রবিবার, ১০ জুন, ২০১৮ ০০:০০ টা

মধ্যবিত্তদের ওপর চাপ সুবিধায় উচ্চবিত্তরা

মানিক মুনতাসির

মধ্যবিত্তদের ওপর চাপ সুবিধায় উচ্চবিত্তরা

হোসেন জিল্লুর রহমান

প্রস্তাবিত বাজেটের করকাঠামো বাস্তবায়ন হলে নগরীর মধ্যবিত্তরা সবচেয়ে বেশি সংকটে পড়বে। তাদের ওপর ভ্যাট আর করের বোঝা বাড়বে। তাদের জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। তারা আর্থিক চাপে পড়বে।

সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. হোসেন জিল্লুর রহমান প্রস্তাবিত বাজেটের বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এসব কথা বলেন। হোসেন জিল্লুর রহমান বলেন, ১১০০ বর্গফুটের ফ্ল্যাট নিবন্ধন ও নির্মাণের ওপর যে ভ্যাট বাড়ানো হয়েছে এবং রাইড শেয়াারিং হিসেবে উবার-পাঠাওয়ে যে ভ্যাট বসানোর প্রস্তাব করা হয়েছে তাতে সরাসরি নগরীর মধ্যবিত্তদের ওপর চাপ বাড়বে। অন্যদিকে করপোরেট কর কমানোর ঘোষণা বাস্তবায়ন হলে এর পুরো সুবিধা পাবেন উচ্চবিত্তরা, যা আর্থিক বৈষম্য আরও প্রকট করে তুলবে। করপোরেট কর কমানোয় ব্যবসায়িক পরিবেশ উন্নত হবে বলে অর্থমন্ত্রী যে ব্যাখ্যা দিয়েছেন তা কোনোভবেই গ্রহণযোগ্য নয়। এমনকি অর্থমন্ত্রীর এ দাবি বাস্তবভিত্তিকও নয়। তিনি বলেন, বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে (এডিপি) যে ১৮ হাজার কোটি টাকা এমপিদের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডের জন্য বরাদ্দ দেখানো হয়েছে, তার পুরোটাই নির্বাচনী কাজে ব্যবহার হতে পারে। অথচ কৃষি খাতের জন্য মাত্র ৩ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে এই ১৮ হাজার কোটি টাকা রাখা হয়েছে। এতে প্রচুর সরকারি অর্থের অপচয় ঘটবে। বিশিষ্ট এই অর্থনীতিবিদ বলেন, এবারের বাজেটে দুটি বিষয় খুবই লক্ষণীয়। এর একটি হলো সাহিত্য, অন্যটি পরিসংখ্যান। অর্থমন্ত্রী তার বক্তব্যে খুব চমৎকার চমৎকার কথা বলেছেন। কিন্তু সেগুলোর সঙ্গে বাস্তবতার মিল খুবই কম। অন্যদিকে বাজেটে যেসব পরিসংখ্যান দেখানো হয় সেগুলো যদি প্রকৃতপক্ষে বাস্তবায়ন করা যেত তাহলে দেশের অনেক উন্নয়ন হতো। তবে সাম্প্রতিক সময়ে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়ন কিছুটা ঘটেছে। কিন্তু তার চেয়ে অনেক বেশি বৈষম্য বেড়েছে। তিনি বলেন, সর্বজনীন পেনশন স্কিম একটি ভালো আইডিয়া। তবে তা বাস্তবায়ন অত্যন্ত কঠিন। কেননা আমাদের ৮৭ শতাংশ কর্মসংস্থান হয় অনানুষ্ঠানিক খাতে। গার্মেন্টসহ বেসরকারি খাতের আনুষ্ঠানিক খাতে কর্মসংস্থানের হার খুবই কম। তিনি বলেন, এডিপি নির্ধারণে ও বাস্তবায়নে আমাদের তিন ধরনের দক্ষতার সংকট রয়েছে। এর মধ্যে প্রকল্প প্রণয়নে দক্ষতার সংকট, প্রকল্পের যৌক্তিক ব্যয় নির্ধারণ ও সর্বোপরি প্রকল্প বাস্তবায়নের গুণাগুণ। এ তিন ধরনের দক্ষতার সংকট কাটাতে না পারলে শতভাগ এডিপি বাস্তবায়ন হলেও এর সুফল দেশ ও জনগণ পাবে না। তিনি বলেন, আমাদের স্থানীয় সরকার পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরগুলোয় স্থানীয় সরকারব্যবস্থাকে আরও প্রান্তিক পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। কেন্দ্রীয় সরকারের ক্ষমতা প্রতিনিয়তই বাড়ানো হচ্ছে। এসব সংকট বিদ্যমান রেখেই এবারের বাজেট ঘোষণা করা হয়েছে। ফলে উন্নয়নশীল দেশ গঠনের পথে এগিয়ে যাওয়া কতটা সহজ তাও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে পড়েছে বলে তিনি মনে করেন।

সর্বশেষ খবর