বৃহস্পতিবার, ১৮ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

ওয়াসার পানি ফুটিয়ে খেতে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস অপচয়

নিজস্ব প্রতিবেদক

ওয়াসার পানি ফুটিয়ে খেতে ৩৩২ কোটি টাকার গ্যাস অপচয়

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি) বলেছে, ওয়াসার পানি পানযোগ্য নয়। তাই ফুটিয়ে পান-উপযোগী করতে হয়। গৃহস্থালি পর্যায়ে পানি ফুটিয়ে পান-উপযোগী করতে বছরে আনুমানিক ৩৩২ কোটি টাকা খরচ হয়। ওয়াসার সেবাগ্রহীতাদের ৬১ দশমিক ৯ শতাংশই বিভিন্নভাবে অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। গতকাল ধানমন্ডিতে এক সংবাদ সম্মেলনে ‘ঢাকা ওয়াসা : সুশাসনের চ্যালেঞ্জ ও উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক প্রতিবেদনে টিআইবি জানায়, তারা ওয়াসার ১১টি মড্্স’র জোনের মধ্যে ১০টিতে গবেষণা চালিয়ে এ তথ্য পায়। ২০১০ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত তথ্য নিয়ে গত বছরের এপ্রিল থেকে এ বছরের মার্চ পর্যন্ত তারা ২ হাজার ৭৬৮ সংযোগগ্রহীতার কাছ থেকে তথ্যও সংগ্রহ করে। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারপারসন অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল, নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, উপদেষ্টা-নির্বাহী ব্যবস্থাপনা অধ্যাপক ড. সুমাইয়া খায়ের, গবেষণা ও পলিসি বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান উপস্থিত ছিলেন। গবেষণা প্রতিবেদন প্রণয়ন ও উপস্থাপন করেন গবেষণা ও পলিসি বিভাগের প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শাহ্নুর রহমান এবং ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার মো. শহিদুল ইসলাম। প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়াসা সেবাগ্রহীতার ৩৪ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন পানির গুণগতমান সবসময়ই খারাপ থাকে। সেবাগ্রহীতার ৯৩ শতাংশ বিভিন্ন পদ্ধতিতে পানি পান-উপযোগী করেন। এর মধ্যে ৯১ শতাংশ ফুটিয়ে সিদ্ধ করে পান করেন। এ ছাড়া ওয়াসার পানি ব্যবহারের কারণে ২৪ দশমিক ৬ শতাংশ আক্রান্ত হচ্ছে। জরিপে অংশ নেওয়া ২০ দশমিক ৬ শতাংশ সেবাগ্রহীতা সারা বছর ও ৯৪ শতাংশ গ্রীষ্মকালে পানি ঘাটতিতে থাকেন। সেবাগ্রহীতার ৫১ দশমিক ৫ শতাংশ বলছেন, ওয়াসার পানি অপরিষ্কার এবং ৪১ দশমিক ৪ শতাংশ পানি দুর্গন্ধযুক্ত বলে অভিযোগ করেছেন। টিআইবি বলছে, ঢাকা ওয়াসার নিয়োগ, পদায়ন ও বদলি, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের প্রশিক্ষণসহ ক্রয় প্রক্রিয়া, প্রকল্প বাস্তবায়ন, মিটার রিডিং নেওয়া এবং সর্বোপরি গ্রাহকসেবায় ব্যাপক অনিয়ম ও দুর্নীতি রয়েছে। ২০১৭ সালের জুলাই থেকে ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনসংক্রান্ত সেবা বা সমস্যা নিয়ে ঢাকা ওয়াসার সঙ্গে যোগাযোগ করা জরিপে অংশগ্রহণকারী ২৬ দশমিক ৯ শতাংশ সেবাগ্রহীতার ৬১ দশমিক ৯ শতাংশই অনিয়ম, হয়রানি ও দুর্নীতির শিকার হয়েছেন। অভিযোগ গ্রহণ ও নিষ্পত্তিতে ওয়াসার হটলাইন ব্যবস্থা চালু থাকলেও অভিযোগকারীর ৬১ দশমিক ৫ শতাংশ বলেছেন, অভিযোগ করলেও এসবের কোনো সমাধান হয়নি।

টেকসই পানি উৎপাদনব্যবস্থায় না থাকায় গত ১০ বছরে ভূগর্ভস্থ পানি উত্তোলনে পাম্পের সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ৪৮২ থেকে ৯০০ হয়েছে। ২০২১ সালের মধ্যে ভূউপরিস্থ পানি ও ভূগর্ভস্থ পানির অনুপাত ৭০ঃ৩০ করার লক্ষ্য থাকলেও বর্তমানে তা ২২ঃ৭৮। এখনো ভূগর্ভস্থ পানির ওপর ৭৮ শতাংশ নির্ভরতা রয়েছে। চাহিদা অনুযায়ী পানি সরবরাহে ঘাটতি থাকায় সেবাগ্রহীতার ৪৪ দশমিক ৮ শতাংশ চাহিদা অনুযায়ী পানি পান না। সংবাদ সম্মেলনে টিআইবির পক্ষ থেকে স্থানীয় সরকার বিভাগ ও ঢাকা ওয়াসার জন্য ১৩ দফা সুপারিশ পেশ করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে- পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন সেবার মূল্য নির্ধারণে স্বতন্ত্র রেগুলেটরি কমিশন গঠন, নিরপেক্ষ ও প্রভাবমুক্ত ব্যক্তিদের সমন্বয়ে ওয়াসা বোর্ড গঠন, ভূগর্ভস্থ পানির ওপর চাপ কমাতে বৃষ্টির পানি ধারণ, সংরক্ষণ ও ব্যবহার নিশ্চিত করা, ওয়াসার কার্যক্রমে অনিয়ম ও দুর্নীতি রোধে ইতিবাচক ও নেতিবাচক প্রণোদনার ব্যবস্থা চালু, অসাধু কর্মচারীদের চিহ্নিত করে জবাবদিহির আওতায় আনা। অ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল বক্তব্যে বলেন, নানা সমস্যা চিহ্নিত করে তা সমাধানের জন্য যে সুপারিশগুলো করা হয়েছে তা কার্যকর করলে সমস্যা সমাধানের উপায় বের হয়ে আসবে। ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ওয়াসার কাছ থেকে প্রত্যাশিত সেবা পাওয়ার ক্ষেত্রে এখনো অনেক ঘাটতি বিদ্যমান। এর অন্যতম কারণ, ঢাকা ওয়াসার সুশাসনে ঘাটতি এবং সেবা প্রদান পর্যায়ে চলমান দুর্নীতি। সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন হলে সুশাসন ও শুদ্ধাচারের ক্ষেত্রে অনেক উন্নতি হবে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর