মঙ্গলবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১৮ ০০:০০ টা

সংবাদ সম্মেলনের পর আটক কোটা বিরোধী ছাত্রনেতারা, পরে মুক্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক

সংবাদ সম্মেলন শেষ করে ফেরার পথে কিছুক্ষণের জন্য আটক হয়েছিলেন কোটাবিরোধী আন্দোলনের তিন ছাত্রনেতা। তারা অভিযোগ করেছেন, সংবাদ সম্মেলনে সব মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়ে চানখাঁরপুলে যাওয়ার পথে ঢাকা মেডিকেলের সামনে থেকে তাদের চোখ বেঁধে নিয়ে যাওয়া হয় পুলিশের গোয়েন্দা কার্যালয়ে। পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে এ ব্যাপারে গোয়েন্দা পুলিশ বলছে, ভিডিও ফুটেজ দেখানোর জন্যই তাদের আনা হয়েছিল। ভিডিও ফুটেজ দেখানো শেষে তাদের পুনরায় ছেড়ে দেওয়া হয়। ছাত্ররা বলছেন, তাদের কোনো ভিডিও ফুটেজ দেখানো হয়নি। অন্যদিকে আন্দোলনরত এক ছাত্রের দিনমজুর বাবাকে আটকের অভিযোগ উঠেছে। গতকাল এসব আটক নিয়ে হঠাৎ ক্যাম্পাসে সাময়িক উত্তেজনা সৃষ্টি হয়। মিছিলও হয় আলাদাভাবে। ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশের যুগ্ম-কমিশনার আবদুল বাতেন বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় টানা দুই দিন কোটাবিরোধী আন্দোলন ঘিরে তাদের ডিবি কার্যালয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল কিছু ফুটেজ দেখানোর জন্য। তদন্তের স্বার্থে তাদের ফুটেজ দেখানো এবং কিছু বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদের প্রয়োজন ছিল। পরে তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে তথ্যের জন্য আরও অনেককেই জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। বেলা সোয়া ৩টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগারের সামনে কোটাবিরোধী আন্দোলনের কেন্দ্রীয় নেতারা সংবাদ সম্মেলন করে তাদের তিন নেতাকে চোখ বেঁধে টেনেহিঁচড়ে গাড়িতে তুলে নেওয়ার বিষয়টি অবহিত করেন। তবে ওই তিন নেতা বলেছেন, তাদের কোনো নির্যাতন করা হয়নি। তুলে নেওয়ার দুই ঘণ্টা পর পুলিশ তাদের ছেড়ে দেয়। বেলা পৌনে ১টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশ-ফটকের সামনে রিকশা থেকে ওই তিন নেতাকে নামিয়ে মাইক্রোবাসে করে পুলিশে তুলে নেওয়ার অভিযোগ ওঠে। তারা হলেন বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের তিন যুগ্ম-আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র নুরুল্লাহ নূর, এমবিএর (ব্যাংকিং অ্যান্ড ইনস্যুরেন্স বিভাগ) ছাত্র রাশেদ খান এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র ফারুক হোসেন। তিন ছাত্রনেতাকে টেনেহিঁচড়ে তুলে নেওয়ার প্রতিবাদে আন্দোলনকারীরা বিকাল ৪টার দিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মিছিল করেন। সংবাদ সম্মেলনে তিন নেতা দাবি করেন, গামছা দিয়ে চোখ বেঁধে বেলা পৌনে ১টার দিকে তাদের একটি গাড়িতে করে নিয়ে যাওয়া হয়। চোখ খুলে দেওয়ার পর দেখেন, তারা একটি কক্ষে। সেখানে তাদের বলা হয়, তাদের কিছু ভিডিও ফুটেজ দেখানো হবে। কিন্তু তাদের কিছুই দেখানো হয়নি। তিন নেতা বলেন, মিন্টো রোডে গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) কার্যালয়ে তাদের নেওয়া হয়েছিল। পরে তাদের নাম-ঠিকানা নিয়ে পৌনে ৩টার দিকে ছেড়ে দেওয়া হয়। বেলা ২টা ৫৫ মিনিটে তারা সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে আসেন। তাদের দেখে অন্যরা ‘জয় বাংলা’ স্লোগান দিয়ে স্বাগত জানান। আন্দোলনকারী তিন কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, তারা ও তাদের পরিবার নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন। যুগ্ম আহ্বায়ক রাশেদ খানের অভিযোগ, তার বাবাকে ঝিনাইদহ সদর থানায় তুলে নিয়ে হয়রানি করা হয়েছে। তার বাবা একজন দিনমজুর। ওই তিন নেতাকে তুলে নেওয়ার আগে গতকাল বেলা ১১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে পরিষদ আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে দুই দিনের মধ্যে আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে করা মামলা প্রত্যাহারের দাবি জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে ওই তিনজনই উপস্থিত ছিলেন। প্রত্যক্ষদর্শী পরিষদের আরেক যুগ্ম-আহ্বায়ক বিন ইয়ামিন ঘটনা সম্পর্কে জানান, সংবাদ সম্মেলন শেষে বেলা পৌনে ১টার দিকে তারা কয়েকজন দুপুরের খাবার খেতে রিকশায় করে চানখাঁরপুল যাচ্ছিলেন। রাশেদ, নুরুল্লাহ ও ফারুক এক রিকশায় ছিলেন।

আর তিনি ছিলেন পেছনের রিকশায়। ওই তিনজনকে বহনকারী রিকশাটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগে প্রবেশ-ফটকের কাছে এলে পেছন থেকে তিনটি মোটরসাইকেল রিকশাটির সামনে গিয়ে গতি রোধ করে। পরে পেছন থেকে আরেকটি সাদা রঙের হাইএস মডেলের মাইক্রোবাস এসে সেখানে থামে। গাড়ি থেকে কয়েকজন নেমে রিকশা থেকে তিন নেতাকে নামিয়ে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যায়। একই তথ্য জানালেন আরেক প্রত্যক্ষদর্শী হাসপাতালের ফটকের উল্টো দিকে খাবারের দোকানের কর্মচারী মো. সালাউদ্দিন। তিনি বলেন, মোটরসাইকেল ও গাড়ি থেকে নেমে সাত-আটজন ওই রিকশার সামনে দাঁড়ায়। তারা তিনজনকে রিকশা থেকে নামাতে গেলে কিছুটা ধস্তাধস্তি হয়। পরে তিনজনের প্রত্যেককে দুই পাশ থেকে দুজন করে ধরে গাড়িতে তুলে নিয়ে দ্রুত চলে যায়।

এদিকে ঝিনাইদহে ছাত্রনেতা রাশেদ খানের বাবা দিনমজুর নবাই বিশ্বাসকে থানায় ডেকে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদের বিষয়টি স্বীকার করেছেন ঝিনাইদহ সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ইমদাদুল হক। তিনি দাবি করেন, রাশেদের বাবাকে থানায় ডেকে আনা হয়। মূলত তার নাম-ঠিকানা সঠিক আছে কি না তা যাচাইয়ের জন্য এবং কয়েকটি বিষয়ে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে।

রাশেদের চাচাতো ভাই ওয়ার্ড স্বেচ্ছাসেবক লীগ কর্মী মিলন বিশ্বাস জানান, গতকাল বেলা ১টার দিকে জেলা সদরের মুরারীদহ গ্রামের বাড়ি থেকে নবাই বিশ্বাসকে গাড়িতে করে থানায় নিয়ে যাওয়া হয়। এরপর পুলিশ তাকে দীর্ঘ সময় ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করে। বিএনপি-জামায়াতের সঙ্গে রাশেদ কিংবা তার বাবা জড়িত কি না জানতে চায়।

সর্বশেষ খবর