মঙ্গলবার, ১১ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
খালেদা জিয়ার মুক্তি দাবিতে মানববন্ধন

ধরপাকড় উপেক্ষা বিএনপি নেতা কর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ধরপাকড় উপেক্ষা বিএনপি নেতা কর্মীদের ব্যাপক অংশগ্রহণ

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর —বাংলাদেশ প্রতিদিন

ধরপাকড় উপেক্ষা করে রাজধানীতে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে গতকাল ঢাকাসহ সারা দেশে স্বতঃস্ফূর্ত মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়েছে। তবে শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতারের অভিযোগ করেছে দলটি। পুলিশের অনুমতি নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে পূর্বঘোষিত মানববন্ধন বেলা ১১টায় শুরু হলে ওই এলাকার বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে নেতা-কর্মীদের গ্রেফতার শুরু হয়। চারদিকে গ্রেফতারের মধ্যেও ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে ‘খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই’ সংবলিত প্লাকার্ড, ব্যানার, ফেস্টুন নিয়ে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী অংশ নেন। মানববন্ধনে অংশ নিয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দলের প্রধান বেগম খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি ও সুচিকিৎসা দাবি করেন। একই সঙ্গে তিনি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই বর্তমান সরকারকে পদত্যাগেরও দাবি জানান। তিনি বলেন, ‘তফসিলের আগে সংসদ ভেঙে দিতে হবে। নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। বিচারিক ক্ষমতা দিয়ে নির্বাচনে সেনাবাহিনী মোতায়েন করতে হবে। জাতীয় নির্বাচন হতে হবে একটি নিরপেক্ষ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে। তফসিলের আগে এ সরকারকে অবশ্যই সরে যেতে হবে। অন্যথায় আন্দোলনের মাধ্যমে জনগণ এ দাবি আদায় করে নেবে।’ বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার বিচারিক আদালত পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডের কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তরের প্রতিবাদ, তার সুচিকিৎসা ও নিঃশর্ত মুক্তির দাবিতে ঢাকাসহ সারা দেশেই মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়। পরে বিকালে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব অ্যাডভোকেট রুহুল কবির রিজভী বলেন, সারা দেশে মানববন্ধন কর্মসূচি থেকে দুই শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে রাজধানীতেই গ্রেফতার করা হয়েছে শতাধিক। এ ব্যাপারে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) উপকমিশনার (ডিসি, মিডিয়া) মাসুদুর রহমান বলেন, ‘বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে শাহবাগ, রমনা ও পল্টন থানায় কিছু নেতা-কর্মী আটকের কথা শুনেছি। যাচাই-বাছাই শেষে বিস্তারিত জানানো যাবে।’ ডিএমপির রমনা বিভাগের ডিসি মারুফ হাসান সরদার বলেন, ‘বিএনপির মানববন্ধনকে কেন্দ্র করে আটক করা হয়নি। কিছুসংখ্যক লোককে আটক করা হয়েছে। আমাদের কাছে মামলার তালিকা আছে। যাদের নামে মামলা আছে, তাদের গ্রেফতার করা হবে। আর যাদের নামে মামলা নেই, তাদের যাচাই করে ছেড়ে দেওয়া হবে।’

বেলা ১১টা থেকে ১২টা পর্যন্ত মানববন্ধনের পূর্বনির্ধারিত সময় থাকলেও সকাল ১০টার আগে থেকেই নেতা-কর্মীরা সেখানে সমবেত হতে থাকেন। বেলা ১১টা থেকে কর্মসূচি শুরু হলেও এর আগেই প্রেস ক্লাবের সামনে বিপুলসংখ্যক নেতা-কর্মী উপস্থিত হন। একপর্যায়ে প্রেস ক্লাবের সামনের সড়কটিতে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। সাঁজোয়া যান ও জলকামানসহ পুলিশেরও সরব উপস্থিতি ছিল। মানববন্ধনে আসা-যাওয়ার পথে আশপাশের এলাকা থেকে শতাধিক নেতা-কর্মীকে পুলিশ আটক করে। এর মধ্যে বিএনপির জলবায়ুবিষয়ক সহ-সম্পাদক ও সাবেক ছাত্রনেতা মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, নির্বাহী কমিটির সদস্য আবদুল মতিনও রয়েছেন। গ্রেফতার এড়াতে মানববন্ধনের শেষ দিকে বিএনপির নেতা-কর্মীদের হুড়োহুড়ি শুরু হয়। ছাত্রদল, যুবদল, স্বেচ্ছাসেবক দলসহ অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনের শীর্ষস্থানীয় নেতারা মানববন্ধন শেষ হওয়ার আগেই চলে যান। মানববন্ধনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন, ড. আবদুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, বেগম সেলিমা রহমান, বরকত উল্লাহ বুলু, মো. শাহজাহান, আবদুল আওয়াল মিন্টু, শামসুজ্জামান দুদু,  অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, মেজর জেনারেল (অব.) রুহুল আলম চৌধুরী, কেন্দ্রীয় নেতা আমান উল্লাহ আমান, জয়নুল আবদিন ফারুক, আবদুস সালাম, হাবিবুর রহমান হাবিব, মজিবুর রহমান সরোয়ার, সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, খায়রুল কবির খোকন, নাজিম উদ্দিন আলম, শিরিন সুলতানা, আজিজুল বারী হেলাল, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, অ্যাডভোকেট আবদুস সালাম আজাদ, আবদুল আউয়াল খান, মীর নেওয়াজ আলী, হেলেন জেরিন খান, কৃষিবিদ শামীমুর রহমান শামীম, মুনির হোসেন, কাদের গনি চৌধুরী, আমিরুজ্জামান খান শিমুল, ঢাকা মহানগর দক্ষিণ বিএনপির সাধারণ সম্পাদক কাজী আবুল বাশার, ২০-দলীয় জোট নেতা ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ, ডা. মোস্তাফিজুর রহমান ইরান, গোলাম মোস্তফা ভুঁইয়া প্রমুখ মানববন্ধনে অংশ নেন। খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘বেগম খালেদা জিয়াকে সম্পূর্ণ মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়ে অন্যায়ভাবে কারাগারে আটক করে রাখা হয়েছে। আমরা কোনো দয়া ভিক্ষা করছি না। উচ্চ আদালত থেকে জামিন পাওয়ার পরও একটার পর একটা মিথ্যা মামলা দিয়ে তাকে কারাগারে আটকে রাখা হয়েছে।

ঢাকায় শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার, দাবি রিজভীর : রাজধানীতে মানববন্ধন ঘিরে শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে বলে দাবি করেছেন রিজভী আহমেদ। রাজধানীর নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ঢাকাসহ সারা দেশে দুই শতাধিক নেতা-কর্মী গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ঢাকায় শতাধিক নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ছাড়া গাজীপুরে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রয়াত সদস্য ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আ স ম হান্নান শাহর ছেলে শাহ রিয়াজুল হান্নান ও কাউন্সিলর হান্নান মিয়া হান্নুসহ ২৫ জন নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ঢাকায় গ্রেফতার হওয়া নেতা-কর্মীদের নামের তালিকাও সাংবাদিকদের কাছে তুলে ধরেন রিজভী আহমেদ।

সর্বশেষ খবর