শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
সংসদে প্রধানমন্ত্রী

জঙ্গি-সন্ত্রাস মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত

আত্মসমর্পণ করা মাদক ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন, যানজট নিরসনে গণপরিবহন শক্তিশালী, প্রতিটি গ্রামে যাবে নাগরিক সুবিধা, রাজধানীর পাশে স্যাটেলাইট সিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক

জঙ্গি-সন্ত্রাস মাদকবিরোধী অভিযান অব্যাহত

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাস, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণে সরকারের জিরো টলারেন্স নীতি ও পুলিশের চলমান অভিযান ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকবে। আত্মসমর্পণকারী মাদক ব্যবসায়ীদের পুনর্বাসন করা হবে। তিনি বলেন, ক্ষমতা ভোগ করার বিষয় নয়। জনসেবার বিষয়। রাজনীতি করি দেশের মানুষের জন্য, নিজের জন্য নয়। গতকাল জাতীয় সংসদ অধিবেশনের প্রশ্নোত্তর পর্বে একাধিক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত অধিবেশনে সরকারি দলের মাহফুজুর রহমানের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাদক নিয়ন্ত্রণে তাঁর সরকারের জিরো টলারেন্স নীতির কথা তুলে ধরে বলেন, মাদকের ভয়াবহ আগ্রাসন থেকে যুব সমাজকে মুক্ত রাখার জন্য আওয়ামী লীগ সরকার বদ্ধপরিকর। সমাজকে মাদকমুক্ত করার জন্য একটি বাস্তবমুখী পরিকল্পনার আওতায় নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ প্রণয়ন করা হয়েছে। যেখানে মাদকের পরিমাণ ভেদে সাজার মেয়াদ বৃদ্ধি করা হয়েছে। মাদক সংশ্লিষ্ট মামলাগুলো দ্রুত ও যথাযথভাবে নিষ্পত্তি করা হচ্ছে। 

জঙ্গিবাদ নির্মূলেও জিরো টলারেন্স নীতি : গাজী মোহাম্মদ শাহনওয়াজের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জানান, বর্তমান সরকার দেশে আইনের শাসন সমুন্নত রাখতে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। জঙ্গিবাদ নির্মূল সংক্রান্ত বর্তমান সরকার কর্তৃক গৃহীত জিরো টলারেন্স নীতির আলোকে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের অপারেশনাল ও লজিস্টিক সক্ষমতা বৃদ্ধি, স্পেশালাইজড নতুন ইউনিট কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ও অ্যান্টি টেরোরিজম ইউনিট (এটিইউ) গঠন, বাহিনীর সদস্যদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণ এবং আধুনিক তথ্য ও প্রযুক্তির ব্যবহার বহুলাংশে বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি জানান, জঙ্গিবাদ দমনে বাংলাদেশ পুলিশ এ যাবত বেশকিছু বড় ধরনের সফল অভিযান পরিচালনা করে জঙ্গি তৎপরতা প্রতিরোধ করেছে। জঙ্গি সংশ্লিষ্ট কাজের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্তকরণের সুবিধার্থে হ্যালো সিটি, রিপোর্ট টু র‌্যাব প্রভৃতি অনলাইন অ্যাপস চালু করা হয়েছে। জঙ্গিদের বিরুদ্ধে প্রচলিত আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের পাশাপাশি জামিনে মুক্তিপ্রাপ্ত, সাজাপ্রাপ্ত ও আটক জঙ্গিদের নিবিড় নজরদারির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। ইতিমধ্যে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদ দমনে সফলতা বিশ্বে ব্যাপকভাবে প্রশংসিত হয়েছে।

কাজী ফিরোজ রশীদের সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেখানে যেখানে মাদক চোলাচালান হয়, বিশেষ করে সীমান্তবর্তী জেলাগুলোতে মাদক নিয়ন্ত্রণ ও চোরাচালান বন্ধে সরকার পর্যাপ্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন-২০১৮ অনুযায়ী মাদক পরিবহন ও চোরাচালানের জন্য সর্বোচ্চ শাস্তির (মৃত্যুদ ) বিধান রাখা হয়েছে। প্রতিটি জেলায় মাদক নিরাময় কেন্দ্র স্থাপনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। তিনি বলেন, সরকার যাদের আত্মসমর্পণ করাচ্ছে (মাদক ব্যবসায়ী), তাদের চিকিৎসা ও কাউন্সিলিংয়ের মাধ্যমে মাদক থেকে দূরে রাখার পদক্ষেপ নিয়েছি। মাদক ব্যবসায়ীদের মধ্যে যারা আত্মসমর্পণ করছে তাদের সরকারের পক্ষ থেকে আর্থিক সাহায্য দেওয়া হচ্ছে, যাতে তারা অন্য কোনো ব্যবসায় নিয়োজিত হয়ে ভালোভাবে চলতে পারে।

ঢাকায় গণপরিবহন ব্যবস্থা চালু : জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর সম্পূরক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, রাজধানীর যানজট নিরসনে গণপরিবহন ব্যবস্থাকে শক্তিশালী করা হবে। আমরা যখনই সরকারে আসি তখনই গণপরিবহন ব্যবস্থার ওপর জোর দেই। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় এসে বিআরটিসিসহ গণপরিবহন ব্যবস্থাকে সম্পূর্ণ বন্ধ করে দিয়েছিল। কারণ বিআরটিসি লাভজনক নয়। আমরা ক্ষমতায় এসে আবার বিআরটিসিকে শক্তিশালী করার পদক্ষেপ নেই।

জাতীয় পার্টির কাজী ফিরোজ রশীদের প্রশ্নের জবাবে সংসদ নেতা বলেন, বিশ্বের সব দেশেই ট্রাফিক সমস্যা আছে। লন্ডন, যুক্তরাষ্ট্রসহ বড় বড় দেশেরও এ সমস্যা রয়েছে। কারণ জনসংখ্যা বাড়ছে, মানুষের আর্থিক অবস্থার উন্নতি হওয়ায় গাড়ি ব্যবহারের সংখ্যাও বাড়ছে। তিনি বলেন, ঢাকার যানজট নিরসনে আধুনিক ট্রাফিক সিগন্যাল ব্যবস্থা ও ডিজিটাল পদ্ধতি চালু করার পরিকল্পনা সরকার নিয়েছে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ থেকে বছরে আয় হবে ৪০০ কোটি টাকা : কুড়িগ্রাম-১ আসনের সংসদ সদস্য আসলাম সওদাগরের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটে সর্বমোট ৪০টি ট্রান্সপন্ডার আছে। বিশ্ববাজারে এর মূল্য প্রতিনিয়ত ওঠানাম করছে। বর্তমান বাজার অনুযায়ী এ স্যাটেলাইটের সব ট্রান্সপন্ডার থেকে বছরে প্রায় ৪০ থেকে ৫০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রাজস্ব আসবে, যা বাংলাদেশি টাকায় ৩৫০ থেকে ৪০০ কোটি টাকা।

দেশের প্রতিটি গ্রামে শহরের সুবিধা : জাতীয় পার্টির মুজিবুল হক চুন্নুর প্রশ্নের জবাব দিতে গিয়ে দেশের সব গ্রামকে শহরের সুযোগ-সুবিধা দিতে সরকারের গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, গ্রামীণ অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য এসেছে। কৃষিজ ও অকৃষিজ উভয় ক্ষেত্রে কর্মকা  বহুগুণ সম্প্রসারিত হয়েছে। ফলে গ্রামীণ পরিবারের আয় ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে অকৃষি খাতের অবদান বেড়ে চলেছে।

ঢাকা শহরের চতুর্দিকে বৃত্তাকার রেলপথ : সরকারি দলের দিদারুল আলমের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ঢাকা মহানগরে যানজট সমস্যা নিরসনের লক্ষ্যে গত ১০ বছরে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে বেশকিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে এবং অনেক প্রকল্প বাস্তবায়নাধীন রয়েছে। এ প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হলে খুব শিগগিরই ঢাকা মহানগরী যানজটমুক্ত করা হবে আশা করা যায়। আগামী দিনের পরিকল্পনার মধ্যে ঢাকা শহরের চতুর্দিকে বৃত্তাকার রেলপথ নির্মাণ প্রকল্পও রয়েছে।

সর্বশেষ খবর