বৃহস্পতিবার, ১০ আগস্ট, ২০১৭ ০০:০০ টা

বিচার বিভাগকে দুষলেন তোফায়েল

নিজস্ব প্রতিবেদক

বিচার বিভাগকে দুষলেন তোফায়েল

ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়ে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া পর্যবেক্ষণে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ। তিনি বলেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের একটি রায়ে প্রধান বিচারপতি বলেছেন, এক ব্যক্তি দেশ স্বাধীনও করেনি, একক নেতৃত্ব কোনো জাতি গঠন করে না। আমি প্রশ্ন করতে চাই, এ দেশের স্বাধীনতার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য আর কে ছিলেন? বঙ্গবন্ধুর একক নেতৃত্বেই বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে।’ গতকাল রাজধানীর বিএমএ মিলনায়তনে     জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশন (বিএমএ) এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর জন্ম হয়েছিল বলেই আজ বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে। ফাঁসির মঞ্চে গিয়েও বাঙালির মুক্তির আন্দোলনের কথা বলেছেন। যুদ্ধবিধ্বস্ত স্বাধীন বাংলাদেশে যখন মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি দিচ্ছিলেন, তখন জাতির জনককে হত্যা করা হয়।’ বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, ‘আজ যারা বিচারকের আসনে আছেন, তারা একসময় আমাদের সঙ্গে কেউ কেউ কর্মী হিসেবে কাজ করেছেন। আজ তারা সবাই ম্যাচিউরড আর আমরা হলাম ইমম্যাচিউর! এটা কেমন কথা? এটা কত বড় অবজ্ঞা? আমরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে লেখাপড়া করে এসেছি। আমরা সংবিধান প্রণয়নে কাজ করেছি। অসংখ্য আইন প্রণয়ন করেছি। বর্তমান সংসদের অধীনেই বিচারকদের বেতন বৃদ্ধি হয়েছে, শতাধিক আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। বর্তমান সংসদ সম্পূর্ণ সাংবিধানিক। ইন্টার-পার্লামেন্টারি অ্যাসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। সিপিএ সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন এই সংসদের একজন এমপি।’ তিনি বলেন, ‘যুগে যুগে যারা অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনতে চায় তারাই রাজনীতিবিদদের ছোট করা চেষ্টা করছে।’ তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের ছোট করতে চান কারা? যারা সামরিক শাসন চান, তারা। রাজনীতিবিদদের ছোট করতে চান কারা? যারা অনির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আনতে চান, তারা।’ আওয়ামী লীগের প্রবীণ এই নেতা বলেন, ‘বাংলাদেশে যখন সংবিধান প্রণীত হয় তখন আমি সেই কমিটিতে ছিলাম। সংবিধানে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচনের বৈধতা দেওয়া আছে। একটি আসনে বিনাপ্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচন বৈধ হলে একাধিক আসনেও বৈধ। বর্তমান সংসদ ন্যায়সঙ্গতভাবে জনগণের ভোটে গঠিত হয়েছে। যারা বর্তমান সংসদকে ইমম্যাচিউর বলেন, তারাই ইমম্যাচিউর। নির্বাচনের পর সারা বিশ্ব আমাদের স্বীকৃতি দিয়েছে। সারা বিশ্বের সংসদ এই সংসদকে বৈধতা দিয়েছে। এই সংসদ নিয়ে প্রশ্ন তোলার অধিকার তাদের নেই।’ বিচারপতিদের ইমপিচমেন্ট প্রসঙ্গে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘পৃথিবীর সব দেশে বিচারকদের ইমপিচ করে সংসদ। ব্রিটেনের অ্যাক্ট অব সেটেলমেন্ট-১৭০১ অনুসারে সংসদের হাতে এ ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। সংসদীয় গণতন্ত্রের সব দেশেই এ আইন কার্যকর। ভারত, কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশেও বিচারকদের ইমপিচ করে সংসদ।’ ২০১৩ সালে শ্রীলঙ্কার প্রধান বিচারপতিকে ইমপিচমেন্ট করেছিল শ্রীলঙ্কার সংসদ এবং কয়েক দিন আগে নেপালের প্রধান বিচারপতিকেও ইমপিচমেন্ট করে নেপাল সংসদ।’ বিচারপতিদের সমালোচনা করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘রাজনীতিবিদদের ছোট করতেই ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে অনাকাঙ্ক্ষিত বক্তব্য সংযুক্ত করা হয়েছে। ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্টের পর বঙ্গবন্ধুর রক্তের ওপর দিয়ে বিচারপতি সায়েম প্রধান সামরিক শাসক হয়েছিলেন। এরশাদ ক্ষমতা নেওয়ার আগেও আরেকজন বিচারপতি ক্ষমতায় আসেন। আজ যে সুপ্রিম জুডিশিয়াল কাউন্সিলের কথা বলা হচ্ছে, তাও সামরিক শাসক জিয়াউর রহমানের সৃষ্টি।’ আলোচনা সভায় স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘জাতির কয়েকজন বেইমান যখন বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছে, চার জাতীয় নেতাকে হত্যা করেছে, তখন একটি কালো আইন করে হত্যাকারীদের নিরাপত্তা দেওয়া হয়েছে, তখন কোথায় ছিল আদালত? কোথায় ছিল সুপ্রিম কোর্ট, কোথায় ছিলেন বিচারপতিরা?’ সংগঠনের সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিনের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য দেন আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক ডা. রোকেয়া সুলতানা, বিএসএমএমইউর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কামরুল ইসলাম খান, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আবুল কালাম আজাদ, স্বাচিপ সভাপতি অধ্যাপক ডা. এম ইকবাল আর্সলান, বিএমএ’র যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ডা. উত্তম কুমার বড়ুয়া প্রমুখ।

সর্বশেষ খবর