রাজধানীর নামি-দামি ডজনখানেক স্কুলের কিছু শিক্ষক ২০১৭ সালের এসএসসি পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁসের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। পাশাপাশি প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত বেশ কিছু কোচিং সেন্টার। সম্প্রতি আদালতে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে কমলাপুর শের-ই-বাংলা রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজের দুই শিক্ষক প্রশ্নফাঁসের বিভিন্ন কৌশল ফাঁস করেছেন। এরপর থেকেই কয়েকটি স্কুলের কিছু শিক্ষক আত্মগোপনে রয়েছেন। অনেক শিক্ষক ছুটি নিয়ে লাপাত্তা। এ ছাড়া কোচিং সেন্টারে তালা ঝুলিয়ে পালিয়েছেন বহু শিক্ষক ও মালিক। আদালত সূত্র জানায়, রিমান্ডে থাকাকালীন ওই দুই শিক্ষক মামলার তদন্ত কর্মকর্তার কাছে প্রশ্নফাঁসের কথা স্বীকার করে আদালতে জবানবন্দি দেওয়ার কথা জানান। এ কারণে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশ পরিদর্শক মো. দেলোয়ার হোসেন আসামিদের জবানবন্দি রেকর্ড করার আবেদন করেন আদালতে। পরে ৫ ও ৬ মার্চ ঢাকা মহানগর হাকিম মো. খুরশীদ আলমের আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন কমলাপুর শের-ই-বাংলা রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষক রফিকুল ইসলাম ও মো. জহিরুল ইসলাম। সূত্র জানায়, প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে যেসব স্কুল সরাসরি জড়িত তাদের বেশির ভাগই রাজধানীর মতিঝিল, ফার্মগেট, উত্তরা ও মিরপুর এলাকার। এর মধ্যে মেট্রোপলিটন ক্রিয়েটিভ স্কুল, শহীদ নবী উচ্চবিদ্যালয়, আন্নাত কিন্ডারগার্টেন, মানিকনগর আইডিয়াল স্কুল, শাহজাহানপুর রেলওয়ে হাইস্কুল, মতিঝিল কলোনি উচ্চবিদ্যালয়, মাণ্ডা আইডিয়াল স্কুল, মা-মণি কিন্ডারগার্টেন ও জেএস কিন্ডারগার্টেন সরাসরি জড়িত। আসামি মো. জহিরুল ইসলাম জবানবন্দিতে আদালতে বলেছেন, ২০১৭ সালের এসএসসির প্রত্যেকটি পরীক্ষার আগে সকাল ৯টা থেকে ৯টা ২০ মিনিটের মধ্যে কমলাপুর শের-ই-বাংলা রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজের প্রিন্সিপাল মো. আ. আলীম স্যারের নির্দেশে জ্ঞানকোষ একাডেমির টিচার আফজাল স্যার মতিঝিল কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে ওই দিনের প্রশ্নের ছবি তুলে আনতেন। কারণ ওই স্কুলে প্রশ্নপত্র আগে দিত। আফজাল স্যার ওই প্রশ্নের ছবি তুলে ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে আমাকে পাঠাতেন। আমি ওই প্রশ্নগুলো জ্ঞানকোষ একাডেমির পার্টটাইম শিক্ষক ইমরান হোসেন হৃদয়কে ম্যাসেঞ্জারে পাঠাতাম। হৃদয় বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের ডেকে কোনো ছাত্রের বাসায় বসে প্রশ্নপত্র সলভ করার পর কমলাপুর শের-ই-বাংলা রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি শিক্ষক রফিকুল ইসলামের কাছে ম্যাসেঞ্জারের মাধ্যমে পাঠাতেন। পরে প্রশ্নপত্র সমাধানে বসতেন আ. আলীম স্যারের সঙ্গে মা-মণি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রিন্সিপাল অজিত বিশ্বাস, বেগম রাইসা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক রিয়াজ হোসেন, রফিকুল ইসলামসহ অন্য শিক্ষকরা। রফিকুল ইসলাম স্যার ওই প্রশ্নের উত্তর পত্রের মনোনীত শিক্ষক মানিকনগর আইডিয়াল স্কুল ও বি এম কলেজের প্রিন্সিপাল, জেএস গ্রামার হাইস্কুলের ইংরেজি শিক্ষক বাদল স্যারের কাছে পাঠাতেন। এ ছাড়া কমলাপুর শের-ই-বাংলা রেলওয়ে স্কুল অ্যান্ড কলেজে যে যে স্কুলের সিট পড়ত ওই স্কুলের শিক্ষকদের কাছে পাঠাতেন। এই চক্রের সঙ্গে মতিঝিল মডেল, শাহজাহানপুর রেলওয়ে উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল কলোনি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষকরাও জড়িত ছিলেন। এ ছাড়া মতিঝিল কলোনি উচ্চ বিদ্যালয় হতে প্রশ্নের ছবি উঠানোর জন্য ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক সহিদুর রোমানকে ১০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন আ. আলীম স্যার। আরও দেওয়ার কথা ছিল। সব প্রতিষ্ঠানের ছাত্রদের কাছ থেকে টাকা তুলে আ. আলীম স্যারের কাছে জমা হতো। আমি, আফজাল ও হৃদয় এ বছর হতে এ ঘটনার সঙ্গে জড়িয়েছি। এর আগে এ কাজে সহযোগিতা করতেন কমলাপুর শের-ই-বাংলা রেলওয়ে স্কুলের পার্টটাইম টিচার আশরাফ ও সম্রাট। জবানবন্দিতে এ আসামি আরও বলেন, এবার এইচএসসি পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁস করার পরিকল্পনা করেছেন মানিকনগর জয় একাডেমি পরিচালক শাহরিয়ার নাফিজ জয়। আরেক আসামি রফিকুল ইসলাম জবানবন্দিতে আদালতে বলেছেন, প্রিন্সিপাল আ. আলীম স্যার জানুয়ারি মাসে বলেন, এ বছর এসএসসি পরীক্ষার বিভিন্ন স্কুল অবজেকটিভে সুযোগ-সুবিধা নিচ্ছে আমি নেব কিনা। আমি রাজি হলে স্যারের সঙ্গে দুই লাখ টাকায় অবজেকটিভ সব পরীক্ষার উত্তর আমাকে দেবেন বলে জানান। আমাদের স্কুল পরীক্ষার উপকেন্দ্র, শাহজাহানপুর রেলওয়ে হাইস্কুল পরীক্ষার মেইন কেন্দ্র। মতিঝিল কলোনি উচ্চ বিদ্যালয় উপকেন্দ্র। আলীম স্যার আমাকে বলেন, মতিঝিল কলোনি উচ্চ বিদ্যালয় হতে আফজাল মাস্টার (আমার প্রতিষ্ঠান জ্ঞানকোষ একাডেমিসহ বিভিন্ন কোচিংয়ে পড়ায়) প্রশ্নের ছবি তুলে জহিরের কাছে দেবেন। জহির মানিকনগর আইডিয়াল, মান্ডা আইডিয়াল, এম এ হক, মা-মণি কিন্ডারগার্ডেন, জে-এস কিন্ডারগার্টেনের বিষয়ভিত্তিক শিক্ষক দিয়ে প্রশ্নপত্র সমাধান করতেন। প্রতিটি পরীক্ষার অবজেকটিভের উত্তরপত্র সমাধান করে ইমরান হোসেন হৃদয় আলীম স্যারের মনোনীত শিক্ষকদের মোবাইলে ম্যাসেজ করে দিতেন। আলীম স্যারের মনোনীত শিক্ষক দিতেন মেট্রোপলিটন ক্রিয়েটিভ স্কুল, শহীদ নবী উচ্চ বিদ্যালয় এবং উপরের উল্লেখ করা কিন্ডারগার্ডেনের শিক্ষকদের কাছে। হৃদয় আমার কাছেও ম্যাসেজে প্রশ্নোত্তর পাঠাতেন। আমিও মাঝে মাঝে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আলীম স্যারের নির্দেশে প্রশ্নোত্তর পাঠাতাম। আমি আস ফ কিন্ডারগার্টেনের হাবিব স্যার, মানিকনগর আইডিয়ালের লিটু স্যার, মেট্রোপলিটন ক্রিয়েটিভ স্কুলের প্রধান শিক্ষককেও বিভিন্ন সময় প্রশ্নোত্তর পাঠিয়েছি।
শিরোনাম
- এসএসসিতে ফেল : বরিশালে পাঁচ ছাত্রীর আত্মহত্যার চেষ্টা, দুইজনের মৃত্যু
- এসএসসিতে গোল্ডেন এ প্লাস না পেয়ে বগুড়ায় শিক্ষার্থীর আত্মহত্যা
- টানা বৃষ্টির প্রভাব রাজধানীর বাজারে
- এসএসসিতে অকৃতকার্য হওয়ায় গেন্ডারিয়ায় শিক্ষার্থীর 'আত্মহত্যা'
- সেই আলফি পাস করেছে
- এনবিআরের প্রথম সচিব তানজিনা বরখাস্ত
- ফ্যাসিবাদবিরোধীদের ঐক্য অটুট রাখার আহ্বান মামুনুল হকের
- দুদকের মামলায় জনতা ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আবুল বারকাত গ্রেফতার
- মাকে মারধর করায় যুবককে পিটিয়ে হত্যা করল স্বজনরা
- ইউক্রেনের প্রতিরক্ষা খাতে আরও বিনিয়োগে জেলেনস্কির আহ্বান
- আবারও ইসরায়েলি বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হুথিদের
- কুয়ালালামপুরে রাশিয়া-যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিরল বৈঠক
- লঙ্কানদের ১৫৫ রানের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিল টাইগাররা
- ট্রাম্পের লবিস্টদের লাখ লাখ ডলার দিচ্ছে দরিদ্র দেশগুলো
- নিরাপত্তা খাতে যুক্তরাষ্ট্রকে আরও সহযোগিতার আহ্বান স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার
- জনস্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে সম্প্রচার-ব্যবস্থা যুগোপযোগী করা হবে : তথ্য উপদেষ্টা
- ইয়েমেন থেকে ইসরায়েলি বিমানবন্দরে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
- কারাগারে একক সেলে নেওয়া হলো সাবেক আইজিপি মামুনকে
- উন্নত ভবিষ্যৎ বিনির্মাণে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ হিসেবে গড়ে তোলা আবশ্যক : প্রধান উপদেষ্টা
- নারী কর্মকর্তাদের ‘স্যার’ সম্বোধনের নির্দেশনা বাতিল
প্রশ্নফাঁস সর্বনাশ
জবানবন্দিতে শিক্ষকসহ অনেকের নাম, পরিকল্পনা ছিল এইচএসসি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের, আত্মগোপনে ডজনখানেক স্কুলশিক্ষক, তালা ঝুলছে বহু কোচিং সেন্টারে
তুহিন হাওলাদার
প্রিন্ট ভার্সন

এই বিভাগের আরও খবর