মঙ্গলবার, ২৫ ডিসেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

সুষ্ঠু নির্বাচনে সেনাবাহিনীই একমাত্র ভরসা : ড. কামাল

নিজস্ব প্রতিবেদক

জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আহ্বায়ক ও গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীর বাসায় হানা দিয়ে বাড়াবাড়ি করছে পুলিশ। অন্যদিকে বিজিবি সদস্যরা নেতা-কর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে হানা দিচ্ছে, হয়রানি করছে। এ অবস্থায় সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে সেনাবাহিনীই একমাত্র ভরসা। অতীতের মতো সেনাবাহিনী নিরপেক্ষ ও কার্যকর ভূমিকা পালন করবে বলে আশা প্রকাশ করেন ড. কামাল। তিনি বলেন, জনমত যাচাই করলে দেখবেন সবাই পরিবর্তন চায়। একটা রায় হয়ে আছে। পূর্ণাঙ্গ রায় পাব ৩০ ডিসেম্বর। সেনাবাহিনী অতীতে নিরপেক্ষ ছিল। আশা করি এ নির্বাচনেও তারা জনগণের আকাঙ্ক্ষা পূরণে ভূমিকা রাখবে। গতকাল বিকালে রাজধানীর পুরানা পল্টনে ঐক্যফ্রন্টের অস্থায়ী কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন। লিখিত বক্তব্যটি পাঠ করেন নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না। এ সময় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী, গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, গণফোরামের কার্যকরী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা মহসীন মন্টু প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। ড. কামাল হোসেন বলেন, ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী নেতা-কর্মীদের মাঠে দাঁড়াতে দেওয়া হচ্ছে না। ভোট দেওয়া তো দূরের কথা, কাউকে ঘরে ঘুমাতেও দেওয়া হচ্ছে না। একদিকে দেশে সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত হচ্ছে না, অন্যদিকে বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসাও দেওয়া হচ্ছে না। এ অবস্থায় একমাত্র ভরসা সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। তাদের কাছ থেকে দেশের মানুষ নিরাপদ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠান প্রত্যাশা করে। শেষ পর্যন্ত নির্বাচনে থাকবেন কিনা এ বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে ড. কামাল বলেন, থাকব, ইনশা আল্লাহ থাকব।

ড. কামাল বলেন, বিভিন্ন স্থানে বিজিবি মোতায়েন করা হলেও এখন পর্যন্ত পরিস্থিতির তেমন কোনো উন্নতি হয়নি বরং পুলিশের উপস্থিতি ও বাড়াবাড়ি পরিস্থিতির অবনতি ঘটাচ্ছে। জনগণের আশার কথা, সেনাবাহিনী মাঠে নেমেছে। দেশে নিরাপদ পরিবেশে অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন অনুষ্ঠানে জাতি তাদের কাছে সে ভূমিকাই প্রত্যাশা করে।

ড. কামাল বলেন, সারা দেশে ঐক্যফ্রন্টের ধানের শীষ প্রতীকের প্রার্থী, নেতাকর্মী-সমর্থকদের মাঠে দাঁড়াতেই দেওয়া হচ্ছে না। দিন যত যাচ্ছে পুলিশের মারমুখী আচরণ ততই বাড়ছে। পুলিশ অনেকটা প্রতিপক্ষের ভূমিকায় অবতীর্ণ। এভাবে ভীতিকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করা হচ্ছে প্রতিটি নির্বাচনী এলাকায়। নিরাপদে ভোট চাওয়ার সুযোগও দেওয়া হচ্ছে না।

বিদেশি পর্যবেক্ষকদের ভিসা না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ইউরোপ-আমেরিকার পক্ষে বিদেশি এক সংস্থার ৩২ জনের জন্য নির্বাচন পর্যবেক্ষণের অনুমতি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু এই ৩২ জনকে বাংলাদেশে প্রবেশের জন্য সময়মতো ভিসা দেওয়া হচ্ছে না। তিনি আরও বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও মেয়রদের পদত্যাগ করে সংসদ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে আইন করা হলেও পদত্যাগ গৃহীত না হওয়া, বরং আদালত কর্তৃক তাদের মনোনয়ন একের পর এক বাতিল হওয়া, নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে ‘মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে’ ভোট কেন্দ্র পর্যবেক্ষণ করা, সরাসরি সম্প্রচার করায় বাধা, সাংবাদিকদের মোটরসাইকেল ব্যবহারে নিষেধাজ্ঞা, মোটরসাইকেলের জন্য পাস বা স্টিকার ইস্যু না করা, একসঙ্গে একাধিক মিডিয়ার সাংবাদিক একই ভোটকক্ষে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে নীতিমালা করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকে ঘিরে এমন বক্তব্যের পর জনমনে আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছে। অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ এবং সবার জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিত করা, সবার কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের দাবি উচ্চারিত হলেও নির্বাচন কমিশন কাঙ্ক্ষিত পরিবেশ সৃষ্টিতে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে। সংবাদ সম্মেলনে দেশব্যাপী মামলা-হামলা, নির্যাতন-গ্রেফতার, গুলি ও অগ্নিসংযোগের খতিয়ান তুলে ধরেন ড. কামাল হোসেন। তিনি বলেন, তফসিল ঘোষণার পর থেকে এ পর্যন্ত ঐক্যফ্রন্টের প্রায় সাত হাজার নেতা-কর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর