সরকারি চিকিৎসকদের জন্য পূর্ণাঙ্গ প্র্যাকটিসিং গাইডলাইন (নীতিমালা) তৈরি করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি স্বাধীন মেডিকেল কমিশন গঠনের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। গতকাল একটি রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি এফআরএম নাজমুল আহাসান ও বিচারপতি কে এম কামরুল কাদেরের সমন্বয়ে গঠিত হাই কোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেয়।
আদেশে, স্বাস্থ্য সচিব, স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক, বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) সভাপতি এবং বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতিকে এই নির্দেশনা বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছে। এ ছাড়া সরকারি চিকিৎসকদের বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের অনুমতি দিয়ে করা আইনটি কেন বাতিল ঘোষণা করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুলও জারি করেছে আদালত। আদালতে আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন আবদুল সাত্তার পালোয়ান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন এ বি এম আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (বাশার)।
শুনানিতে আদালত বলেছে, চিকিৎসা ক্ষেত্রে মানুষের জীবন নিয়ে বাণিজ্য করা যাবে না। সরকার তো চিকিৎসা ক্ষেত্রে বরাদ্দ প্রদানের ক্ষেত্রে কোনো কার্পণ্য করছে না। কিন্তু হাসপাতালে তো ওষুধ নেই, বাজারে পাওয়া যায়। আদালত বলে, সম্প্রতি দুর্নীতি দমন কমিশন ১১টি সরকারি হাসপাতালে অভিযান পরিচালনা করে। অভিযানকালে ঢাকায় ৪০ শতাংশ এবং ঢাকার বাইরের হাসপাতালগুলোতে ৬২ শতাংশ চিকিৎসককে কর্মস্থলে তারা পায়নি। এতেই বোঝা যায় দেশের স্বাস্থ্যখাতে কী অবস্থা।
রিটকারী আইনজীবী আবদুল সাত্তার পালোয়ান শুনানিতে বলেন, সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসক অনুপস্থিতির কারণে যথাযথ চিকিৎসা সেবা পাচ্ছে না জনগণ। দ্য মেডিকেল প্র্যাকটিস অ্যান্ড প্রাইভেট ক্লিনিকস অ্যান্ড ল্যাবরেটরিজ (রেগুলেসন্স) অর্ডিন্যান্স-১৯৮২ এর ৪ ধারায় সার্ভিস আওয়ারের বাইরে প্রাইভেট প্র্যাকটিসের সুযোগ রাখা হয়েছে। আদালত বলে, সার্ভিস আওয়ারে সময়সূচির উল্লেখ রয়েছে কীভাবে? আইনজীবী বলেন, লক্ষ্মীপুরে সরকারি হাসপাতালের চিকিৎসক নিজ ক্লিনিকে থাকায় একজন রোগী চিকিৎসা না পেয়ে মৃত্যুবরণ করেছে। এ কারণে ওই অর্ডিন্যান্সের ৪ ধারাটি বাতিল ঘোষণা করা হোক। কারণ যদি কোনো চিকিৎসক ওই ধারাটি লঙ্ঘন করেন তাহলে ৫ হাজার টাকা জরিমানার বিধান রাখা হয়েছে।
ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বাশার শুনানিতে বলেন, জনগণের স্বাস্থ্য সেবা যাতে নিশ্চিত হয় সেজন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হাসপাতালে চিকিৎসকদের উপস্থিতির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এ পর্যায়ে আদালত বলে, চিকিৎসকরা তো মানুষ। এখন কোনো সার্জন যদি রাত ২টা পর্যন্ত প্রাইভেট হাসপাতাল বা ক্লিনিকে চিকিৎসা দেন তাহলে ওই চিকিৎসক কীভাবে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে সকালে চিকিৎসা দিয়ে থাকেন? তাকে তো শারীরিক ও মানসিকভাবে ফিট থাকতে হয়। আদালত আরও বলে, ১৯৮২ সালের মতো পরিস্থিতি তো দেশে এখন আর নেই। প্রতিবছরই প্রচুর সংখ্যক চিকিৎসক বের হচ্ছে। কিন্তু সমস্যা হলো সবাই ঢাকার হাসপাতালে থাকতে চায়। পরে আদালত অন্তর্বর্তীকালীন আদেশ দেওয়ার পাশাপাশি রুলও জারি করে।
পরে আবদুল্লাহ আল মাহমুদ বাশার বলেন, চিকিৎসা পেশা নিয়ে অনেক আইন রয়েছে। ওইসব আইন পর্যালোচনা করে একটি সমন্বিত প্র্যাকটিসিং নীতিমালা প্রণয়ন করতে বলেছে হাই কোর্ট। আদেশের পর আইনজীবী আবদুস সাত্তার জানান, গত ৪ ফেব্রুয়ারি সরকারি চিকিৎসকদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধের নির্দেশনা চেয়ে হাই কোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছিল। ওই রিটের শুনানি নিয়ে আদালত এ আদেশ দিয়েছে।
 
                         
                                     
                                                             
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                     
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                         
                                        