মঙ্গলবার, ১১ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

অসাধু চক্রের খপ্পরে এলপিজি খাত

গ্যাস আমদানি না করে নামিদামি প্রতিষ্ঠানের বোতল সংগ্রহ করে অবৈধভাবে গ্যাস রিফিল করে বাজারজাত করছে একটি চক্র, ভোক্তাদের ঠকিয়ে অনিরাপদ করে তুলছে এলপি গ্যাস শিল্প, অবৈধ ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি

নিজস্ব প্রতিবেদক

অসাধু প্রতারক কিছু ব্যবসায়ীর খপ্পরে পড়ে অনিরাপদ হয়ে উঠছে দেশের তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) খাত। সাধারণ মানুষের চাহিদা পূরণে বিকল্প জ্বালানি হিসেবে প্রাকৃতিক গ্যাসের পরিবর্তে জনপ্রিয় হয়ে ওঠা এলপিজি এখন চরম হুমকিতে পড়েছে। ফলে ভোক্তারা যেমন প্রতারণার শিকার হচ্ছেন; একই সঙ্গে দেশে নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলোর সুনামও ক্ষুণ্ন হচ্ছে। খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলোর এলপিজির সিলিন্ডার সংগ্রহ করে গ্যাস রিফিল করে প্রতারক চক্রটি বাজারে বিক্রি করছে। এর মধ্য দিয়ে অনিরাপদ হয়ে উঠছে এলপি গ্যাস শিল্প। বাসাবাড়িতে গ্যাস সিলিন্ডারে দুর্ঘটনা বাড়ছে। অবৈধ এলপিজি ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানিয়েছেন প্রকৃত ব্যবসায়ীরা। জানা যায়, ২০ বছর আগে ১৯৯৭ সালে সীমিত আকারে এলপি গ্যাস আমদানির মাধ্যমে সাধারণ মানুষের কাছে বিকল্প এই জ্বালানি পৌঁছে দেয় সরকার। ২০১০ সালের দিকে অভ্যন্তরীণভাবে প্রাকৃতিক গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ করে দিলে এর চাহিদা অনেক বেড়ে যায়। এ সময় সরকারের সংশ্লিষ্ট সংস্থা প্রায় ৫০টি প্রতিষ্ঠানকে এলপি গ্যাস আমদানির অনুমোদন দেয়। ওই সময় মাত্র ৮০ হাজার টনের চাহিদা থেকে বেড়ে বর্তমানে তা প্রায় আট লাখ টনে দাঁড়িয়েছে। তবে চাহিদা বৃদ্ধির এই সুযোগে গড়ে ওঠে কিছু অবৈধ গ্যাস সিলিন্ডার বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠান। সংখ্যায় ও পরিমাণে কম হলেও তারা গ্যাস আমদানি না করেও কৌশলে নামিদামি প্রতিষ্ঠানের সিলিন্ডার সংগ্রহ করে অবৈধভাবে গ্যাস রিফিলিং এবং তা বাজারজাত করতে থাকে। কিন্তু মান নিয়ন্ত্রণ না করা ও  ওজনে কম দেওয়ার কারণে টনক নড়ে সরকারের। সম্প্রতি বাসাবাড়িতে অনিরাপদ ও নিম্নমানের সিলিন্ডার সরবরাহের ফলে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা বাড়তে থাকে। বিষয়টি সরকারের নজরে এলে সতর্ক করে চিঠি দেয় প্রকৃত গ্যাস আমদানিকারকদের। সরকারের এই নির্দেশনার পর আমদানিকারকরা সতর্ক হলে বাজারে কৃত্রিম সংকট তৈরির জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে অসাধু চক্রটি। উদ্যোক্তারা জানান, দেশের নামিদামি প্রতিষ্ঠানগুলো এলপিজি বাজারজাতের মাধ্যমে সাধারণ মানুষের জ্বালানি চাহিদা ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করলেও অসাধু ব্যবসায়ীরা আমদানি না করে তৃতীয় পক্ষ হিসেবে গ্যাস রিফিল করে বাজারজাত করছে। এর ফলে ভোক্তারা দাম এবং ওজনে যেমন ঠকছেন একই সঙ্গে অনিরাপদ গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারের ফলে বাসাবাড়িতে গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। ফলে বিপজ্জনক হয়ে পড়েছে বিকল্প জ্বালানি এলপিজি। জানতে চাইলে লাফ্স গ্যাস বাংলাদেশ লিমিটেডের পরিচালক ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ সাঈদুল ইসলাম বলেন, ভোক্তাদের নিরাপদ জ্বালানি নিশ্চিত করাসহ ন্যায্য দামে গ্যাস সরবরাহের জন্য সম্প্রতি জ্বালানি মন্ত্রণালয় প্রকৃত আমদানিকারকদের নির্দেশ দেয়। এর ফলে আমরা ইতিমধ্যে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নিয়েছি। ভোক্তা পর্যায়ে সতর্কতা তৈরিতেও আমরা কাজ করছি। কিন্তু একদল অবৈধ সুবিধাভোগী বাজারে নানা সংকটের গুজব ছড়াচ্ছে। মন্ত্রণালয়ের চিঠিতে প্রত্যেক প্রতিষ্ঠানকে নিজস্ব সিলিন্ডারে গ্যাস সরবরাহ ও একই সঙ্গে নিরাপদ সিলিন্ডার বাজারজাত নিশ্চিত করার তাগিদ দেওয়া হয় বলে তিনি জানান।

অনুসন্ধানে জানা যায়, আমদানিকারকদের কাছ থেকে গ্যাস সংগ্রহ করে বাজারে ৪-৫টি প্রতিষ্ঠান প্রায় ৪ থেকে ৫ হাজার টন গ্যাস বোতলজাত করে বাজারে বিক্রি করছে। এসব সিলিন্ডার যেমন নিম্নমানের একই সঙ্গে ওজনে কম দেওয়া হয়। ১২ কেজি একটি সিলিন্ডারে ১০ কেজি গ্যাস দেওয়া হয়। এ ছাড়া নামি প্রতিষ্ঠানগুলোর চেয়ে কম দামে তারা বিক্রি করছে। যেসব এলাকায় তারা গ্যাস সরবরাহ করছে ওইসব এলাকায় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোকে গ্যাস সিলিন্ডার সরবরাহে বাধা সৃষ্টি করা হয়। ফলে খ্যাতনামা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের কাছে দাম, মান এবং সুনামের দিক থেকে অনেকটা জিম্মি হয়ে পড়েছিল। এসব প্রতিষ্ঠানের সরবরাহ বন্ধ হওয়ার ফলে বাজারে কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে কিনা জানতে চাইলে মোহাম্মদ সাঈদুল ইসলাম বলেন, বাজারে গ্যাসের কোনো সংকট নেই। বরং চাহিদার চেয়ে সরবরাহ বেশি রয়েছে। এতটা সক্ষমতা আছে যে চোরাই বাজারের ওই পরিমাণ গ্যাস একটি প্রতিষ্ঠানই নিশ্চিত করতে পারে। তিনি বলেন, মূল্যবৃদ্ধির অভিযোগও ভিত্তিহীন। বসুন্ধরা এলপি গ্যাসের মহাব্যবস্থাপক পরিকল্পনা ও সম্প্রসারণ প্রকৌশলী মো. জাকারিয়া জালাল জানান, দেশের নামি প্রতিষ্ঠানগুলো দিন দিন অবৈধ গ্যাস সরবরাহকারীদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়ছিল। বোটলিং প্রতিষ্ঠানগুলো ৩ কোটি টাকা বিনিয়োগ করে ৩০০ কোটি টাকার বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর সুনাম প্রশ্নের মুখে ফেলেছে। ভোক্তাদের ঠকিয়ে নিজেরা ফুলে-ফেঁপে বড় হলেও অনিরাপদ করে তুলছে এলপি গ্যাস শিল্প। ফলে অনেক বাসাবাড়িতে আজ গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটছে। তিনি নিরাপদ জ্বালানি নিশ্চিত করাসহ অবৈধ এলপিজি ব্যবসায়ীদের আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

সর্বশেষ খবর