শুক্রবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সংরক্ষিত আসনে তৃতীয় লিঙ্গ সুযোগ নেই সংবিধানে

আরাফাত মুন্না

একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী হতে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন ফরম কিনে আলোচনায় এসেছেন তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়া হিজড়া সম্প্রদায়ের আটজন। তবে সংবিধান ও প্রচলিত আইনে তৃতীয় লিঙ্গের কারও সংরক্ষিত নারী আসনে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ দেখছেন   না আইন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন, সংবিধানের সংশ্লিষ্ট অনুচ্ছেদে সংরক্ষিত মহিলা সদস্যের কথা বলা হয়েছে। তাই এখানে অন্য কোনো লিঙ্গের কারও যাওয়ার সুযোগ নেই। আইনজ্ঞরা বলেন, তৃতীয় লিঙ্গের কেউ যদি ভোটার তালিকায় নারী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন, তাহলে কিছুটা সুযোগ থাকবে। তবে সে ক্ষেত্রে তৃতীয় লিঙ্গের ওই মানুষটি নারী হিসেবেই বিবেচিত হবেন। ২০১৩ সালে হিজড়া জনগোষ্ঠী তৃতীয় লিঙ্গ হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ২০১৪ সালের ২৬ জানুয়ারি হিজড়াদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দিয়ে গেজেট প্রকাশ করে সরকার। গেজেটে বলা হয়, ‘সরকার বাংলাদেশের হিজড়া জনগোষ্ঠীকে হিজড়া লিঙ্গ হিসাবে চিহ্নিত করিয়া স্বীকৃত প্রদান করিল।’ সংরক্ষিত নারী আসনের বিষয়ে সংবিধানের ৬৫ (৩) অনুচ্ছেদের বলা হয়েছে, ‘সংবিধান (সপ্তদশ সংশোধন) আইন, ২০১৮ প্রবর্তনকালে বিদ্যমান সংসদের অব্যবহিত পরবর্তী সংসদের প্রথম বৈঠকের তারিখ হইতে শুরু করিয়া পঁচিশ বৎসরকাল অতিবাহিত হইবার অব্যবহিত পরবর্তীকালে সংসদ ভাংগিয়া না যাওয়া পর্যন্ত পঞ্চাশটি আসন কেবল মহিলা-সদস্যদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে এবং তাহারা আইনানুযায়ী পূর্বোক্ত সদস্যদের দ্বারা সংসদে আনুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতির ভিত্তিতে একক হস্তান্তরযোগ্য ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হইবেন: তবে শর্ত থাকে যে, এই দফার কোন কিছুই এই অনুচ্ছেদের (২) দফার অধীন কোন আসনে কোন মহিলার নির্বাচন নিবৃত্ত করিবে না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে সাবেক আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংবিধানে সংরক্ষিত নারী আসনের সংসদ সদস্যদের বিষয়ে কেবল মহিলা সদস্যদের কথা বলা হয়েছে। এ কারণে এ আসনগুলোয় অন্য কোনো লিঙ্গের সদস্য হওয়ার সুযোগ নেই। তৃতীয় লিঙ্গের কেউ যদি নারী হিসেবে ভোটার হন, তাহলে বাধা আছে কিনা- জবাবে সাবেক এই আইনমন্ত্রী বলেন, সে ক্ষেত্রে কোনো বাধা না থাকলেও তিনি নারী হিসেবেই বিবেচিত হবেন। তৃতীয় লিঙ্গের হিসেবে নয়। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক বলেন, প্রচলিত আইনে তৃতীয় লিঙ্গের কারও সংরক্ষিত নারী আসনে সংসদ সদস্য হওয়ার সুযোগ নেই। তবে আইন সংশোধন করে হলেও হিজড়া সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি সংসদে আনা উচিত বলে মনে করেন তিনি। এ বিষয়ে সাবেক বিচারপতি ব্যারিস্টার এ বি এম আলতাফ হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সংবিধানে সংরক্ষিত নারী সদস্যের কথা উল্লেখ করা আছে। এখানে যিনি ওই আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন তিনিই ঠিক করবেন তিনি নারী কিনা। তিনি যদি হলফনামায় লিঙ্গ হিসেবে নারী লিখেন, তাহলে কোনো অসুবিধা নেই। তিনি আরও বলেন, কানাডা, যুক্তরাজ্য এমনকি ভারতেও তৃতীয় লিঙ্গের সংসদ সদস্য রয়েছেন। তাই মানবিক দিক বিবেচনা করে হলেও তৃতীয় লিঙ্গের মানুষকে সংসদে প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ দেওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর