সোমবার, ১২ জুন, ২০১৭ ০০:০০ টা
বরকতময় মাহে রমজান

কাজা রোজার নিয়ম

মাওলানা সেলিম হোসাইন আজাদী

আল্লাহতায়ালা তার অপার অনুগ্রহে বান্দাকে তার ইবাদতের জন্য বেশ কিছু বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন। একদিকে তিনি সাওম পালন করা ফরজ করে দিয়েছেন, অপরদিকে যারা তা করতে অপারগ হবে তাদের জন্য পথ বের করে দিয়েছেন। আজ আমাদের আলোচনা তাদের নিয়ে, যাদের সাওম ফরজ ছিল কিন্তু কোনো কারণে তা পালন করতে অক্ষম হয়ে গেছেন। প্রথমত, সাওম পালনে এমন অক্ষম ব্যক্তি, যার অক্ষমতা দূর হওয়ার সম্ভাবনা নেই বৃদ্ধ ব্যক্তি, রোগী যার আরোগ্য হওয়ার আর আশা নেই। অতএব এমন ব্যক্তির জন্য সিয়াম পালন ফরজ নয়। আল্লাহতায়ালা আরও বলেছেন, ‘আল্লাহ সাধ্যের বাইরে কাউকে দায়িত্ব চাপিয়ে দেন না।’ (সূরা আল বাকারা : ২৮৬)। তবে ওই অক্ষম ব্যক্তির জন্য প্রতি সাওমের বদলে রোজ একজন মিসকিনকে খাওয়ানো আবশ্যক। আর খাবার খাওয়ানোর ব্যাপারে দুটির যে কোনোটি গ্রহণ করার সুযোগ রয়েছে ১. প্রত্যেক মিসকিনকে আলাদাভাবে খাদ্য ভাগ করে দেওয়া, যার পরিমাণ ‘আধা কিলো ও ১০ গ্রাম’ ভারী ভালো গম বা চাল। ২. আবার খাবারের আয়োজন চূড়ান্ত করে সব মিসকিনকে দাওয়াত দিয়ে নির্ধারিত দিনের হিসাব অনুযায়ী খাওয়ানো যেতে পারে। দ্বিতীয়ত, মুসাফির ব্যক্তি, যিনি সাওম ভাঙার কৌশল হিসেবে সফরের সংকল্প করেননি এমন ব্যক্তি সাওম পালন বা সাওম ভঙ্গ করার এখতিয়ার পাবে। তার সফরের সময়সীমা দীর্ঘ হোক বা সংক্ষিপ্ত; হোক তার সফর কোনো উদ্দেশ্য আকস্মিক কিংবা ধারাবাহিক। যেমন পাইলট বা ভাড়া গাড়ির ড্রাইভার। গাড়ির ড্রাইভার ভাড়ায় গাড়ি চালান এবং তাকে এ কাজ সারাক্ষণই করতে হয়। রমজান মাসে সফর অবস্থায় তীব্র গরমের কারণে যদি তার সাওম পালন করা কঠিন হয়ে পড়ে, তাহলে তিনি যখন আবহাওয়া ঠাণ্ডা হবে এবং তার জন্য সাওম পালন করা সহজ হবে, এমন সময় তিনি সাওম (কাজা হিসেবে) পালন করতে পারবেন। তবে মুসাফিরের জন্য সর্বোত্তম হলো সাওম পালন বা ভাঙার মধ্যে যেটা তুলনামূলক সহজ হয়, তা-ই করা। যদি দুই-ই সমান হয়, তাহলে সাওম পালন করাই ভালো। কারণ এতে তাড়াতাড়ি দায়িত্বমুক্ত হওয়া যায়। তাছাড়া রসুলুল্লাহ (সা.)-এর আমলও এমন। যদি সিয়াম পালনকারী দিনের মধ্যভাগে সফর করে এবং সিয়াম পূর্ণ করা তার জন্য কষ্টকর হয়, তাহলে নিজ শহর থেকে বের হওয়ার পর তার জন্য সিয়াম ভঙ্গ করা জায়েজ। আর যদি মুসাফির রমজান মাসে আপন শহরে দিনের বেলায় সিয়াম ছাড়া আগমন করে, ওই দিন তার জন্য বাকি সময়ের সিয়াম রাখা সহিহ হবে না। কেননা সেদিনের প্রথম ভাগে সিয়াম ভঙ্গকারী ছিল। আর ফরজ সিয়াম সুবহে সাদিক উদয় হওয়ার সময় থেকেই কেবল সহিহ হয়। তৃতীয়ত, এমন রোগী, যার রোগমুক্তির আশা করা যায় : এর তিনটি অবস্থা এক যদি এমন হয় সাওম তার জন্য কষ্টকর নয় আবার তার ক্ষতিও করবে না, তাহলে তার জন্য সাওম ফরজ হবে। কারণ তার কোনো শরীয় ওজর নেই, যা সাওম ভাঙাকে বৈধ করবে। ২. যদি এমন হয় সাওম তার জন্য কষ্টকর, তবে তার ক্ষতি করবে না। এমন অবস্থায় সে সাওম ভঙ্গ করবে। এ অবস্থায় তার জন্য কষ্টকর হলে সাওম পালন মাকরুহ হবে। কারণ সে আল্লাহর দেওয়া সুযোগ থেকে বের হয়ে নিজেকে শাস্তি দিল। ৩. যদি এমন হয় সাওম তার ক্ষতি করবে, তাহলে তার জন্য সাওম ভাঙা ওয়াজিব এমন সাওম পালন বৈধ নয়। আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তোমরা নিজেদের হত্যা কর না। নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের প্রতি অত্যন্ত মেহেরবান।’ (সূরা আন নিসা : ২৯)।

লেখক : বিশিষ্ট মুফাসসিরে কোরআন ও গণমাধ্যম ব্যক্তিত্ব www.selimazadi.com

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর