানীয় পর্যায়ের ভোটে ইভিএম চালুর পর দশম জাতীয় নির্বাচনে তা ব্যবহারের প্রক্রিয়াও চলছিল। শুরু থেকেই ইভিএম তৈরির ব্যাপারে ইসি বুয়েটের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের প্রযুক্তি এবং বাংলাদেশ মেশিন টুলস ফ্যাক্টরির (বিএমটিএফ) কারিগরি সহযোগিতা নেয়। বুয়েটের সরবরাহ করা ইভিএম চট্টগ্রাম, কুমিল্লা, নারায়ণগঞ্জসহ আরও কয়েকটি স্থানীয় নির্বাচনে সীমিত আকারে ব্যবহার করা হয়। পরবর্তী সময়ে যাত্রার পাঁচ বছরের মাথায় কারিগরি ত্রুটিকে কেন্দ্র করে ইসি ও বুয়েট দ্বন্দ্বের মধ্যে ইভিএম অধ্যায়ে ছেদ পড়ে। তবে এবার ইসি নিজস্বভাবে এই মেশিন তৈরি করার উদ্যোগ নিয়েছে।

এ বিষয়ে কারিগরি কমিটির সভাপতি ইসির অতিরিক্ত সচিব মোখলেসুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, টেকনিক্যাল কমিটির একটি বৈঠক হয়েছে। আরও পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে। কিছু অবজারভেশন এসেছে। বৈঠকের সারসংক্ষেপ তৈরি হয়েছে। ১৮ সদস্যের এ কমিটির অনেক বিশেষজ্ঞ ইভিএমে নতুন কিছু সংযোজন, বিয়োজন, ত্রুটি-বিচ্যুতি সারতে কিছু সুপারিশ করেছে। সব নিয়ে পর্যালোচনা করে আরেকটি মিটিং করতে হবে। আগামী সংসদ নির্বাচনে চালু সম্ভব কি না, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইভিএম চালুর বিষয় ইসির ওপর নির্ভর করছে। ইসি অনুমোদন করলে চালু হবে। এর আগে কমিশনের কাছে প্রতিবেদন উপস্থাপন করতে হবে।

ইসির কর্মকর্তারা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচনে ইভিএম চালু করতে হলে প্রথমেই প্রয়োজন ঐকমত্য। দল, গণমাধ্যম, সুশীল নাগরিকসহ নানা মাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেই এগোতে হবে। জাতীয় নির্বাচনের মতো বড় পরিসরে যাওয়ার আগে পরীক্ষামূলক কাজও সারতে হবে। তারা বলেন, ইতিমধ্যে স্থানীয় সরকারের নির্বাচনী আইন ও বিধিতে ইভিএম যুক্ত করে সংশোধন আনা হয়েছে; করা হয়েছে আলাদা আলাদা বিধিমালাও। সিটি করপোরেশন, পৌরসভায় ইভিএম ব্যবহার হয়েছে। একজন কর্মকর্তা বলেন, সংসদ নির্বাচনে ইভিএম চালুর ক্ষেত্রে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ সংশোধন করে ইভিএম ব্যবহারের বিষয়টি যুক্ত করতে হবে এবং আলাদা ইভিএম বিধিমালা করতে হবে।

ইসির সাবেক একজন কর্মকর্তা বলেন, শুধু আইন সংস্কার করলেই হবে না; ইভিএম বিতর্কমুক্ত রাখতে সঠিকতা যাছাই নিশ্চিত করতে হবে। অন্তত দুই লাখ ইভিএম মেশিন তৈরি, ভোটার যাচাই নিশ্চিত, ফলাফল নিয়ে জটিলতা তৈরি এবং রাজনৈতিক মতবিরোধ মিটিয়েই তা করতে হবে।

সর্বশেষ খবর