বুধবার, ২২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভোটের আগে কদর ছোট দলের

মাহমুদ আজহার ও রফিকুল ইসলাম রনি

ভোটের আগে কদর ছোট দলের

নিজেদের তালিকা থেকে নির্বাচন কমিশন নিয়োগ দেওয়ায় ১৪-দলীয় জোটের ছোট ছোট কয়েকটি দলের এখন পোয়াবারো। আত্মতুষ্টির শেষ নেই তাদের। এদিকে জোট গঠনের পর থেকেই বিএনপিকে নিয়ে সমালোচনার শেষ নেই ২০-দলীয় জোটের অধিকাংশ শরিক দলের। প্রধান দুই দলের জোটের বাইরে এবার জোটবদ্ধ নির্বাচনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন জাতীয় পার্টি চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদও। ধর্মভিত্তিক ছোট ছোট কয়েকটি দল নিয়ে জোটগঠনের কাজও চলছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে কয়েকটি বাম দলও মোর্চা গঠনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এর বাইরে ছোট ছোট দলগুলোর নানামুখী দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়েছে। বড় বড় দলগুলোতে এখন তাদের কদর তুঙ্গে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, নিজেদের কদর বাড়াতে নির্বাচন এলে নামসর্বস্ব দলগুলো জোট বাঁধে বা বাঁধার চেষ্টা করে। কেউ বা এককভাবে নির্বাচন করে। তবে এদের নির্বাচনের ফলাফল শোচনীয় হয়। শুধু যে এরা পরাজিত হয় তা-ই নয়, প্রায় সবারই জামানতের টাকা বাজেয়াপ্ত হয়। তবে এ নিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক নানা মেরুকরণও। 

এ প্রসঙ্গে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো জোটবদ্ধ হওয়ার প্রতিযোগিতায় নামে। তাদের উদ্দেশ্য একটাই, নির্বাচন। আদর্শের কোনো মিল নেই। এতে রাজনৈতিক অঙ্গনে কোনো পরিবর্তন আসবে না। এসব জোটে তুলনামূলকভাবে বড় দল দ্বারা ছোট দল শাসিত হয়। কিন্তু  কোনো ফলাফল আসে না।

জানা যায়, নির্বাচন কমিশন গঠনে সার্চ (অনুসন্ধান) কমিটির ১০ জনের তালিকা এবং এই তালিকা থেকে নেওয়া পাঁচজনের বেশির ভাগ নাম এসেছে ১৪-দলীয় জোটের ছোট কয়েকটি দলের প্রস্তাব থেকে। নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের (ইসি) পাঁচ সদস্যের সিইসিসহ চারজনেরই নাম দিয়েছিল বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন, গণতন্ত্রী পার্টি ও ন্যাপ। নারীসহ দুই কমিশনারের নাম আসে জাসদ (ইনু), সাম্যবাদী দল, জাতীয় পার্টির পক্ষ (জেপি) থেকেও। নির্বাচন কমিশন গঠনে ভূমিকা রাখতে পেরে তারা খুবই খুশি। এ প্রসঙ্গে তরীকত ফেডারেশনের মহাসচিব লায়ন এম এ আউয়াল এমপি বলেন, নির্বাচন কমিশন গঠনে ৫ সদস্যের নির্বাচনের তিনজনই আমাদের তালিকা থেকে নেওয়া। এতে আমরা খুবই খুশি। শরিক দলগুলোও আমাদের ওপর খুশি। সারা দেশে আমাদের ৪০টির মতো দলীয় কার্যালয় রয়েছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে আমরা এখন কাউন্সিল করছি। নির্বাচনের সব ধরনের প্রস্তুতি নিচ্ছি। এদিকে ২০-দলীয় জোটে বিএনপিকে নিয়ে ছোট ছোট দলগুলোর সমালোচনার শেষ নেই। তবে তারা প্রকাশ্যে বা জোটের বৈঠকে মন্তব্য করে না। আড়ালে-আবডালে বিএনপির নানা সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে। নির্বাচন এলেই দাবি-দাওয়ারও শেষ নেই তাদের। জোটে অন্তত ১২টি দল রয়েছে যাদের নিবন্ধন নেই। নামসর্বস্ব তারা। আন্দোলন সংগ্রামেও দু-একটি দল ছাড়া অন্যদের পাশে পায়নি বিএনপি। তবে স্থানীয় সরকারসহ অতীতের বিভিন্ন নির্বাচনে জোটের শরিকদের চাওয়ার হিসেবে তাজ্জব বনে যায় বিএনপি। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের আগে সম্ভাব্য এমপি প্রার্থীদের তালিকা তৈরি করেছিল বিএনপি। বিএনপির বাইরে জোটবদ্ধ ২০ শরিক দলই আড়াইশ জনের নামের তালিকা দিয়েছিলেন খালেদা জিয়ার কাছে। যদিও ওই নির্বাচন বর্জন করে বিএনপি জোট। 

এ প্রসঙ্গে জোটের শরিক দল ডেমোক্রেটিক লীগের সাধারণ সম্পাদক সাইফুদ্দিন আহমেদ মনি জানান, ছোট দল হলেও তো বড় দল হিসেবে বিএনপির কাছে আমাদের কিছু দাবি-দাওয়া থাকতেই পারে। অনেক সময় বিএনপি আমাদের মতামতের গুরুত্বও দেয়।

বিএনপির সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বে ‘নামসর্বস্ব’ ৩১টি দলের সমন্বয়ে বাংলাদেশ ন্যাশনাল অ্যালায়েন্স (বিএনএ) গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে একটি দলেরও নিবন্ধন নেই। ‘প্যাডসর্বস্ব’ কয়েকটি দল ইতিমধ্যে আলমগীর মজুমদার নামের এক ব্যক্তির নেতৃত্বে ৯টি দলের সমন্বয়ে ‘ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স’ নামে একটি জোটের আত্মপ্রকাশ করেছে। এ জোটে একটি রাজনৈতিক দলেরও নিবন্ধন নেই। ৯ দলের সমন্বয়ে অপর একটি জোট বেঁধেছেন বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০-দলীয় জোট থেকে বের হয়ে যাওয়া ন্যাশনাল পিপলস পার্টি (এনপিপি) নেতা শওকত হোসেন নিলু। তার জোটের নাম ‘ন্যাশনালিস্ট ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ)’। এনপিপি ছাড়া এই জোটের অপর ৮টি দলেরই নিবন্ধন নেই। জানা যায়, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ছোট ছোট রাজনৈতিক দলগুলোতে শুরু হয়েছে বড় রাজনৈতিক জোট গঠনের তত্পরতা। ভোটের রাজনীতিতে শূন্যের কোঠায় থাকা এসব দল বিভিন্ন জোট গঠন ও জোটে যুক্ত হওয়ার প্রতিযোগিতায় নেমেছে। বড় দলগুলোর পাশাপাশি ক্ষমতার স্বাদ নিতে জোটের রাজনীতি প্রক্রিয়া শুরু করছে। ‘নামসর্বস্ব ও প্যাডসর্বস্ব’ অনিবন্ধিত দলগুলোই বর্তমানে বিভিন্ন জোটে যুক্ত হওয়ার প্রতিযোগিতা শুরু করেছে বেশি। এসব জোটের নেতারা বলেছেন, একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখেই জোটবদ্ধ হচ্ছেন তারা। তাদের লক্ষ্য একটাই, জোটবদ্ধ থেকে বড় কোনো জোটে শরিক কিংবা সহযোগী হয়ে ক্ষমতার অংশীদার হওয়া। দীর্ঘ বিরতির পর আবার জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছেন এক সময়ে সংসদে প্রতিনিধিত্বকারী আ স ম আবদুর রবের জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডি। জেএসডি দুই জোটের বাইরে বিকল্প জোট গঠনের প্রক্রিয়া শুরু করেছে। জোট গঠনের উদ্যোক্তারা আগের কয়েকটি বৈঠকের ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রবের রাজধানীর উত্তরার বাসায় বৈঠক করেন। ওই বৈঠকে জেএসডি ছাড়াও গণফোরাম, বাসদ, নাগরিক ঐক্য ও বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্ির্টর নেতারা অংশ নেন। দুই জোটের বাইরে ‘তৃতীয় শক্তি’ গড়ে তুলতে আগামী ২৩ মার্চ রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করবে জেএসডি।

নতুন করে জোট করার কথা ভাবছেন বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি অধ্যাপক ডা. এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী, গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর আবদুল কাদের সিদ্দিকী বীর উত্তমের মতো রাজনীতিবিদরাও। তবে তারা অতীতের মতো একসঙ্গে পথ চলবেন, না পৃথকভাবে জোট গড়বেন তা এখনো চূড়ান্ত হয়নি। জোট করে ভোটের লড়াইয়ে নামার পথে হাঁটছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি-সিপিবি এবং বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল-বাসদসহ আরও বেশ কয়েকটি বাম প্রগতিশীল ঘরানার দল।

এদিকে নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতিমধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এবং ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী কয়েকটি রাজনৈতিক দল নিয়ে নতুন জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছেন সাবেক রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। এ প্রসঙ্গে জাতীয় পার্টির মহাসচিব এবিএম রুহুল আমিন হাওলাদার জানান, আমরা ইসলামী আদর্শ অক্ষুণ্ন রাখা ও জনগণের অধিকারের প্রশ্নে পৃথক একটি জোটের কথা ভাবছি। ইতিমধ্যে আমাদের দলের চেয়ারম্যানের সঙ্গে কয়েকটি ইসলামী ভাবধারার দল যোগাযোগ করছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর