রবিবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা
দেশের রাজনীতিতে বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার তৎপরতা ৫

সড়ক আন্দোলনেও ইন্ধন ছিল পাকিস্তানি আইএসআইর

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশের রাজনীতিতে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইর সুদূরপ্রসারী প্রভাব বিস্তারের আরেকটি দিক হলো চীনের সঙ্গে বিএনপির সম্পর্ক। বিএনপি নেতারা চীনের সঙ্গে সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ করার ক্ষেত্রে আইএসআইর সহায়তা চেয়ে এসেছেন। আইএসআইও এ ক্ষেত্রে সক্রিয় ভূমিকা রাখার চেষ্টা করেছে। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আইএসআইয়ের বিভিন্ন গোপন বৈঠকের নথিতে এ ব্যাপারে উল্লেখ দেখা যায়। এ ছাড়া দেশের ভিতর সরকারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন আন্দোলনে পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থার মদদেরও প্রমাণ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ সড়ক নিরাপত্তা নিয়ে জুলাইয়ের শেষ ও আগস্টের প্রথম সপ্তাহে ঢাকাসহ সারা দেশে শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে বিক্ষোভ ছড়িয়ে পড়ে, তাতে মদদ দেওয়ার চেষ্টা করেছিল আইএসআই। বিএনপি নেতাদের সঙ্গে আইএসআইয়ের কথোপকথনে এই অপচেষ্টার প্রমাণ পাওয়া গেছে।

এ ছাড়া দেশের পত্রপত্রিকাগুলোয় আওয়ামী লীগ সরকার ও ভারতবিরোধী জোরালো প্রচারণা চালানোর ব্যাপারে আইএসআই সুনির্দিষ্ট একটি প্রকল্প গ্রহণ করেছে বলে জানা গেছে। এ উদ্দেশ্যে একাধিক প্রভাবশালী সংবাদপত্রের সম্পাদকের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলাদেশে আইএসআইয়ের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষাকারী ব্যক্তিরা। একাধিক সূত্র জানায়, বিএনপির সঙ্গে আইএসআইয়ের যোগাযোগের অনেকগুলো পথের একটি হলো দুবাইতে স্থানীয় বিএনপি নেতা জাকির হোসেন ও সেখানে আইএসআইয়ের এজেন্ট শহীদ মেহমুদ। এ বছরের জুন থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত এ দুজন দুবাইয়ের বিভিন্ন হোটেলে অন্তত ১১টি বৈঠক করেছেন। গত ৪ আগস্ট থেকে ১১ আগস্টের বৈঠকে জাকির হোসেন ও শহীদ মেহমুদের কথাবার্তায় নিরাপদ সড়ক আন্দোলনের প্রসঙ্গ এসেছে। বৈঠকে শহীদ মেহমুদ বলেন, তিনি আশা করছেন ‘বাসের বিষয়টির’ একটি সুরাহা হয়েছে। এর জবাবে জাকির হোসেন বলেন, আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। ওই একই বৈঠকে শহীদ মেহমুদ জানতে চান, ‘হলুদ ব্যক্তিদের’ সঙ্গে বৈঠকের কোনো অগ্রগতি তিনি জানেন কিনা। এখানে হলুদ ব্যক্তি বলতে স্পষ্টত চীনা গোয়েন্দা সংস্থার লোকদের বোঝানো হয়েছে। শহীদ মেহমুদ বলেন, আইএসআইয়ের সঙ্গে সর্বশেষ বৈঠকে তারেক রহমান চীনের সঙ্গে বিএনপি নেতাদের বৈঠকের ব্যাপারে কথা বলেছিলেন। উল্লেখ্য, তারেক রহমানের সঙ্গে আইএসআইয়ের শীর্ষ দুই কর্মকর্তার গোপন বৈঠক হয়েছিল ৪ জুলাই সৌদি আরবের জেদ্দায়। ওই বৈঠকে আইএসআইয়ের শীর্ষস্থানীয় নীতিনির্ধারণী কর্মকর্তা জাভেদ মেহেদী উপস্থিত ছিলেন। জাকির হোসেনের সঙ্গে দুবাইয়ের ওই বৈঠকে আইএসআই এজেন্ট শহীদ মেহমুদ ৩ ব্যক্তির নাম চান, যারা বিশেষ কাজে ‘হলুদ ব্যক্তিদের’ সঙ্গে বৈঠক করবেন। তিনি ‘হুমায়ুন’ নামে এক ব্যক্তির নাম উল্লেখ করেন, যিনি এ ব্যাপারে জাভেদ মেহেদীর সঙ্গে দ্রুত যোগাযোগ করবেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, এই ‘হুমায়ুন’ হলেন হুমায়ুন কবির, যিনি আন্তর্জাতিক বিষয়াবলি দেখাশোনা করেন। জাকির হোসেন জানান, তিনি তারেক রহমানের কাছ থেকে একটি হোয়াটসঅ্যাপ আইডি পেয়েছেন, যেটিতে ফোন ছাড়াই যোগাযোগ করা যাবে। তিনি জানান, হুমায়ুনের স্থানীয় ফোন নম্বরটি এ কাজে ব্যবহার করা হচ্ছে। শহীদ মেহমুদ জানান, এই হোয়াটসঅ্যাপ নম্বরে আইএসআইয়ের শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তা জাভেদ মেহেদী সরাসরি যোগাযোগ করবেন। পরে এক আলাপে শহীদ মেহমুদ নিশ্চিত করেন, জাভেদ মেহেদীর সঙ্গে হুমায়ুনের যোগাযোগ হয়েছে। পরে এক টেলিফোন আলাপে জাকির হোসেন শহীদ মেহমুদকে জানান, তারেক রহমান পরদিন ১২ আগস্টের মধ্যে ৩ জনের নাম দেবেন, যারা চীন সফরে যাবেন। এদের একজন হবেন হুমায়ুন। অপর দু-একজনের নাম তারেক রহমান পরে ঠিক করবেন। উল্লেখ্য, ১৩-১৬ নভেম্বর হুমায়ুন কবির, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং আরও দুই বিএনপি নেতা চীন সফর করেন।

সর্বশেষ খবর