সোমবার, ১৯ নভেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

তারেকের বিষয়ে কী করার আছে দেখবে ইসি

নিজস্ব প্রতিবেদক

ভিডিও কনফারেন্সিংয়ের মাধ্যমে দণ্ডিত পলাতক আসামি দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে দিয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নেওয়ায় বিএনপির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। গতকাল দলটির প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল ইসি সচিব হেলালুদ্দীন আহমদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন।

এদিকে দলের মনোনয়ন বোর্ডের সাক্ষাৎকারে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে দণ্ডিত পলাতক আসামি বিএনপির     ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের অংশগ্রহণের বিষয়ে কেউ অভিযোগ করলে নির্বাচন কমিশনের ‘কী করার আছে’ তা আলোচনা করে দেখা হবে বলে জানিয়েছেন নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম। গতকাল নির্বাচন কমিশনে সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি এ কথা বলেন। বিএনপি নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে ‘মিথ্যা ও হয়রানিমূলক’ মামলা না করতে ইসি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে ‘প্রয়োজনীয় নির্দেশনা’ দেবে বলেও জানিয়েছেন তিনি। গতকাল সকাল থেকে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে মনোনয়নপ্রত্যাশীদের সাক্ষাৎকার নিচ্ছে দলের পার্লামেন্টারি বোর্ড। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও লন্ডন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে এ সাক্ষাৎকারে যোগ দিচ্ছেন বলে মনোনয়নপ্রত্যাশীরা জানিয়েছেন। এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে নির্বাচন কমিশনার রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন, ‘আপনারা বলেছেন, আমরা শুনেছি। এ ধরনের কোনো কিছু মনিটর করার মতো নিজস্ব কোনো ক্যাপাসিটি আমাদের নেই। যদি কেউ তথ্যপ্রমাণসহ আমাদের কাছে অভিযোগ করেন, তাহলে আইনের মধ্যে যদি কিছু থেকে থাকে, সে ক্ষেত্রে আমরা আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য যথাযথ কর্তৃপক্ষকে বলব। আর আইনের মধ্যে যদি কিছু না থাকে, তাহলে আমরা কমিশনের সঙ্গে বসে কী করতে পারি, তা পর্যালোচনা করে দেখে তারপর সে ব্যাপারে সিদ্ধান্ত দেব।’ এই নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘একজন দণ্ডিত আসামি দেশে থাকলে তিনি হয় কারাগারে থাকবেন, অথবা পলাতক। কেউ কারাগারে থাকলে এ ধরনের কাজ করতে পারেন না। জেল থেকে জামিনে এসে করলে কোনো অসুবিধা ছিল না। কিন্তু এই ক্ষেত্রটা একবারেই ভিন্ন। আইনের মধ্যে কী আছে তা দেখে আমরা ব্যবস্থা নেব।’

বিএনপির বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ : সচিবের সঙ্গে সাক্ষাতের পরে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কর্নেল (অব.) ফারুক খান সাংবাদিকদের বলেন, ‘গত দুই দিনে নির্বাচনী আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে। আজকে দেশবাসী দেখেছে, বাংলাদেশের একজন পলাতক দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি তারেক রহমান বিএনপির যারা প্রার্থী তাদের সঙ্গে কথা বলছেন স্কাইপি বা অন্য কোনো মাধ্যমে, টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে, যেটা বাংলাদেশের নির্বাচনী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এ ছাড়া সুপ্রিম কোর্টের দুই মাস আগের একটা নির্দেশনা আছে যে তারেক রহমানের কোনো বক্তব্য কোনো জায়গায় প্রচার করা যাবে না। সুতরাং এটি আমাদের সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশনার সুস্পষ্ট লঙ্ঘন এবং আদালত অবমাননার শামিল এবং সেই সঙ্গে নির্বাচন কমিশন এটাও বলেছে, গঠনতন্ত্র পরিবর্তন সাপেক্ষে তারেক রহমান বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে পারেন না।’ তিনি বলেন, ‘আমরা মনে করি, এটা নির্বাচনের এবং সর্বোচ্চ আদালতের আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এটা নির্বাচনী ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করবে। আমরা লিখিতভাবে অভিযোগ দিয়েছি। আমরা আশা করছি নির্বাচন কমিশন যথাযথভাবে দ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে।’ আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলের সাংগঠনিক সম্পাদক মুহিবুল ইসলাম চৌধুরী নওফেল, অ্যাডভোকেট ফজিলাতুন্নেছা বাপ্পি, অ্যাডভোকেট রিয়াজুল কবীর কাউসার প্রমুখ। ফারুক খান অভিযোগ করে বলেন, ‘গত পরশু ঐক্যফ্রন্ট দিনব্যাপী সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বসে নির্বাচনী প্রচারণা করেছে। সেখানে এমন এমন কথা বলা হয়েছে, যেগুলো নির্বাচনপূর্ববর্তী আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন। এর মাধ্যমে নির্বাচনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার প্রয়াস হচ্ছে। এগুলো যদি অব্যাহত থাকে তাহলে নির্বাচন আরও প্রশ্নবিদ্ধ হবে। আমরা এ জন্য নির্বাচন কমিশনকে শক্ত পদক্ষেপ নেওয়ার অনুরোধ করেছি। ইসির পক্ষ থেকে তারা বলেছে, এ ব্যাপারে তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে ব্যবস্থা নেবে।’ তারেক রহমান দলীয় কার্যক্রমে অংশ নিয়েছেন। কিন্তু ‘হাসিনা : এ ডটারস টেল’ নামক ডিজিটাল প্রচারণার মাধ্যমে আচরণবিধি লঙ্ঘন হচ্ছে কি না—জানতে চাইলে ফারুক খান বলেন, ‘এটা বিনোদন মাধ্যমে দেখা হচ্ছে এবং মানুষ টাকা দিয়ে দেখছে। এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।’

দলের সভাপতি সাধারণ সম্পাদকের ছবি চেয়ে ইসির চিঠি : দলীয় সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের ছবি চেয়ে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে চিঠি পাঠিয়েছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। গত বৃহস্পতিবার ইসির উপ-সচিব আব্দুল হালিম খান স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত চিঠি দলগুলোর সাধারণ সম্পাদক বরাবর পাঠানো হয়। চিঠিতে বলা হয়, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের ওয়েবসাইটে প্রদর্শিত নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের বিভিন্ন তথ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট দলের চেয়ারম্যান বা সভাপতি ও মহাসচিব বা সাধারণ সম্পাদকের ছবি প্রদর্শিত হওয়া প্রয়োজন। এ লক্ষ্যে চেয়ারম্যান বা সভাপতি ও মহাসচিব বা সাধারণ সম্পাদকের সম্প্রতি তোলা দুই কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে প্রেরণের জন্য অনুরোধ করা হলো।

 

সর্বশেষ খবর