সোমবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

মোংলা ও বুড়িমারী বন্দরে পদে পদে ঘুষ : টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

মোংলা ও বুড়িমারী বন্দর কাস্টমসে সেবা নিতে গ্রাহকদের ঘুষ দিতে হয়। দেশের দ্বিতীয় সমুদ্রবন্দর মোংলা দিয়ে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে হয় ব্যবসায়ীদের। একই চিত্র বুড়িমারী স্থলবন্দর ও কাস্টমসে সেবা নেওয়ার ক্ষেত্রে। সেখানে বিভিন্ন খাতে ঘুষ দিতে হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) এক গবেষণায় এ কথা বলা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবি কার্যালয়ে গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান এবং আউটরিচ ও কমিউনিকেশন পরিচালক শেখ মনজুর-ই-আলম উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন টিআইবির গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মনজুর-ই  খোদা ও ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. খোরশেদ আলম।

গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে মোংলা কাস্টমস হাউস থেকে ৩ হাজার ৯৯ কোটি টাকা এবং বন্দর  থেকে ২২৭ কোটি টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। আর বুড়িমারী কাস্টম হাউস থেকে ৪৫ কোটি এবং বন্দর থেকে ২৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা রাজস্ব আদায় হয়েছে। মোংলা কাস্টম হাউস ২০১৬-১৭ অর্থবছরে নিয়মবহির্ভূত গাড়ি থেকে ৬ কোটি ৪৭ লাখ টাকা, কনটেইনার থেকে ৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা এবং বাল্ক থেকে ১ কোটি ৩২ লাখ টাকা নিয়েছে। আর মোংলা বন্দরের মাধ্যমে নিয়মবহির্ভূতভাবে আদায় করা হয়েছে ৪ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে গাড়ি থেকে ২ কোটি ৭৮ লাখ টাকা, কনটেইনার থেকে ১ কোটি ২৬ লাখ টাকা এবং বাল্ক থেকে ৫৮ লাখ টাকা নেওয়া হয়েছে। বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশনে আমদানি-রপ্তানি প্রক্রিয়ায় ২০১৬-১৭ অর্থবছরে কমপক্ষে ১০ কোটি ৪৪ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূত লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে শুল্ক স্টেশনে আমদানির ক্ষেত্রে ২ কোটি ৫১ লাখ টাকা ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ৩৪ লাখ টাকা। স্থলবন্দর কর্তৃপক্ষ আমদানির ক্ষেত্রে ৪৩ লাখ টাকা ও রপ্তানির ক্ষেত্রে ৫ লাখ টাকা নিয়মবহির্ভূত আদায় করেছে। বাকি ৫ কোটি ৪০ লাখ টাকা মোটর শ্রমিকরা নিয়মবহির্ভূতভাবে নিয়েছে। মোংলা বন্দরে যে কোনো পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে নিয়মবহির্ভূত অর্থ দিতে হয় ব্যবসায়ী কিংবা তাদের প্রতিনিধিদের। আমদানি পণ্যের প্রতি চালানের (বিল অব এন্ট্রি) বিপরীতে শুল্কায়নের জন্য কাস্টমসে ৩৫ হাজার ৭০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়।

সেই পণ্য বিকাল ৫টার মধ্যে ছাড় করতে হলে ৬ হাজার টাকা এবং এর পরে ছাড় করতে হলে বাড়তি ১ হাজার ২০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। এ ছাড়া বন্দরে প্রতিটি জাহাজ আগমন ও বহির্গমনে কাস্টমস হাউসে ৮ হাজার ৩৫০ টাকা ও বন্দর কর্তৃপক্ষের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তাদের ২১ হাজার টাকা ঘুষ দিতে হয়। এতে আরও বলা হয়, বুড়িমারী স্থলবন্দর ও শুল্ক স্টেশন দিয়ে পণ্য আমদানি ও রপ্তানিতে নিয়মবহির্ভূত অর্থের লেনদেন বা ঘুষের প্রমাণ রয়েছে। এখানে আমদানি পণ্যের প্রতিটি চালানের (বিল অব এন্ট্রি) বিপরীতে শুল্ক স্টেশনে ১ হাজার ৭৫০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। রপ্তানির বেলায় এটি দেড় হাজার টাকা। আবার আমদানি করা পণ্য ছাড় করতে স্থলবন্দরের কর্মকর্তাদের ৩০০ টাকা ঘুষ দিতে হয়। রপ্তানিতে এই ঘুষ ২০০ টাকা। এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, যোগসাজশের মাধ্যমে বন্দরে যে দুর্নীতি হয় তা কর্তৃপক্ষের অজানা নয়। কর্তৃপক্ষ যদি দুর্নীতি নিয়ন্ত্রণ করতে চায়, তাহলে তা সম্ভব। শুধু দরকার সদিচ্ছার। যারা এই দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত তাদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির মাধ্যমে বার্তা পৌঁছে দিতে হবে যে, দুর্নীতি করলে শাস্তি  পেতে হয়। তিনি বলেন, বন্দরের এই দুর্নীতি আইনের চোখে প্রমাণিত না, যে কারণে আমরা এটাকে অভিযোগ বলছি। যারা প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতির শিকার হয়ে, নিজেরাও দুর্নীতির অংশীদার হয়ে যাচ্ছে তাদের তথ্য এবং অন্যান্য অংশীজন থেকে পাওয়া তথ্য নিয়ে আমরা প্রতিবেদন তৈরি করেছি। আমাদের ম্যাথলজি অনুযায়ী প্রমাণিত বিধায় আমরা এটাকে দুর্নীতি বলছি। ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমরা দেখেছি আধুনিকায়ন ও ডিজিটালাইজেশন করার মাধ্যমে সেবাগ্রহীতা ও দাতার সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ কমানো গেলে দুর্নীতি কমে যায়। তবে সেই প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে সুফল পাওয়া যায় না।

সর্বশেষ খবর