মঙ্গলবার, ৭ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ডেইলি সান সম্পাদক আমির হোসেন আর নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেইলি সান সম্পাদক আমির হোসেন আর নেই

মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক ও ডেইলি সানের ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক আমির হোসেন আর নেই। গতকাল দুপুরে রাজধানীর এ্যাপোলো হসপিটালসে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন)। তার বয়স হয়েছিল ৭৭ বছর। স্ত্রী, মেয়ে ও অসংখ্য গুণগ্রাহী রেখে গেছেন এই প্রথিতযশা সাংবাদিক। রবিবার দুপুরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ডেইলি সান কার্যালয়ে আসার সময় হঠাৎ বুকে ব্যথা অনুভব করেন আমির হোসেন। তাকে দ্রুত এ্যাপোলো হসপিটালসে ভর্তি করা হয়। অবস্থার অবনতি হলে রাতেই লাইফ সাপোর্ট দেওয়া হয়। গতকাল দুপুর ১২টার দিকে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। মৃত্যুর সংবাদে ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপের সব সংবাদমাধ্যমে শোকের ছায়া নেমে আসে। বিশিষ্ট এই সাংবাদিকের প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয় তার প্রিয় কর্মস্থল বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া কম্পাউন্ডে বেলা পৌনে ৩টায়। বিকাল ৪টায় জাতীয় প্রেস ক্লাবে তার দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। পরে লাশ বারডেমের হিমঘরে রাখা হয়। আজ লাশ নিয়ে যাওয়া হবে তার নিজ জেলা মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার ক্রোকচর গ্রামে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে। আমির হোসেন পাকিস্তান আমলে দৈনিক ইত্তেফাকে তার সাংবাদিকতার ক্যারিয়ার শুরু করেন। ’৭১-এ তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ কাভার করেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি স্বাধীন বাংলা সরকারের মুখপত্র জয় বাংলা ও রণাঙ্গনের সাপ্তাহিক বাংলার বাণীতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের একজন নিয়মিত সংবাদ বিশ্লেষক ছিলেন এই সাহসী সাংবাদিক। তিনি প্রবাসী সরকারের সঙ্গেও জড়িত ছিলেন।

 

 

সুদীর্ঘ সাংবাদিকতা জীবনে আমির হোসেন দৈনিক বাংলার বাণী, ডেইলি বাংলাদেশ টুডেসহ বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করেন। ইস্ট ওয়েস্ট মিডিয়া গ্রুপ প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত প্রথম নামাজে জানাজায় অংশ নেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান, বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) সায়েম সোবহান, বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক ও নিউজটোয়েন্টিফোরের সিইও নঈম নিজাম, কালের কণ্ঠ সম্পাদক ইমদাদুল হক মিলন, বাংলানিউজ টোয়েন্টিফোরের এডিটর ইন চিফ আলমগীর হোসেন, প্রকাশক ময়নাল হোসেন চৌধুরীসহ সহকর্মীরা। জাতীয় প্রেস ক্লাবে এই বরেণ্য সাংবাদিকের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন মন্ত্রী, এমপি, রাজনৈতিক ও গণমাধ্যম নেতৃবৃন্দ। শ্রদ্ধা জানান সমকাল সম্পাদক গোলাম সারওয়ার, নৌপরিবহনমন্ত্রী শাজাহান খান, সাবেক ডেপুটি স্পিকার কর্নেল শওকত আলী (অব.), আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি সাইফুল আলম, সাধারণ সম্পাদক ফরিদা ইয়াসমিন, বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার প্রধান সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব ওমর ফারুক, ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি শাবান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ। জানাজার আগে জাতীয় প্রেস ক্লাবের যুগ্ম সম্পাদক শাহেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় স্মৃতিচারণা করে বক্তব্য দেন নেতৃবৃন্দ। বক্তব্যে গোলাম সারওয়ার বলেন, সাংবাদিক আমির হোসেন জ্ঞানী হলেও নিজেকে কখনো জাহির করতেন না। তিনি ছিলেন স্বল্পভাষী। মন্ত্রী শাজাহান খান বলেন, ‘আমির হোসেন ছিলেন আমার রাজনৈতিক নেতা, শিক্ষক।’ আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেন, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ ছিলেন আমির হোসেন। কলকাতায় বসে তিনি বাংলার বাণী পত্রিকার সঙ্গে সম্পৃক্ত ছিলেন। সাইফুল আলম বলেন, আমির হোসেন ছিলেন আপাদমস্তক একজন ভালো মানুষ। তিনি কম কথা বলতেন। হৃদয় ছিল তার অনেক বড়। ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমার সাংবাদিকতার হাতেখড়ি আমির হোসেনের কাছে। বাংলার বাণীতে তার সঙ্গে কাজ করেছি একসঙ্গে। তার মৃত্যুতে খুবই দুঃখ ভারাক্রান্ত আমি।’ মনজুরুল আহসান বুলবুল বলেন, আমির হোসেন ছিলেন সাংবাদিকতার পথপ্রদর্শক। জানাজা শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সাংবাদিক সংগঠন, পেশাজীবী সংগঠনের পক্ষ থেকে মরহুমের কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানো হয়। আজ সকাল ৭টায় বারডেমের হিমঘর থেকে তার লাশ মাদারীপুরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হবে। বাদ জোহর তাকে পারিবারিক কবরস্থানে সমাহিত করা হবে।

সর্বশেষ খবর