শুক্রবার, ৭ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সংবিধান সামনে রেখেই জাতীয় ঐক্য

----- ড. কামাল হোসেন

সংবিধান সামনে রেখেই জাতীয় ঐক্য

সংবিধান সামনে রেখেই জাতীয় ঐক্য গড়ে তোলার কথা বললেন গণফোরাম সভাপতি বিশিষ্ট আইনজ্ঞ ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে জনগণকে সংঘবদ্ধ ও সক্রিয় করা। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের দাবিতে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে জনগণের থাকার ব্যাপারে উদ্বুদ্ধ করা। আমরা দেশব্যাপী সভা-সমাবেশ ও গণসচেতনতামূলক কর্মসূচির উদ্যোগ নিয়েছি। আমরা গণজাগরণ সৃষ্টি করতে চাই। বুধবার দুপুরে রাজধানীর মতিঝিলে নিজ কার্যালয়ে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাৎকারে এসব কথা বলেন জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়ার অন্যতম উদ্যোক্তা ড. কামাল হোসেন। খোলামেলা আলোচনায় দেশের চলমান রাজনীতি, জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়াসহ আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে কথা বলেন তিনি। দেশের চলমান রাজনীতি প্রসঙ্গে ড. কামাল হোসেন বলেন, দেশ এখন অনিশ্চয়তার পথে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের পর বলা হয়েছিল কিছুদিন পর সবার অংশগ্রহণে আরেকটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন দেওয়া হবে। কিন্তু চার বছরেও তা দেওয়া হয়নি। এটা সরকার পরিকল্পিতভাবেই বিলম্বিত করেছে। জনগণকে দেওয়া কথা রাখেনি ক্ষমতাসীনরা। নির্বাচন না দিয়ে পুরো সময়টাই পার করে নিয়ে নিল তারা। তিনি বলেন, তারা প্রধান বিরোধী দল বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুর্নীতির মামলার বিচার কার্যক্রম নির্বাচনের আগমুহূর্তে শুরু করেছে। এটাও একটা সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ গড়ে তোলার আলামত নয়। সরকার খালেদা জিয়ার বিচার করতে চাইলে আগেও করতে পারত। নির্বাচন আসার সঙ্গে সঙ্গে এ বিচার শুরু করা মানুষের মধ্যে স্বাভাবিকভাবেই নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এভাবে হয় না। জাতীয় ঐক্য নিয়ে তিনি বলেন, আনুষ্ঠানিকভাবেই আমরা জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি। এ নিয়ে গণসংযোগও করছি। বিভিন্ন স্থানে জনসভা ও সমাবেশ করারও চিন্তাভাবনা রয়েছে। এ ক্ষেত্রে আমরা গণমাধ্যমেরও সহযোগিতা চাই। জনগণের কাছে আমরা যেতে চাই। নিজেদের ভোটাধিকার ও গণতন্ত্রের আন্দোলনে তাদের সক্রিয় অংশগ্রহণ চাই। কেউ যেন নীরব নিষ্ক্রিয় না থাকেন। সক্রিয়ভাবে দেশবাসীকে পাশে চাই। সংবিধানপ্রণেতা ড. কামাল হোসেন বলেন, ২২ সেপ্টেম্বর আমরা ঢাকায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জনসভা করতে চাই। এখন একটা কালচার হলো, জনসভার জন্য পুলিশের অনুমতি নিতে হবে। আমি এর কোনো যুক্তি খুঁজে পাই না। সভা-সমাবেশ করতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অনুমতি লাগবে কেন? তার পরও যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে আবেদন করেছি। এখনো কোনো উত্তর পাইনি। এমন ইঙ্গিতও পাচ্ছি, হয়তো দেওয়াই হবে না। বিরোধী দলগুলোর সঙ্গেও সরকার একই আচরণ করছে। আমাদের বলা হচ্ছে, ঘরোয়া মিটিং করেন। এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র? তারা কতটুকু গণতন্ত্র লালন করছে তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। তবে ২২ সেপ্টেম্বর জনসভায় জামায়াত ছাড়া সব দলকেই আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আশা করছি, জনসভা করতে পারব। সবাইকেই আমরা পাশে চাই। প্রবীণ আইনজীবী ড. কামাল বলেন, সরকার সংবিধানের মূল কাঠামো থেকে সরে যাচ্ছে। এখন ন্যায়বিচার পাওয়াই মুশকিল। উচ্চ ও নিম্ন আদালতের দিকে তাকালে দেখা যায় আইনের শাসনের কত অভাব। সরকারি দলের জন্য এক ধরনের আইন আর সাধারণ মানুষের জন্য আরেক ধরনের আইন। নির্বাচনকালীন সরকারে গণফোরাম যাবে কিনা— জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমরা এ ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে আছি। ন্যূনতম সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য ওই নির্বাচনকালীন সরকার হবে কিনা তা নিয়েও প্রশ্ন আছে। আমরা আমাদের অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবিগুলো তুলে ধরেছি। এখন সরকার কী করবে তাদের বিষয়। অধ্যাপক ডা. বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আ স ম আবদুর রব ও মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বাধীন যুক্তফ্রন্টে যাবেন কিনা— এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, এ নিয়ে আলাপ-আলোচনা চলছে, আরও হবে। সময়মতো সব জানতে পারবেন। তবে এ মুহূর্তে আমরা নেই। আমরা নতুন কিছু করব কিনা তাও এখনই বলা যাবে না। কোটা ও নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিশু-কিশোরদের রাজপথের আন্দোলনকে যৌক্তিক আখ্যা দিয়ে ড. কামাল বলেন, শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো ছিল যৌক্তিক। আমাদের সমর্থন রয়েছে। তাদের দেখেই আমরা আশার আলো দেখতে পাই। ’৫২-এর ভাষা আন্দোলনেও তরুণ ছাত্র ও যুবকরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছিলেন। ভাষা আন্দোলনের সময় তিনজন শহীদ হওয়ার পর তারা রাজপথে সক্রিয় ছিলেন। তাদের আন্দোলনের পথ ধরেই আজ বাংলা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষার স্বীকৃতি পেয়েছে। ঐতিহাসিক ৬ দফা, ১১ দফা, মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে আশির দশকে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলনেও তরুণদের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছিল। আমাদের তরুণদের মধ্যে বিবেকের তাড়নায় যে ঐক্য গড়ে ওঠে তাতেই আমরা আশার আলো দেখতে পাই। নির্বাচনকালীন নিরপেক্ষ সরকার ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াসহ সব রাজবন্দীর মুক্তি দাবিতে বিএনপি আপনাদের পাশে পাবে কিনা— জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, গণতান্ত্রিক ও সাংবিধানিক আন্দোলন হলে অবশ্যই আমরা সঙ্গে থাকব। এসব বিষয়ে আমাদের সহানুভূতি থাকবে, সমর্থন ও সহযোগিতা থাকবে। তারা কীভাবে আন্দোলন চান সেটাই বিবেচ্য বিষয়। সব বিষয় নিয়েই আমরা মূলত জাতীয় ঐক্যের ডাক দিয়েছি। এর লক্ষ্য হলো জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবেই এ দাবিগুলো তুলে ধরবে। আমরা কোনো দলীয় দাবি হিসেবে দেখতে চাই না। জাতীয় দাবি হিসেবেই দেখতে চাই। তিনি বলেন, নানা সমস্যার মধ্যেও বাংলাদেশ নিয়ে আমি ব্যাপক আশাবাদী। এ দেশটি সম্ভাবনাময় একটি দেশ। কুশাসন, অন্যায়-অত্যাচার সত্ত্বেও উপমহাদেশে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি। অনেক বাধা-বিপত্তি অতিক্রম করে আজ এ অবস্থানে বাংলাদেশ আসতে সক্ষম হয়েছে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি খাতের ভূমিকা সবচেয়ে বেশি উল্লেখযোগ্য। দেশে যদি সুশাসন ও গণতন্ত্র ঠিকমতো প্রতিষ্ঠিত হতো, তাহলে প্রবৃদ্ধির এ হার আরও অনেক বেশি হতো। তিনি বলেন, সুযোগ-সুবিধা না পেয়েও আমাদের কৃষক, গার্মেন্ট শ্রমিক, প্রবাসী বাংলাদেশিসহ সর্বস্তরের সাধারণ মানুষের কর্মক্ষমতার প্রতি আগ্রহ অবিস্মরণীয়। গার্মেন্ট শ্রমিকরা ঠিকমতো বেতন না পেলেও কাজে পিছিয়ে নেই। বিদেশে কর্মরত শ্রমিকরাও নানা প্রতিকূলতার মধ্যে দেশে টাকা পাঠাচ্ছেন। এগুলো দেশপ্রেম থেকেই হয়। এটাই বাংলাদেশ। ড. কামাল হোসেন বলেন, সরকার সংবিধানের কথা বলে, কিন্তু সেখানে তো লেখা আছে মানুষের বাকস্বাধীনতার কথা। কিন্তু সবাই কি ঠিকমতো কথা বলতে পারেন? গণমাধ্যম সঠিক চিত্র তুলে ধরতে পারে? আন্তর্জাতিক চিত্রশিল্পী শহিদুল আলমকে যেভাবে গ্রেফতার করে রিমান্ডে নেওয়া হলো তার তীব্র নিন্দা জানাই। অবিলম্বে তার মুক্তি দাবি করছি। নিজেকে নিয়ে সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার মন্তব্যকে ইতিবাচকভাবেই দেখছেন ড. কামাল হোসেন।

সর্বশেষ খবর