শনিবার, ১১ মার্চ, ২০১৭ ০০:০০ টা

ভারতের দিকে চোখ খালেদার

প্রধানমন্ত্রীর সফরের পর যেতে চান ভারত ও ইংল্যান্ড, ভাবনা নির্বাচনকালীন সরকার নিয়ে

শফিউল আলম দোলন

ভারতের দিকে চোখ খালেদার

আপাতত কোনো নির্বাচনী রূপরেখা ঘোষণা নয়। জাতীয় ও আন্তর্জাতিকসহ দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি অত্যন্ত সতর্কতার সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। দলের একেক নেতা একেক ধরনের কথাবার্তা বললেও মুখ খুলছেন না সাবেক এই প্রধানমন্ত্রী। নির্বাচনের ব্যাপারে একেবারেই মুখে কুলুপ এঁটেছেন। এতদিন মাঝেমধ্যে আন্দোলন কর্মসূচির কথা বললেও এখন সেদিকে এগোচ্ছেন কচ্ছপ গতিতে। বরং আগামী মাসে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারত সফরের যে কথা রয়েছে, সেদিকেই তার ও দলের নেতাদের দৃষ্টি নিবদ্ধ আছে বলে জানা গেছে। বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বৃহস্পতিবার সরকারের উদ্দেশে প্রশ্ন রেখে বলেছেন, প্রধানমন্ত্রী ভারত সফরে গিয়ে কী ধরনের চুক্তি করবেন তা দেশের জনগণ জানতে চায়। তার আগের দিন একই প্রশ্ন ব্যক্ত করেছেন দলের সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরকালে দেশের স্বার্থপরিপন্থী চুক্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন তিনি।

দলের স্থায়ী কমিটির একাধিক সদস্য সূত্রে জানা গেছে, আগামী জাতীয় নির্বাচনের বিষয়ে সর্বদিক থেকে নিশ্চয়তা পেলেই ‘নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের প্রস্তাব দেবে বিএনপি। সে অপেক্ষাতেই আছে দলটি। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পর বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া নিজেও ভারত, ইংল্যান্ডসহ কয়েকটি দেশ সফর করতে পারেন বলে আভাস পাওয়া গেছে।

এদিকে বেগম খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে দুদকের দায়ের করা জিয়া অরফানেজ ট্রাস্টসংক্রান্ত দুর্নীতি মামলায় তার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে আদালত বদল ও উচ্চ আদালতের আদেশে সময় পেছানোর বিষয় নিয়ে দল ও দলের বাইরে ব্যাপক জল্পনা-কল্পনা চলছে। শঙ্কা ও অস্বস্তির পাশাপাশি দলীয় নেতা-কর্মীদের কাছে ঘুরেফিরে এ বিষয়টিই আলোচনা হচ্ছে। বিশেষ করে কয়েক দিন আগে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের এ বিষয়ে দেওয়া বক্তব্যে দলীয় নেতা-কর্মীদের ভিতরে তোলপাড় চলছে।

এ নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করছেন দলের অন্য নীতিনির্ধারকরা। তারা বলছেন, ‘আমরা যেখানে ‘ম্যাডামের’ এসব মামলাকে রাজনৈতিক হয়রানিমূলক ও প্রতিহিংসাপূর্ণ বলে অভিহিতি করছি সেখানে তিনি (মওদুদ আহমদ) তার (খালেদা জিয়ার) মামলায় কত বছরের সাজা হলে কী করবেন তা-ও বলে দিচ্ছেন। অর্থাৎ আদালত মামলার রায় দেওয়ার আগে তিনি নিজেই রায় দিয়ে দিচ্ছেন এবং মামলার রায়ে সাজা হলেও বেগম খালেদা জিয়া নির্বাচনে কীভাবে অংশ নেবেন এবং দলের নেতৃত্ব দেবেন তা উল্লেখ করেছেন।’ তার এ বক্তব্যের জবাবে দলের স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বুধবার প্রকাশ্য এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, ‘যারা এ ধরনের বক্তব্য দিচ্ছেন তাদের উচিত দয়া করে মুখটা বন্ধ রাখা। নিজে নিজে একা একা এ ধরনের বিতর্কিত বক্তব্য না দিয়ে দলের অন্যসব নেতার সঙ্গে কণ্ঠ মিলিয়ে একই সুরে কথা বলা।’

সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রে জানা গেছে, বেগম খালেদা জিয়া মাত্র কয়েক দিন আগে আগামী নির্বাচন নিয়ে কথা বললেও এখন একেবারেই কারও সঙ্গে কিছু বলছেন না। সরকারবিরোধী আন্দোলনের কথাও আর আপাতত মুখে আনছেন না। ঘনিষ্ঠ কেউ কিছু জিজ্ঞাসা করলেও কৌশলে তা এড়িয়ে গিয়ে অন্য প্রসঙ্গে কথাবার্তা বলছেন। তবে তিনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন ভারত সফরের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে পর্যবেক্ষণ করছেন। দলের অন্য একটি সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের পরপরই তিনি নিজেও দেশটি সফরে যেতে পারেন। এ সময় তিনি ভারত ছাড়াও ইংল্যান্ডসহ আরও দু-একটি দেশ সফর করতে পারেন। যদিও খালেদা জিয়ার বিদেশ সফর নিয়ে দলীয় কোনো নেতা এখনো মুখ খুলছেন না। তার পরও ভিতরে ভিতরে তার একটা প্রস্তুতিও শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর কূটনৈতিক দায়িত্ব পালনরতদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ ও গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে মিলিত হওয়ার জন্য সময়সূচি নির্ধারণ করা হলেও ভারত সফরে তার মূল উদ্দেশ্য হবে আজমিরের ধর্মীয় তীর্থস্থান পরিদর্শন। তা ছাড়া একই সময়ে লন্ডনের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রও সফর করতে পারেন তিনি। তবে কোনোটিই এখনো চূড়ান্ত করা হয়নি। সবই প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর