বন্ধু হিসেবে বাংলাদেশের পাশে থাকার বার্তা নিয়ে আজ দুই দিনের সফরে ঢাকা আসছেন ভারতের নতুন পররাষ্ট্র সচিব বিজয় কেশব গোখলে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মি. গোখলের সফরে দীর্ঘদিনের অমীমাংসিত তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি, রোহিঙ্গা বিষয়ে ভারতের অবস্থান ও সীমান্তে নিরাপত্তা বিষয়কে ঢাকার পক্ষ থেকে গুরুত্ব দেওয়া হবে।
আজ বিকাল ৪টায় ঢাকায় পৌঁছাবেন বিজয় কেশব গোখলে। পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর এই প্রথম বাংলাদেশ সফরে আসছেন তিনি। জানা গেছে, বিজয় কেশব গোখলের সফরে দ্বিপক্ষীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। মধ্য এপ্রিলে লন্ডনে কমনওয়েলথ সম্মেলনের ফাঁকে দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকের বিষয় নিয়েও আলোচনা হবে। এ ছাড়া বাংলাদেশ-ভারতের উন্নয়ন সহযোগিতা, যোগাযোগ ইস্যু, নিরাপত্তা অংশীদারিত্ব নিয়ে নতুন পররাষ্ট্র সচিব বাংলাদেশ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে পর্যালোচনা করবেন।
নির্বাচনী বছরে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের সফরকে তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন কূটনীতিকরা। জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত হুমায়ুন কবির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের ঢাকা সফরকে আমরা পররাষ্ট্র কৌশল হিসেবে দেখতে পারি। দুই দেশের কিছু সমস্যা রয়েছে— এই বাস্তবতা মাথায় রেখেই ঢাকা-দিল্লির একসঙ্গে কাজ করতে হবে। সীমান্ত এলাকার নিরাপত্তা নিয়ে কথা বলা প্রয়োজন। মিয়ানমারের রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে তাদের দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশের পাশে আমরা ভারতকে চাই।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-ভারতের বেশকিছু অভিন্ন নদ-নদীর পানি বণ্টন চুক্তি হয়নি। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে তিস্তার পানি বণ্টন চুক্তি। এ নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে ভারতের প্রতিশ্রুতি আমরা শুনতে পাচ্ছি। কিন্তু কার্যত কিছু হচ্ছে না। ফলে শুষ্ক মৌসুমে পানিশূন্য হচ্ছে উত্তরবঙ্গ। আমাদের প্রত্যাশা, কেন্দ্রীয় সরকার পশ্চিমবঙ্গ ও সিকিমের সঙ্গে কথা বলে ২০১১ সালের খসড়া চুক্তি অনুযায়ী তিস্তার পানির চমৎকার সুরাহা করবে।’ সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হচ্ছে বাণিজ্য চুক্তি। তাদের সঙ্গে আমাদের কিছু অলিখিত চুক্তি রয়েছে, প্রতিবন্ধকতাও আছে। বিজয় কেশব গোখলের সফরের মাধ্যমে আমাদের বিনিয়োগের বিষয়টি যেন প্রাধান্য পায়, এটি আমাদের প্রত্যাশা থাকবে। এতে উভয় দেশের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কের গভীরতা আরও বিস্তৃত হবে।’ জানতে চাইলে সাবেক রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ জমির বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘বিজয় গোখলের এ সফরটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তিস্তা চুক্তির মতো গুরুত্বপূর্ণ ও অমীমাংসিত দিকগুলো নিয়ে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করা হবে। আমরা বিশ্বাস করি, তিনি আমাদের যৌক্তিক আলোচনাগুলো তার দেশে প্রস্তাব আকারে তুলে ধরবেন।’ ঢাকা সফরকালে বিজয় কেশব পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হকের সঙ্গে আগামীকাল বেলা সাড়ে ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বৈঠকে অংশ নেবেন। সেখানে দুই দেশের মধ্যে সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এরপর সংবাদ সম্মেলনে দুই সচিব বিবৃতি দেবেন। ৯ এপ্রিল বেলা ২টায় হোটেল সোনারগাঁওয়ে আয়োজিত বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক বিষয়ে একটি সেমিনারে বিশেষ অতিথি থাকবেন বিজয় কেশব। সেমিনারে প্রধান অতিথি থাকবেন প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী। সফরকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গেও সাক্ষাৎ করবেন ভারতের পররাষ্ট্র সচিব।