সোমবার, ৩ জুলাই, ২০১৭ ০০:০০ টা
সচিবদের প্রধানমন্ত্রী

বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে দুর্নীতি সহ্য করব না

♦ বয়সসীমা বৃদ্ধির দাবি নাকচ করলেন প্রধানমন্ত্রী
♦ গাড়িতে মনোগ্রাম ব্যবহারের দাবি জানালেন সচিবরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

বেতন-ভাতা বাড়ানো হয়েছে দুর্নীতি সহ্য করব না

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, পে-স্কেলে বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন যে হারে বেড়েছে, তা বিশ্বে বিরল। তাই জনগণ যেন সেবা পায়, সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে। তিনি বলেন, বেতন বাড়ানো হয়েছে, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দুর্নীতি বন্ধ করতে হবে। ঘুষ-দুর্নীতি সহ্য করা হবে না। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সভাকক্ষে সচিবদের সঙ্গে বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন।  সকাল ১০টা থেকে বেলা ২টা পর্যন্ত টানা ৪ ঘণ্টার এ বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী সচিবদের উদ্দেশে বেশকিছু নির্দেশনা দেন। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব (সংস্কার ও সমন্বয়) এম এন জিয়াউল আলম এক ব্রিফিংয়ে প্রধানমন্ত্রীর এসব নির্দেশনার বিষয় অবহিত করেন। দ্বিতীয় মেয়াদে সরকার গঠনের প্রায় তিন বছর পর প্রধানমন্ত্রী গতকাল দ্বিতীয়বারের মতো সচিবদের নিয়ে বৈঠক করেন। এর আগে ২০১৪ সালের ৮ এপ্রিল প্রথম বৈঠক করেন তিনি। গতকাল বৈঠকের শুরুতে প্রধানমন্ত্রী প্রায় দেড় ঘণ্টা বক্তব্য রাখেন। এরপর ১৫ জনের বেশি সচিব বিভিন্ন ইস্যুতে কথা বলেন এবং তাদের বিভিন্ন সমস্যা ও দাবি দাওয়া তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী সচিবদের উদ্দেশে বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচি (এডিপি) বাস্তবায়নের হার বাড়াতে হবে। বছরের শেষ দিকে তাড়াহুড়া না করে বছরের শুরু থেকেই বাস্তবায়নের কৌশল নির্ধারণ করতে হবে। আমদানি-রপ্তানির কাজ সহজ করতে দেশের সব নৌ ও স্থল বন্দরের কাস্টমস হাউস ২৪ ঘণ্টা খোলা রাখতে হবে। জেলা পর্যায়ে পর্যাপ্ত ত্রাণ তহবিল সংরক্ষণ করতে হবে যাতে দুর্যোগ মোকাবিলা করা যায়। তিনি বলেন, স্থানীয়ভাবে প্রকল্প নিতে হবে। যত্রতত্র শিল্প কারখানা না করে সরকার কর্তৃক ঘোষিত অর্থনৈতিক অঞ্চলে শিল্প কারখানা করতে হবে। এসডিজি অর্জনে দায়িত্ব পালন করতে হবে। তিনি বলেন, অপেক্ষাকৃত তরুণ কর্মকর্তা যারা দীর্ঘদিন চাকরি করবেন তাদের দক্ষতা বাড়াতে মানসম্মত প্রশিক্ষণ দিতে হবে। অগ্রাধিকার প্রকল্প নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে আন্তরিক হতে হবে। জঙ্গিবাদ ও মাদক ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে মাঠপর্যায়ে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন প্রয়োগের পাশাপাশি সচেতনতামূলক কার্যক্রম বাড়ানোর উপরও জোর দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নতুন বাজেট বাস্তবায়নে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সুশাসন নিশ্চিত করতে সেবাদানকারী সংস্থাগুলো থেকে সেবা পেতে জনগণ যাতে ভোগান্তির শিকার না হন, সে জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।  মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সচিব জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বর্ষা  মৌসুমে প্রকল্পের পেপার ওয়ার্ক সম্পন্ন করে শুষ্ক মৌসুমের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করতে হবে। এ জন্য আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বয় প্রয়োজন হলে তা দ্রুত করে কাজ করতে হবে। কাজের গুণগতমান নিয়ে কোনো আপস করা যাবে না। উন্নয়ন কর্মসূচি এমনভাবে গ্রহণ করতে হবে যাতে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষ উপকৃত হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করে সবার ন্যায়সঙ্গত পদোন্নতি এবং পদায়ন নিশ্চিত করতে হবে। নতুন রাস্তা নির্মাণে রাস্তার পাশে জলাধার রাখতে হবে, যাতে পানি রাস্তা থেকে সরাসরি খালে চলে যায়। এদিকে বৈঠক শেষে সরকারের বেশ কয়েকজন সচিবের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সচিবদের গাড়িতে মনোগ্রাম ব্যবহারের বিষয়ে বৈঠকে সচিবদের পক্ষ থেকে প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি প্রস্তাব করা হয়। যাতে বলা হয়, গাড়িতে মনোগ্রাম না থাকার কারণে রাষ্ট্রীয় বিভিন্ন অনুষ্ঠানে গিয়ে সচিবদের গাড়ি নিয়ে বিব্রতকর অবস্থায় পড়তে হয়। মনোগ্রাম থাকলে এগুলো এড়ানো যেত। তবে প্রধানমন্ত্রী এ বিষয়ে কিছু বলেননি।  পূর্ত সচিব রাজধানীর শেরে বাংলা নগরে আধুনিক সচিবালয় স্থাপনের বিষয়ে একটি মাস্টার প্ল্যানের বিষয়ে বিস্তারিত একটি প্রেজেন্টেশন দেন। জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, লুই কানের মূল নকশা না দেখে কোনো মাস্টার প্ল্যান করা যাবে না। নকশা নিয়ে আসা হয়েছে। সেটি দেখে নকশায় যেভাবে আছে সেভাবেই সব কিছু করা হবে। প্রধানমন্ত্রী পরিষ্কার জানিয়ে দেন, নকশার বাইরে কোনো কিছু হবে না। বৈঠক সূত্র জানায়, প্রধানমন্ত্রী সচিবদের প্রতি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, অধিকাংশ মামলায় সরকার পক্ষ হেরে যায় মূলত, ঠিকমতো কাগজপত্র উপস্থাপন না করার কারণে। আর মোবাইল কোর্টের বিষয়টি যেহেতু এখনো আদালতে, তাই অপেক্ষা করার পরামর্শ দেন তিনি। সূত্র আরও জানায়, সংসদের প্রশ্নোত্তর পর্বে সচিব কিংবা তার প্রতিনিধি উপস্থিত থাকার নির্দেশনা দেন প্রধানমন্ত্রী। একই সঙ্গে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প পরির্দশন বাড়ানোরও নির্দেশ দেন তিনি।

রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করলেন প্রধানমন্ত্রী : রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে বঙ্গভবনে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল রাত পৌনে ৮টার দিকে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গভবনে পৌঁছলে রাষ্ট্রপতি তাকে স্বাগত জানান।

রাষ্ট্রপতির প্রেস উইং থেকে জানানো হয়েছে, রাষ্ট্র প্রধানের সঙ্গে সরকার প্রধানের এটি ‘সৌজন্য সাক্ষাৎ’। এর আগে ১৬ মে রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে বঙ্গভবন যান প্রধানমন্ত্রী। সাধারণত প্রধানমন্ত্রী বিদেশ সফরের আগে অথবা পরে তার সফর সম্পর্কে রাষ্ট্রপতিকে অবহিত করেন।

সর্বশেষ খবর