মঙ্গলবার, ৭ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

বেড়েছে পাস কমেছে জিপিএ

এসএসসিতে পাস ৮২.২০ শতাংশ, সব দিক থেকে এগিয়ে মেয়েরা

আকতারুজ্জামান

বেড়েছে পাস কমেছে জিপিএ

ভিকারুননিসায় গতকাল শিক্ষার্থীদের উল্লাস -জয়ীতা রায়

এসএসসি ও সমমান পরীক্ষা-২০১৯-এর ফল গতকাল প্রকাশিত হয়েছে। আটটি সাধারণ, মাদ্রাসা ও কারিগরি- মোট ১০টি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে সারা দেশের ২১ লাখ ২৭ হাজার ৮১৫ জন শিক্ষার্থী অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৭ লাখ ৪৯ হাজার ১৬৫ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ২০ শতাংশ। গত বছর পাসের হার ছিল ৭৭ দশমিক ৭৭ শতাংশ। গত বছরের চেয়ে এ বছর পাসের হার বেড়েছে ৪ দশমিক ৪৩ শতাংশ। এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৫৯৪ জন ছাত্র-ছাত্রী। জিপিএ-৫-প্রাপ্তির হার ৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ। গত বছর জিপিএ-৫ পেয়েছিল ১ লাখ ১০ হাজার ৬২৯ জন। গত বছর জিপিএ-৫-প্রাপ্তির হার ছিল ৫ দশমিক ৪৬ শতাংশ। গত বছরের তুলনায় এ বছর জিপিএ-৫ কম পেয়েছে ৫ হাজার ৩৫ জন। সে হিসাবে এসএসসি ও সমমানে এ বছর পাসের হার বাড়লেও কমেছে জিপিএ-৫। রেওয়াজ অনুযায়ী প্রতি বছর ফল ঘোষণার দিন সকালে প্রধানমন্ত্রীর হাতে ফলাফলের সারসংক্ষেপ তুলে দেন বিভিন্ন শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা। কিন্তু এবার প্রধানমন্ত্রী দেশের বাইরে থাকায় বিভিন্ন বোর্ডের চেয়ারম্যানরা রাজধানীর সেগুনবাগিচায় আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে শিক্ষামন্ত্রীর হাতে ফলাফল তুলে দেন।

এরপর এসএসসি পরীক্ষার ফল প্রকাশ করেন শিক্ষামন্ত্রী ডা. দীপু মনি। এ সময় শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব সোহরাব হোসাইনসহ শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানরা উপস্থিত ছিলেন। লন্ডনে অবস্থানরত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মোবাইল ফোনে এসএসসি ও সমমানের ফলপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের অভিনন্দন জানান। যারা উত্তীর্ণ হতে পারেনি, তাদের ধৈর্য ধরে মনোযোগসহকারে পুনরায় প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান তিনি। আটটি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে ১৬ লাখ ৯৪ হাজার ৬৫২ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১৪ লাখ ৩ হাজার ১৫৭ জন। পাসের হার ৮২ দশমিক ৮০ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৪ হাজার ৫৫৬ জন। মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ডে ৩ লাখ ৬ হাজার ৭৮০ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ২ লাখ ৫৪ হাজার ৭১০ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ২৮৭ জন। কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ১ লাখ ২৬ হাজার ৩৮৩ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৭২ দশমিক ২৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৪ হাজার ৭৫১ জন। রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে গিয়ে দেখা গেছে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ শিক্ষার্থীদের বাঁধভাঙা উল্লাস। রাজধানীর শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজের মোট ১ হাজার ৭৭ জন পরীক্ষায় অংশ নিয়ে শতভাগ পাস করেছে। ৬১০ জন জিপিএ-৫ পেয়েছে। এর মধ্যে বিজ্ঞান বিভাগে ৫৫৬, ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে ৩৯ ও মানবিক বিভাগে ১৫ জন জিপিএ-৫ অর্জন করেছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটিতে গিয়ে দেখা যায়, উত্তীর্ণরা বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্র নিয়ে উৎসবের আবহ সৃষ্টি করেছে। প্রতিষ্ঠানের প্রধান অধ্যক্ষ ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা বলেন, শিক্ষার্থীদের চেষ্টা আর শিক্ষকদের সঠিক গাইডলাইনই এ সফলতার মূলমন্ত্র। ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে ১ হাজার ৮২৬ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ১ হাজার ৮২৩ জন। পাসের হার ৯৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ হাজার ৪৮২ জন। উত্তরার রাজউক মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজে এ বছর এসএসসিতে পাসের হার ৯৯ দশমিক ৬৫ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬৯৭ জন শিক্ষার্থী। মাইলস্টোন কলেজ থেকে বাংলা ও ইংরেজি মাধ্যমে ১ হাজার ৩৪১ শিক্ষার্থী এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে ১ হাজার ৩২৭ জন পাস করেছে। পাসের হার ৯৮ দশমিক ৯৬ শতাংশ। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৩০১ জন।

জিপিএ-৫-প্রাপ্তিতে এগিয়ে ঢাকা : জিপিএ-৫-প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও শিক্ষা বোর্ডগুলোর মধ্যে এগিয়ে রয়েছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। তবে শতাংশের হিসাবে এগিয়ে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। ঢাকা বোর্ডে এ বছর জিপিএ-৫ পেয়েছে ২৯ হাজার ৬৮৭ জন। রাজশাহী বোর্ডে পেয়েছে ২২ হাজার ৭৯৫ জন। তবে শতাংশের হিসাবে ঢাকা বোর্ডে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫ দশমিক ৪২ শতাংশ আর রাজশাহী বোর্ডে ১১ দশমিক ১৮ শতাংশ।

পাস ও জিপিএ-৫ দুই ক্ষেত্রেই এগিয়ে মেয়েরা : এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ছাত্রীদের চেয়ে বেশি ছাত্র অংশ নিলেও পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুই ক্ষেত্রেই এগিয়ে মেয়েরা। এবার ছাত্রীদের পাসের হার ৮৩ দশমিক ২৮ শতাংশ। অন্যদিকে ছাত্রদের পাসের হার ৮১ দশমিক ১৩ শতাংশ। অর্থাৎ ছাত্রদের তুলনায় ছাত্রীদের পাসের হার ২ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি। ছাত্রদের তুলনায় জিপিএ-৫ বেশি পেয়েছে ১ হাজার ৩৭৪ জন ছাত্রী।

বিদেশে পাসের হার ৯২ শতাংশ : বিদেশের আটটি কেন্দ্র থেকে ৪২৩ জন এসএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে পাস করেছে ৩৮৯ জন। পাসের হার ৯১ দশমিক ৯৬ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫৬ জন।

ফল বেড়েছে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় : এসএসসি ও সমমানে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা তিন ক্যাটাগরিতেই ফল বেড়েছে। বিজ্ঞানে এ বছর পাস করেছে ৯৪ দশমিক ৭২ শতাংশ। এ ছাড়া মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে যথাক্রমে ৭৪ দশমিক ৩২ ও ৮৩ দশমিক শূন্য ৩ শতাংশ পাস করেছে। গত বছর বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ছিল যথাক্রমে ৯৩ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, ৬৯ শতাংশ ও ৮০ দশমিক ৯১ শতাংশ।

শতভাগ পাস ২ হাজার ৫৮৩ স্কুলে : এবারের ফলাফলে শতভাগ পাস করা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ২ হাজার ৫৮৩টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৫৭৪টি। সে হিসাবে গত বছরের তুলনায় এ বছর শতভাগ পাস করা স্কুলের সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৯টি।

কেউ পাস করেনি ১০৭ স্কুলে : এসএসসি ও সমমানের এবারের ফলাফলে ১০৭টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কোনো ছাত্র-ছাত্রী পাস করতে পারেনি। গত বছর এমন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ছিল ১০৯টি। এ বছর শতভাগ ফেলের সংখ্যা কমেছে ২টি স্কুলের। যে কোনো মোবাইল অপারেটর থেকে এসএমএস করে ফল জানা যাবে। এজন্য SSC/DAKHIL লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে  2019 লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠাতে হবে। এ ছাড়া ফল প্রকাশের ওয়েবসাইট (www.educationboardresults.gov.bd) ও শিক্ষা বোর্ডগুলোর ওয়েবসাইট থেকেও ফল জানা যাবে।

পুনর্নিরীক্ষণ : আগামী ৭ থেকে ১৩ মে পর্যন্ত প্রকাশিত ফলের পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করা যাবে। এজন্য টেলিটক মোবাইল অপারেটর থেকে RSC লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে এসএমএস পাঠিয়ে পুনর্নিরীক্ষার আবেদন করা যাবে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর