মঙ্গলবার, ১০ জুলাই, ২০১৮ ০০:০০ টা
থাই গুহায় রুদ্ধশ্বাস অভিযান

আরও চার কিশোর উদ্ধার

প্রতিদিন ডেস্ক

থাইল্যান্ডের উত্তরাঞ্চলীয় একটি গুহায় আটকে থাকা স্থানীয় একটি কিশোর ফুটবল দলের আরও চার সদস্যকে উদ্ধার করা হয়েছে। অভিযানের দ্বিতীয় দিনে গতকাল এদের উদ্ধার করা হয় বলে প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে সিএনএন ও রয়টার্স জানিয়েছে। এ নিয়ে গত দুই দিনে গুহার ভিতর থেকে মোট আট কিশোরকে উদ্ধার করা হলো। গতকাল চারজনকে উদ্ধারের পরপরই দ্বিতীয় দিনের উদ্ধার তৎপরতার ইতি টানা হয়। এতে করে এখনো কিশোর ফুটবল দলের কোচসহ আরও পাঁচজন গুহার ভিতরে আটকা আছে। উদ্ধার অভিযানের প্রথম দিন রবিবার চারজনকে উদ্ধারের পর বাকি নয় সদস্যকে উদ্ধারে গতকাল দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরু হয়। দ্বিতীয় পর্বের অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পরই এক কিশোরকে বের করে আনা হয়। উদ্ধার অভিযানের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট থাই নেভির একজন কর্মকর্তার বরাতে বার্তা সংস্থা রয়টার্স এ খবর দেয়। এর আগে প্রতিকূল আবহাওয়ায় দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরু করা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বলে স্থানীয় ব্যাংকক পোস্টের খবরে বলা হয়েছিল। তবে সব প্রতিকূলতা ও অনিশ্চয়তা দূর করে দিয়ে কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় পর্বের অভিযান শুরু করে। দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরুর কয়েক ঘণ্টা পর এক কিশোরকে উদ্ধার প্রসঙ্গে নৌবাহিনীর ওই কর্মকর্তা বলেন, ‘হ্যাঁ, একজন ইতিমধ্যে বেরিয়ে এসেছেন।’ তবে এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু জানাতে অপারগতা প্রকাশ করেন তিনি। রয়টার্স একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানিয়েছে যে, গুহার বাইরে থাকা চিকিৎসা কর্মীদের স্ট্রেচারে শুয়ে থাকা সবুজ কাপড়ে মোড়ানো একজনকে গুহার প্রবেশমুখে অবস্থানরত একটি অ্যাম্বুলেন্সে তুলতে দেখা গেছে। মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএনও একজন প্রত্যক্ষদর্শীর বরাতে জানিয়েছে, গতকাল পুনরায় অভিযান শুরুর পর উদ্ধারকারীরা অন্তত একজনকে বের করে নিয়ে এসেছেন। রবিবার উদ্ধার অভিযানের প্রথম দিনে চার কিশোরকে নিরাপদে বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হন উদ্ধারকর্মীরা। অভিযানে ব্যবহৃত অক্সিজেন ট্যাংকার খালি হয়ে যাওয়ায় উদ্ধার তৎপরতা সাময়িকভাবে স্থগিত করা হয়। এদিন রাতেই এক সংবাদ সম্মেলনে অভিযানের নেতৃত্ব দানকারী প্রাদেশিক সরকারের গভর্নর নারংসাক ওসতথানাকর্ন জানিয়েছিলেন, দ্বিতীয় পর্বের অভিযান শুরু করতে ১০ থেকে ২০ ঘণ্টার মতো সময় লাগতে পারে। আগামীকাল (গতকাল) সকাল থেকে আবার অভিযান শুরু হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।

তবে গুহায় আটকে থাকা বাকি নয় সদস্যকে উদ্ধারে অভিযান শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়। স্থানীয় সময় গতকাল সকাল থেকে দ্বিতীয় দিনের অভিযান শুরুর পরিকল্পনা ছিল। তবে স্থানীয় সময় গতকাল দুপুর পর্যন্ত তা শুরু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। উদ্ধার অভিযানের সর্বশেষ অগ্রগতির ব্যাপারেও তেমন কিছু জানায়নি তারা। সেইসঙ্গে অভিযানের প্রথম দিন রবিবার উদ্ধার হওয়া চার শিশুর পরিচয় জানাতেও অপারগতা প্রকাশ করেছেন কর্তৃপক্ষ। তবে গতকাল রাজধানী ব্যাংককে সাংবাদিকদের দেশটির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুপং পাওজিন্দা জানিয়েছেন যে, উদ্ধার হওয়া চার কিশোরের সবাই সুস্থ-সবল ও নিরাপদ এবং তারা চিকিৎসকদের পর্যবেক্ষণে রয়েছে। গত ২৩ জুন উত্তরাঞ্চলীয় প্রদেশ চিয়াং রাইয়ের ‘থাম লুয়াং ন্যাং নন’ গুহায় বেড়াতে গিয়ে সেখানে আটকে পড়ে স্থানীয় ‘ওয়াইল্ড বোরস’ ফুটবল দলের সহকারী কোচসহ ১৩ সদস্য। কোচ ছাড়া দলের বাকি সব সদস্যের বয়স ১১ থেকে ১৬ বছর। বহুজাতিক প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে নিখোঁজের নয় দিন পর গত ২ জুলাই দুজন ব্রিটিশ ডুবুরি গুহার এক জায়গায় তাদের জীবিত সন্ধ্যান পান। তবে ভারি মৌসুমি বৃষ্টিপাতে গুহার অভ্যন্তরভাগ বন্যাপ্লাবিত হওয়ায় আটকে পড়াদের নিরাপদে বের করে আনা নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি হয়। অবশেষে বৃষ্টি না হওয়ায় গত কয়েক দিনে গুহার ভিতরে পানির স্তর কিছুটা নিচে নেমে আসে। এ অবস্থায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি সত্ত্বেও জীবিত উদ্ধারের পাঁচ দিন স্থানীয় সময় রবিবার আটকাদের উদ্ধারে কঠিন ও জটিল অভিযান শুরু করে। অভিযানের মূল কাজে ১৩ জন বহুজাতিক বিশেষায়িত ডুবুরি ও থাই নেভি সিলের পাঁচজন সদস্য অংশ নেন। এ ছাড়াও স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক মিলিয়ে আরও ৯০ জন ডুবুরি এতে অংশ নেন। উদ্ধার অভিযানের প্রথম দিনেই প্রত্যাশা ছাড়িয়ে চার কিশোরকে গুহা থেকে বের করে আনতে সক্ষম হয় উদ্ধারকারী দলটি। উদ্ধার হওয়ায় কিশোরদের শারীরিক পরীক্ষার জন্য স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। উদ্ধার হওয়া কিশোররা শারীরিকভাবে ‘ভালো’ বলে খবরে বলা হয়েছে। তাদের অবস্থা ‘ততটা খারাপ নয়’ বলে কর্মকর্তাদের বরাতে খবরে বলা হয়েছে। এদিকে প্রথম দিনে উদ্ধার হওয়া চার কিশোর চিয়াং রাইয়ের একটি হাসপাতালে ‘পুনর্বাসন প্রক্রিয়ার’ মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। পনের দিন ভূগর্ভস্থ গুহার ভিতরে থাকায় তাদের শরীরে এর দীর্ঘ মেয়াদে কী প্রভাব পড়তে পারে তা চিকিৎসকরা মূল্যায়ন করছেন। এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সিটি অব টেনেসির ড. দারিয়া লং গিলেসপি বলেন,  গুহায় অক্সিজেনের ঘাটতির মুখে পড়েছিল কিশোররা। আর এটিই এখন প্রাথমিকভাবে বড় উদ্বেগ। গুহা থেকে বের করে আনার পরপর তাদের শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা ও শ্বাস-প্রশ্বাসজনিত সমস্যা পরীক্ষা করে দেখবেন চিকিৎসকরা। গত শুক্রবারই থাই কর্তৃপক্ষ জানিয়েছিল, গুহার ভিতরে অক্সিজেনের মাত্রা বিপজ্জনক পর্যায়ে অর্থাৎ ১৫ শতাংশ পর্যন্ত নেমে গেছে। আর এ মাত্রা যুক্তরাষ্ট্রের ডিপার্টমেন্ট অব লেবার অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ এডমিনিস্ট্রেশনের বেঁধে দেওয়া ন্যূনতম মাত্রার চেয়ে কম। মার্কিন এ প্রতিষ্ঠানটির মতে, গুহায় অক্সিজেনের ন্যূনতম নিরাপদ মাত্রা ১৯.৫ শতাংশ থেকে ২৩.৫ শতাংশ। সেখানে অক্সিজেনের মাত্রা ন্যূনতম মাত্রার চেয়ে কম হলে কারও শরীরে নানাবিধ পরিবর্তন দেখা দেয় এবং ‘হাইপক্সিয়া’ নামে উচ্চতাসম্পর্কিত (ফুটবল বলের সদস্যরা গুহার যে জায়গাটিতে আটকে আছে তা ভূপৃষ্ঠের প্রায় আটশ মিটার থেকে এক কিলোমিটার নিচে) এক ধরনের জটিলতার মুখে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে তাদের। উদ্ধার হওয়া কিশোরদের শরীরে অক্সিজেনের ঘাটতিজনিত প্রভাব পরীক্ষার পাশাপাশি তাদের নিউট্রিশন, ডিহাইড্রেশন এবং অন্যান্য স্বাস্থ্যসম্পর্কিত জটিলতাগুলোও পরীক্ষা করে দেখার কথা। সিএনএন, এনডিটিভি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর