রবিবার, ৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তৃতীয় টার্মে জনগণ ভোট দিলে আসব : প্রধানমন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

তৃতীয় টার্মে জনগণ ভোট দিলে আসব : প্রধানমন্ত্রী

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সামনে নির্বাচন। আমরা টানা দুই মেয়াদে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকলাম। তৃতীয় মেয়াদে জনগণ ভোট দিলে আসব, না দিলে নাই। কিন্তু আমরা চাই, যে অগ্রযাত্রাটা শুরু করেছি, বাংলাদেশকে আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করেছি, সেটা যেন থেমে না থাকে।

গতকাল রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (কেআইবি) মিলনায়তনে প্রতিষ্ঠানটির উদ্যোগে আয়োজিত ষষ্ঠ জাতীয় কনভেনশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। কৃষি উন্নয়নে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উন্নয়ন পরিকল্পনার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, স্বাধীনতা লাভের পর অল্প সময়ের মধ্যে জাতির পিতা এ দেশকে গড়ে তুলেছিলেন। কিন্তু তাঁর নেওয়া সব উন্নয়ন পরিকল্পনা বন্ধ করে দেন জিয়াউর রহমান ও পরবর্তীতে এরশাদ এবং খালেদা জিয়ার সরকার। কেআইবি সভাপতি এ এম এম সালেহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী, আইএফডিসির প্রেসিডেন্ট এবং সিইও স্কট জে অ্যাঞ্জেল, কেআইবি মহাসচিব মো. খায়রুল আলম প্রিন্স। মঞ্চে উপস্থিত ছিলেন চার কৃষিবিদ ড. মীর্জা আবদুল জলিল, ড. আবদুর রাজ্জাক, আবদুল মান্নান এবং আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম। কৃষি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য কৃষিবিদ বাহাউদ্দিন নাছিমকে কেআইবির পক্ষ থেকে আজীবন সম্মাননা পদকে ভূষিত করা হয়। প্রধানমন্ত্রী তার হাতে এই পদক তুলে দেন। সরকারপ্রধান বলেন, অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলকারীদের উদ্দেশ্যই ছিল এ দেশের মানুষকে শোষণ করা। এ দেশের মানুষ ভিক্ষা করবে, এটাই চেয়েছিল তারা। আওয়ামী লীগের নীতি— খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করব, কারও কাছে হাত পাতব না। আর বিএনপির নীতি খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হওয়া যাবে না, বিদেশ থেকে ভিক্ষা আনতে হবে।

১৯৭৫-এ বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যার পর এ দেশকে পিছিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র হয়েছে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ২১ বছর পর আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে কৃষির উন্নয়নে নানা প্রকল্প-পদক্ষেপ গ্রহণ করে। জমির সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার কারণে দেশ আজ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। অর্থনৈতিকভাবে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ। এখন সারের জন্য কৃষককে ধরনা দিতে হয় না, গুলিতে প্রাণ দিতে হয় না। কৃষকদের হাতেই পৌঁছে যায় সার। আওয়ামী লীগ সরকার সেই ব্যবস্থা করেছে। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে এবং খাদ্যের জন্য যেন আর কোনো দিন বাংলাদেশকে কারও কাছে হাত পাততে না হয়, সেটা নিশ্চিত করাই আমাদের লক্ষ্য। এক্ষেত্রে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে কৃষিবিদদের প্রতি নির্দেশ দেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, স্বল্প, মধ্য এবং দীর্ঘ মেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করে সরকার দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। ২১০০ সালের মধ্যে বাংলাদেশ কেমন হবে সেই পরিকল্পনা করে আমরা ‘ডেল্টা প্ল্যান’ করেছি। সেখানে কৃষি ও পানিকে আমরা গুরুত্ব দিচ্ছি। ব্লু-ইকোনমি শক্তিশালী করার জন্য সমুদ্র গবেষণা কেন্দ্রও করা হয়েছে।

 তিনি বলেন, সরকার কৃষি শিক্ষার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে একাধিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছে। দেশের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও কৃষি সংশ্লিষ্ট শাখা খোলা হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে প্রান্তিক পর্যায় পর্যন্ত কাজ করছি। দেশজুড়ে আমরা ভাসমান কৃষিখেত করতে পারি। ইতিমধ্যে গোপালগঞ্জের ভাসমান কৃষিখেত আন্তর্জাতিক স্বীকৃতিও পেয়েছে। এ ছাড়া কৃষিপণ্যের প্রক্রিয়াজাতকরণের দিকে আমাদের বিশেষভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন। আমাদের বিনিয়োগটা যেন এদিকে হয়। আমরা তাহলে অর্থনৈতিকভাবে আরও শক্তিশালী হতে পারব।  প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা এখন দানাদার খাদ্য উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ। চাল, শাক-সবজি, মাছ-মাংসসহ বেশ কিছু কৃষিপণ্য আমরা বিদেশে রপ্তানি করছি। বাংলাদেশ বিশ্বে ধান উৎপাদনে চতুর্থ, সবজি উৎপাদনে তৃতীয়, মত্স্য উৎপাদনে তৃতীয়, ফসলের জাত উৎপাদনে প্রথম অবস্থানে রয়েছে। কৃষি গবেষণা, উপকরণ সরবরাহ ও সম্প্রসারণ সেবা খাতের সমন্বিত প্রচেষ্টার মাধ্যমে আজকের এ উন্নতি অর্জন সম্ভব হয়েছে। কৃষি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বিজ্ঞানী, কৃষিবিদসহ সংশ্লিষ্ট সবার প্রতি ধন্যবাদ জানান তিনি।

সর্বশেষ খবর