বৃহস্পতিবার, ২৫ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা

হাসিনা-মমতা এখনো আমার জন্য উপহার পাঠান : মোদি

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

হাসিনা-মমতা এখনো আমার জন্য উপহার পাঠান : মোদি

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি বলেছেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রতি বছর আমার জন্য দু-একটি কুর্তা পাঠান। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও আমাকে নতুন নতুন বাঙালি মিষ্টি পাঠান। আর হাসিনাজির দেখাদেখি এখন মমতাও আমাকে মিষ্টি পাঠান।’ নয়াদিল্লিতে লোককল্যাণ মার্গের ৭ নম্বর বাড়ির (ভারতীয় প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন) বারান্দায় বসে নরেন্দ্র মোদি আর বলিউড সুপারস্টার অক্ষয় কুমার কথা বলছিলেন। একপর্যায়ে অক্ষয়ের অনুরোধে বাড়িটির লনে হাঁটতে হাঁটতেও কথা হয় দুজনের মধ্যে। ‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক’ এ আলাপচারিতার ছোট ছোট কিছু ক্লিপিং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম টুইটারে ছেড়ে দেন অক্ষয়। টুইটের পাশাপাশি একটি ভিডিও পোস্ট করেন। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনী উত্তাপের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী যদি একটু হাসেন তাতে কি অবাক হওয়ার কিছু আছে!’ প্রধানমন্ত্রীকে অক্ষয় জিজ্ঞাসা করেন, বিরোধী দলের মধ্যে আপনার কোনো বন্ধু আছে? প্রশ্নের উত্তরে মোদি বলেন, ‘হ্যাঁ আছে, অনেক ভালো বন্ধু আছে। আমরা সবাই একসঙ্গে চা খাই, খাবার খাই। বাইরে সাধারণ মানুষ যা ভাবে, আদৌ তা নয়। সব দলের নেতার সঙ্গে একটা পরিবারের মতো আমরা একসঙ্গে থাকি যা একেবারেই কল্পনা করা যায় না।’ এ সময়ই মোদি বলেন, ‘আপনি শুনলে অবাক হবেন এবং ভোটের সময় এই কথা বলতে হয়তো নির্বাচনে আমার ক্ষতিও হতে পারে। কিন্তু তবু বলছি যে, প্রতি বছর মমতা দিদি আমার জন্য দু-একটি কুর্তা (পাঞ্জাবি) পছন্দ করেন এবং আমাকে উপহার হিসেবে দেন।’ অক্ষয়ের প্রশ্নে দিনে-রাতে মাত্র তিন-চার ঘণ্টা ঘুমানোর প্রসঙ্গেও মোদি টেনে এনেছেন বারাক ওবামার সঙ্গে তার বন্ধুত্বের প্রসঙ্গ। বলেছেন, ‘সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্টের সঙ্গে দেখা হলেই জিজ্ঞাসা করেন, এখন ঘুম বাড়িয়েছেন?’ তবে মমতা ছাড়াও কংগ্রেস নেতা গুলাম নবী আজাদসহ অনেক নেতার সঙ্গেই তার যে উষ্ণ সম্পর্ক রয়েছে সে কথাও জানান মোদি। মোদি বলেন, ‘হাসিনাজি প্রতি বছর তিন-চারবার ঢাকা থেকে নতুন মিষ্টি তৈরি হলেই তা আমাকে পাঠিয়ে দেন। আর মমতা দিদি যখন তা জানতে পারলেন তখন তিনিও আমাকে মিষ্টি পাঠাতে শুরু করলেন।’ লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক দলগুলো একে অন্যকে ঠেস দিয়ে অভিযোগ তুলছে।

 বিরোধী দল কংগ্রেস ও সিপিআইএম দীর্ঘদিন ধরেই বলছে, তলায় তলায় মোদি-মমতার আঁতাত আছে। অন্যদিকে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির পাল্টা অভিযোগ- বিজেপি, কংগ্রেস, সিপিআইএম একত্রিত হয়ে ‘জগাই-মাধাই-গদাই’ হয়েছে। নিশানা করতে ছাড়েননি প্রধানমন্ত্রী মোদিও। উল্টো তার অভিযোগ- তৃণমূল-কংগ্রেস-সিপিআইএম সবই একই মুদ্রার অন্য পিঠ। এমন এক পরিস্থিতিতে মমতাকে উদ্দেশ করে মোদির এই স্বীকারোক্তি ফের রাজনৈতিক মহলে জল্পনা ছড়িয়েছে। ভারতে মোট সাত পর্বের সপ্তদশ লোকসভা নির্বাচনের মধ্যে তিন পর্ব ইতিমধ্যে অতিবাহিত হয়েছে। বাকি রয়েছে আরও চার পর্ব। মোদি-মমতার এ সখ্যকে ঘিরে আগামী পর্বের নির্বাচনী প্রচারণা যে নতুন মাত্রা পাবে সে কথা বলাই যায়।

বিশেষজ্ঞদের অভিমত, মোদির এ মন্তব্য উসকে দিচ্ছে নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতির সমীকরণ। যদি বিজেপি নেতৃত্বাধীন এনডিএ নির্বাচনে সংখ্যাগরিষ্ঠতা না পায় সে ক্ষেত্রে মমতার সঙ্গ প্রয়োজন হয়ে পড়বে। তাই আগাম এ সখ্যের কথা মোদির মুখে। এটা ঠিক, অতীতে বিজেপির সঙ্গে মমতার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকলেও বা অটল বিহারি বাজপেয়ির শাসনকালে মমতা কেন্দ্রীয় মন্ত্রী থাকলেও তখনকার সঙ্গে বর্তমান পরিস্থিতি এক করে ফেলাটা ঠিক হবে না। সে সময় রাজ্যে বামদের উৎখাত করতে মমতা সবার সঙ্গেই হাত মেলাতেন। রাজনৈতিক রং বিচার করতেন না। কিন্তু এখন তিনি সরকারে, সংখ্যালঘুসহ বেশকিছু বিষয় মাথায় রেখে তবেই অগ্রসর হতে হবে মমতাকে।

এ বিষয়ে পশ্চিমবঙ্গের খাদ্যমন্ত্রী জ্যোতিপ্রিয় মল্লিককে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘এর মধ্যে রাজনীতির গন্ধ খুঁজে লাভ নেই।’ গতকাল উত্তর চব্বিশ পরগনার ব্যারাকপুরে একটি অনুষ্ঠানের ফাঁকে মন্ত্রী বলেন ‘আমাদের দিদি হলেন মানবতার দিদি। তিনি সততা, নিষ্ঠা, ত্যাগ-তিতিক্ষার প্রতীক। মমতা ব্যানার্জিকে তার চরম নিন্দুককেও বলতে হবে যে তিনি সৎ ও নিষ্ঠাবান নারী। আমরা কারও জন্মদিন হলে সবসময়ই বলি তিনি যেন সুস্থ ও ভালো থাকেন। চরম শত্রুরও মৃত্যু কামনা করা শোভন নয়।’ প্রধানমন্ত্রীকে অক্ষয় কুমারের প্রথম প্রশ্ন ছিল- আম পছন্দ করেন? উত্তরে আবেগাপ্লুত হয়ে মোদি জানান ছোটবেলায় তিনি কীভাবে আম খাওয়া উপভোগ করতেন। খাবার হজম করার জন্য সঙ্গে ট্যাবলেটও রাখতেন তিনি। বড় হয়ে প্রধানমন্ত্রী হবেন ভেবেছিলেন? অক্ষয়ের প্রশ্নের জবাবে মোদি জানান, তিনি কোনো দিনই প্রধানমন্ত্রীর আসনে বসার কথা ভাবেননি। সাধারণ মানুষ এটা ভাবতে পারে না। মোদি বলেন, ‘আমি যে পরিবার থেকে উঠে এসেছি সেখানে আমি যদি একটা ভালো চাকরি পেতাম তবে আমার মা পড়শিদের লাড্ডু খাওয়াতেন। প্রধানমন্ত্রীর এ পদটা আমার কাছে সত্যিই অস্বাভাবিক, কখনো কখনো আমি ভাবি দেশের মানুষ কেন আমায় এত ভালোবাসে। আমি যখন ছোট ছিলাম সেনাবাহিনীতে যোগ দেওয়ার কথা ভেবেছিলাম। আমি রামকৃষ্ণ মিশনে যোগ দিয়েছিলাম এবং সেখানে অনুপ্রাণিত হয়েছিলাম।’ অক্ষয় কুমার জানতে চান, কখনো কি মনে হয় না পরিবারের সঙ্গে, মা, ভাই-বোনের সঙ্গে থাকার কথা? মোদির জবাব, ‘আমি ছিলাম কার্যত পরিব্রাজক। আমি নিজেই নিজের প্রশ্নের উত্তর খুঁজে পেয়েছিলাম। যুবক বয়সেই আমি নিজের পথে চলেছি। তার থেকেই জন্ম হয়েছে একটা বিচ্ছিন্নতার। পরে যখন আমি মাকে বলেছি আমার সঙ্গে থাকতে, উনি গ্রামেই থাকতে চেয়েছেন। উল্টো দিকে আমি নিজেও মায়ের সঙ্গে বেশি সময় কাটানোর সুযোগ পাইনি।’

অক্ষয় বলেন, অর্থাৎ কার্যত সন্ন্যাস নিয়েছেন। কিন্তু তা বলে মানুষের সহজাত অনুভূতিগুলো-আবেগগুলোও গিয়েছে? কখনো কি রাগ হয় না, হলে কী করেন? মোদি বললেন, ‘আমি খুব সহজে রাগ করি না। যদিও এটা মানুষের চরিত্রের একটা বৈশিষ্ট্য। এটা এমন একটা আবেগ, যা নেগেটিভিটি ছড়ায়। যখন ক্যারিয়ার (রাজনৈতিক) শুরু করি, তখন থেকে কখনো রাগ প্রকাশ করিনি।’ আরও একটি গোপন কথা ফাঁস করেছেন মোদি। রাগ বা অন্য কোনো অনুভূতির আতিশয্য হলেই তা তিনি লিখে রাখেন। তারপর তা নিয়ে ভাবতে থাকেন। মোদি বলেন, ‘এটা আমার নিজের ভুল বুঝতে সাহায্য করে। তবে হ্যাঁ, ওটার পেছনে বেশি সময় দিই না। যে কোনো পরিস্থিতিতে এভাবেই প্রতিক্রিয়া দেওয়ার মতো আমি নিজেকে তৈরি করে ফেলেছি।’ আলাপকালে অক্ষয় কুমার তার নিজের রাগ হলে কী করেন তা মোদিকে জানিয়ে বলেন, ‘আমার বাড়িতে একটা বক্সিং ব্যাগ আছে। রাগ না কমা পর্যন্ত ওই ব্যাগে প্রচুর ঘুষি মারতে থাকি।’

সর্বশেষ খবর