পুরান ঢাকায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় পৃথক তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। গতকাল শিল্প মন্ত্রণালয়, ফায়ার সার্ভিস ও জাতীয় মানবাধিকার কমিশন এসব কমিটি গঠন করে। এ ছাড়া ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন বিভিন্ন মন্ত্রী, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) মেয়র, পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি)সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা।
অতিরিক্ত সচিব মফিজুল হককে আহ্বায়ক করে ১২ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করেছে শিল্প মন্ত্রণালয়। কমিটিকে পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। এর আগে একই ঘটনা তদন্তে সাত দিনের সময় দিয়ে উপপরিচালক দিলীপ কুমার ঘোষকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠন করে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতর। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন পাঁচ সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করে। কমিটিকে ৩০ কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। সকালে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে যান আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। এরপর তারা অগ্নিদগ্ধদের দেখতে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে যান। বেলা ১১টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। অগ্নিকান্ডে দগ্ধদের দেখতে বার্ন ইউনিটে যান শিল্পমন্ত্রী নুরুল মজিদ মাহমুদ হুমায়ুন এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী ডা. এনামুর রহমান। দুপুরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গিয়ে অগ্নিকান্ডে নিহতদের জন্য আজ শুক্রবার বাদ জুমা মসজিদে গায়েবানা জানাজা ও বিশেষ দোয়া এবং সব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানে বিশেষ প্রার্থনা করার অনুরোধ জানিয়েছেন ডিএসসিসি মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন। তিনি বলেন, পুরান ঢাকায় কোনো ধরনের দাহ্য পদার্থ ও কেমিক্যালের গোডাউন থাকতে দেওয়া হবে না। এসব গোডাউন উচ্ছেদের জন্য কঠোর থেকে কঠোরতর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন আইজিপি ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারী। বিকাল ৩টার দিকে বার্ন ইউনিটে আহতদের দেখতে যান ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া। একে একে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান কাজী রিয়াজুল হক ও স্থপতি ইকবাল হাবিব এবং বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা।
চকবাজারে বিএনপির প্রতিনিধি দল : চকবাজার ট্র্যাজেডি পরিদর্শন করেছে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দল। দলের ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লা বুলুর নেতৃত্বে প্রতিনিধি দলটি সকাল ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে যায়। চকবাজারের পাশাপাশি তারা ঢামেক হাসপাতালে প্রায় দুই ঘণ্টা অবস্থান করে নিহতদের পরিবারের স্বজনদের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করেন। আহতদের পরিবারের স্বজনদের সান্ত্বনার পাশাপাশি দল থেকে সব ধরনের সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দেন তিনি। এ সময় বিএনপির যুগ্মমহাসচিব ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দিন খোকন, ঢাকা বিভাগীয় সহসাংগঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদসহ নেতা-কর্মীরা উপস্থিত ছিলেন। এদিকে রাত সাড়ে ৯টার দিকে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদল চকবাজার এলাকায় ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন।
স্বজনহারাদের পাশে মেয়র প্রার্থী আতিকুল : রাজধানীর চকবাজারের চুড়িহাট্টায় অগ্নিকান্ডে ধ্বংসস্ত‘পে পরিণত হওয়া এলাকা পরিদর্শন করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। গতকাল সকালে তিনি ঘটনাস্থলে গিয়ে স্থানীয় বাসিন্দাদের কাছে অগ্নিকান্ডের কারণ ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ সম্পর্কে খোঁজখবর নেন। আগুনে পুড়ে যাওয়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের স্বজনদের সান্ত্বনা দেন তিনি। এরপর সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে আতিকুল ইসলাম বলেন, ‘এই ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের ঘটনায় আমরা যাদের হারিয়েছি তাদের কোনোভাবেই ফেরত পাব না। কিন্তু এখান থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে। আজকে যেসব পরিবারের মানুষ চিরতরে চলে গেছেন, তারাই শুধু বোঝেন স্বজন হারানোর যন্ত্রণা।’ শ্রমিকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা নৈতিক দায়িত্ব মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা ব্যবসা করব। তাই আমাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে যারা কাজ করেন তাদের নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্বও আমাদের। এমন ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে মালিক-শ্রমিক সবাই নিজেদের সচেতন করবেন এমনটাই আশা করব।’ এর আগে আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম মালিবাগ চৌধুরীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে মহান একুশে ফেব্রুয়ারি ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন। চকবাজার থেকে ফিরে তিনি ঢাকার উত্তরা এলাকার মাস্টারবাড়ী পোলারটেক দক্ষিণখানে সাংবাদিকদের একটি আবাসিক প্রকল্পের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে র খোঁজখবর নেন ও সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন।
তিনি সাংবাদিকদের আবাসন প্রকল্পে সব ধরনের সহযোগিতার আশ^াস দেন। পরে তিনি ভাসানটেক এলাকায় থানা আওয়ামী লীগ আয়োজিত নির্বাচনী পথসভায় বক্তব্য দেন।
